চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে ঘাড়ে বঁটি দিয়ে দুটি কোপ দেন রিপন দাস। এরপর কিরিচ দিয়ে কোপান চন্দন দাস। অন্য আসামিরা বাটাম দিয়ে পেটান। আসামি চন্দন দাস এভাবে আইনজীবী হত্যার বর্ণনা দেন বলে জানিয়েছেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। গতকাল সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলামের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন এই আসামি।
নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি অঞ্চল) ও হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান আদালত প্রাঙ্গণে প্রথম আলোকে বলেন, গত শুক্রবার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হলে আসামি চন্দন দাসকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আইনজীবী হত্যার পুরো ঘটনার বর্ণনা দেন তিনি। পরে আদালতে হাজির করা হলে বিচারকের খাসকামরায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন চন্দন। অন্য আসামিদের মধ্যে ওম দাস ও রনবও কোপান আইনজীবীকে। হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া অন্য কয়েকজনকে চেনেন না বলে দাবি করেন চন্দন। জবানবন্দি শেষে আদালতের নির্দেশে আসামি চন্দনকে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
গত বুধবার রাতে কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে চন্দন দাসকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আইনজীবী সাইফুলের বাবার করা হত্যা মামলায় এক নম্বর আসামি চন্দন দাস একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী।
পুলিশ বলছে, আইনজীবী হত্যার ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, মাথায় ছাই রঙের হেলমেট, কমলা রঙের গেঞ্জি আর কালো প্যান্ট পরা ছিলেন চন্দন। হাতে ছিল কিরিচ। ঘটনার সময় রিপনের হাতে ছিল বঁটি। পরনে ছিল নীল রঙের গেঞ্জি, জিনস প্যান্ট ও মাথায় লাল হেলমেট। রিপন নগরের চকবাজার এলাকায় একটি ফার্মেসিতে চাকরি করতেন।
আদালত সূত্র জানায়, জবানবন্দিতে চন্দন দাস বলেন, গত ২৬ নভেম্বর কোতোয়ালির সেবক কলোনির রাস্তায় পড়ে থাকা সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা এক আইনজীবীকে লাঠি, বাটাম, ইট, কিরিচ, বঁটি দিয়ে তাঁরা মারধর করেন। চন্দনকে কিরিচ দিয়েছিলেন শুভ দাস। হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া ১০–১২ জনকে চেনেন চন্দন। অনেককে চেনেন না।
সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহফুজুর রহমান বলেন, কেন, কার নির্দেশে আইনজীবীকে হত্যা করা হয়েছে, আসামি চন্দন তা বলেননি। তবে হত্যাকাণ্ডে কারা কীভাবে অংশ নিয়েছেন, তার বিস্তারিত উঠে আসে। তদন্তে হত্যার কারণ বের করার চেষ্টা চলছে।
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নামঞ্জুর হওয়া নিয়ে ২৬ নভেম্বর আদালত প্রাঙ্গণে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় সাইফুলের বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন। এ ছাড়া পুলিশের ওপর হামলা, কাজে বাধাদান এবং আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও পাঁচটি মামলা হয়। ৬ মামলায় গ্রেপ্তার হন ৪০ জন। তাঁদের মধ্যে হত্যায় জড়িত অভিযোগে ১০ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। ২ ডিসেম্বর পুলিশের ওপর হামলা ও কাজে বাধাদানের মামলায় গ্রেপ্তার দুই আসামির জন্য ওকালতনামা দিলে আইনজীবীদের বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করেন অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি নেজাম উদ্দিন।