ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের সদস্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুজিত কুমার বালাকে ওয়াসার নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ওয়াসা বোর্ড চেয়ারম্যানের পদ থেকে বিদায় ঘটছে গোলাম মোস্তফার, যিনি পাঁচ দিন আগে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছিলেন।
স্থানীয় সরকার বিভাগের পানি সরবরাহ শাখা থেকে রোববার নতুন ওয়াসা চেয়ারম্যান নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। অবিলম্বে এই আদেশ কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে। নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সুজিত কুমার বালা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানের শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে পরিচিত।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ওয়াসার সাবেক চেয়ারম্যান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষক এম এ রশিদ সরকার করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে মারা যান। ওই বছরের অক্টোবরে বোর্ডের সদস্য গোলাম মোস্তফাকে চেয়ারম্যান নিয়োগ করে মন্ত্রণালয়। তাঁর মেয়াদ শেষ হয়েছে গত অক্টোবরে। আইন অনুযায়ী নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয়েছে।
ওয়াসা আইন অনুযায়ী, ওয়াসা চেয়ারম্যান তিন বছরের জন্য নিয়োগ পাবেন। যদি মৃত্যু, অপসারণ বা পদত্যাগের কারণে চেয়ারম্যানের পদ শূন্য হয়, তাহলে বিধিমোতাবেক তা পূরণ করা হবে। শূন্য পদে নিযুক্ত ব্যক্তি তাঁর পূর্বসূরির মেয়াদের বাকি সময় পর্যন্ত পদে বহাল থাকবেন। মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও পরবর্তী চেয়ারম্যান দায়িত্ব গ্রহণ না করা পর্যন্ত পদে বহাল থাকবেন।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহম্মদ ইবরাহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকা ওয়াসার বর্তমান চেয়ারম্যানের মেয়াদ গত বছর অক্টোবরে শেষ হয়। এত দিন আমরা নতুন কাউকে দায়িত্ব দিতে পারিনি। তবে প্রক্রিয়া চলছিল। ঢাকা ওয়াসার নতুন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক সুজিত কুমার বালাকে। তিনি এখন ওয়াসার সদস্য পদে আছেন।’
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানের সঙ্গে ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যানের দ্বন্দ্বের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ঢাকা ওয়াসার একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ওয়াসা প্রশাসনের কিছু বিষয়ে বোর্ড হস্তক্ষেপ করায় এমডি তাকসিম ক্ষুব্ধ ছিলেন। বোর্ড চেয়ারম্যানকে চাপে রাখতে তাঁর বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগও দেওয়া হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ মে এমডির বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দেন বোর্ডের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা। তিনি অভিযোগে বলেন, তাকসিম এ খান ওয়াসাকে অনিয়ম, অপচয় ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন। তাকসিম এ খান ওয়াসাকে ব্যক্তিগত সম্পদের মতো ‘স্বৈরাচারী’ কায়দায় পরিচালনা করেন। তাকসিম ওয়াসা বোর্ডকে দীর্ঘদিন ধরে অবমাননা করলেও বর্তমানে তা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।
চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাকসিম এ খান যেভাবে চায়, সেভাবে ওয়াসা চলবে। মন্ত্রণালয় নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়ে সেটাই বুঝিয়েছে। আমার করা অভিযোগের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা আমার জানা নেই।’
ওয়াসার একাধিক কর্মকর্তা মনে করছেন, এমডি তাকসিম এ খানের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়ার কারণেই চেয়ারম্যানকে দ্রুত সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমডির বিরুদ্ধে চেয়ারম্যানের তোলা অভিযোগগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা না নেওয়ায় মন্ত্রণালয়ের অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন উঠবে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহম্মদ ইবরাহিম বলেন, এই প্রশ্ন উঠতে পারে। তবে এটি কাকতালীয়। নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগের প্রক্রিয়া অনেক দিন ধরেই চলছিল।
এমডির বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়ে সচিব বলেন, ‘ওয়াসার নতুন বোর্ডের সদস্যরা অভিযোগের বিষয়টি দেখবেন। কারণ, তাঁরা সবকিছু জানেন। তাঁরা প্রতিবেদন পাঠাবেন আমাদের কাছে। তবে তাঁরা যদি বলেন পারবেন না, তখন আমরা অভিযোগের বিষয়ে উদ্যোগ নেব।’
নতুন নিয়োগ পাওয়া চেয়ারম্যান সুজিত কুমার বালা এমডির আস্থাভাজন ও শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে পরিচিত। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের ২৭৬তম সভায় এমডির বেতন-ভাতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়। ওই সভায় ওয়াসা বোর্ডের একাধিক সদস্য এমডির বেতন বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তবে এমডির বেতন বাড়ানোর পক্ষে বলেছিলেন অধ্যাপক সুজিত কুমার বালা।