প্রাক্-প্রাথমিক ও প্রাথমিকের যেসব শিক্ষার্থীর জন্মনিবন্ধন নেই, তাদের তালিকা করতে সারা দেশের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) চিঠি দিয়েছে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়। এসব শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তির আওতায় আনতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে গত ২৫ অক্টোবর রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় ওই চিঠি দিয়েছে।
সরকারের উপবৃত্তি পাওয়ার জন্য জন্মনিবন্ধন সনদ থাকা বাধ্যতামূলক। তবে অনেক শিক্ষার্থীর তা নেই। ফলে তারা উপবৃত্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুসারে, সারা দেশে ৭ থেকে ৮ লাখ শিক্ষার্থী জন্মনিবন্ধনের বাইরে রয়ে গেছে। তবে মন্ত্রণালয়ের কোনো কোনো কর্মকর্তার মতে, সংখ্যাটি আরও অনেক কম হবে।
সরকারের উপবৃত্তি পাওয়ার জন্য জন্মনিবন্ধন সনদ থাকা বাধ্যতামূলক। তবে অনেক শিক্ষার্থীর তা নেই। ফলে তারা উপবৃত্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুসারে, সারা দেশে ৭ থেকে ৮ লাখ শিক্ষার্থী জন্মনিবন্ধনের বাইরে রয়ে গেছে। তবে মন্ত্রণালয়ের কোনো কোনো কর্মকর্তার মতে, সংখ্যাটি আরও অনেক কম হবে।
রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. রাশেদুল হাসানের সই করা চিঠিতে বলা হয়েছে, অনেক শিক্ষার্থীর জন্মসনদ না থাকায় তারা সরকারের সামাজিক কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত সবচেয়ে বড় কর্মসূচি ‘প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি’ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ খাতে বরাদ্দ করা টাকার বড় একটি অংশ অব্যয়িত থেকে যাচ্ছে। এর ফলে সরকারের সামাজিক সুরক্ষার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, মেধাবী শিক্ষার্থীরা যেন অর্থের অভাবে প্রাথমিকেই ঝরে না পড়ে এবং বিদ্যালয়ের উপস্থিতিতে নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে, সে জন্য সব অনিবন্ধিত শিক্ষার্থীকে নিবন্ধনের আওতায় আনার জন্য রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়কে অনুরোধ করেছে মন্ত্রণালয়।
অনেক শিক্ষার্থীর জন্মনিবন্ধন সনদ না থাকায় তারা উপবৃত্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ওই শিশুদের জন্মনিবন্ধন করার অনুরোধ জানিয়েছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই জন্মসনদ নেই-এমন শিক্ষার্থীদের তালিকা করে তাদের জন্মনিবন্ধন করার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।মো. রাশেদুল হাসান, রেজিস্ট্রার জেনারেল
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপবৃত্তি বিভাগের পরিচালক মহিউদ্দীন আহমেদ তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, উপবৃত্তি থেকে কোনো শিক্ষার্থী যেন বাদ না যায়, সে লক্ষ্যে সব শিক্ষার্থীর জন্মনিবন্ধন করার ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে।
উপবৃত্তির জন্য শিক্ষার্থীদের তালিকা তৈরির উপায় তুলে ধরে চিঠিতে বলা হয়েছে, এ ক্ষেত্রে ইউএনওরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। তাঁরা তাঁদের কাজের আওতাভুক্ত এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে সভা করতে পারেন।ওইসব সভায় প্রধান শিক্ষকদের কাছ থেকে তাঁদের বিদ্যালয়ের অনিবন্ধিত শিক্ষার্থীদের তালিকা নিতে পারেন। পরে ওই তালিকা উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাকে দিয়ে যাচাই করাতে পারেন। ইউএনওরা ইউনিয়ন বা পৌরসভার জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধকের কাছে তালিকা পাঠিয়ে শিশুশিক্ষার্থীদের জন্মনিবন্ধন করানোর ব্যবস্থা নিতে পারেন।
রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. রাশেদুল হাসান তাঁর কার্যালয়ে প্রথম আলোকে বলেন, অনেক শিক্ষার্থীর জন্মনিবন্ধন সনদ না থাকায় তারা উপবৃত্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ওই শিশুদের জন্মনিবন্ধন করার অনুরোধ জানিয়েছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই জন্মসনদ নেই—এমন শিক্ষার্থীদের তালিকা করে তাদের জন্মনিবন্ধন করার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, অনেক শিক্ষার্থীর জন্মসনদ না থাকায় তারা সরকারের সামাজিক কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত সবচেয়ে বড় কর্মসূচি ‘প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি’ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ খাতে বরাদ্দ করা টাকার বড় একটি অংশ অব্যয়িত থেকে যাচ্ছে। এর ফলে সরকারের সামাজিক সুরক্ষার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের করা ২০২২ সালের বার্ষিক প্রাথমিক বিদ্যালয় শুমারি (এপিএসসি) অনুসারে, ২০২২ সালে সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট শিক্ষার্থী ২ কোটি ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৯১। ২০২২-২৩ অর্থবছরে উপবৃত্তি খাতে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৬৯৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকার বেশি। যদিও বছরে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ৬৫ হাজার ৫৬৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তি পাচ্ছে। উপবৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক কোটি ৪০ লাখ। এর মধ্যে প্রাক্-প্রাথমিকের প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে মাসে ৭৫ টাকা করে, প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়ারা ১৫০ টাকা করে উপবৃত্তি পাচ্ছে। এ ছাড়া যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়, এমন বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছয় শতাধিক। এসব বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা মাসে ২০০ টাকা করে উপবৃত্তি পায়। শিক্ষার্থীদের মায়েদের মুঠোফোন নম্বরে উপবৃত্তির টাকা দেওয়া হয়। মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদান প্রতিষ্ঠান নগদের মাধ্যমে এ টাকা দেওয়া হয়।
গ্রামের কয়েকটি স্কুলের শিক্ষকেরা জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে জন্মসনদ থাকা বাধ্যতামূলক হলেও গ্রামে অনেক সময় শিশুদের এমনিতেই ভর্তি করিয়ে নেওয়া হয়। নিবন্ধনের জন্য টিকা কার্ড লাগে। অনেক সময় শিশুর টিকা কার্ড থাকে না, হারিয়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মনিবন্ধনের জন্য মা–বাবার জন্মসনদ লাগে। জন্মসনদের জন্য ২৫ থেকে ৫০ টাকা নিবন্ধন ফি নির্ধারিত থাকলেও অভিভাবকদের ৫০০ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে হয়। এসব বিবেচনায় জন্মনিবন্ধন ছাড়াই অনেক শিশুকে ভর্তি নেওয়া হয়।
এদিকে রোহিঙ্গা শিশুদের জন্মনিবন্ধন রোধে কক্সবাজারের উখিয়া, টেকনাফ ও মহেশখালী উপজেলায় জন্মনিবন্ধনের হার অনেক কম বলে জানা গেছে।
রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয় থেকে চিঠি পাওয়ার কথা জানিয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এ এলাকায় শিক্ষার হার কম। জন্মনিবন্ধনের হারও তুলনামূলক কম। অনেক পরিবার শিশুদের বিদ্যালয়ে না পাঠিয়ে কাজে পাঠান। এ ছাড়া আগে প্রাক্–প্রাথমিকে কিছু শিশু জন্মসনদ ছাড়াই আগে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে কারও জন্মনিবন্ধন পরে হয়েছে, কারও হয়নি। উপবৃত্তি নিশ্চিত করতে জন্মসনদ নেই—এমন শিশুদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে।