মোটরসাইকেলচালকদের ৮৭ ভাগেরই হেলমেট সঠিক নয়

গুলশানে ঢাকা উত্তর সিটির নগর ভবনে আয়োজিত কর্মশালায় অতিথি ও অংশগ্রহণকারীরা
ছবি: সংগৃহীত

মোটরসাইকেলচালকদের শতকরা ৯৫ জন হেলমেট পরিধান করলেও ৮৭ জনেরই হেলমেট সঠিক নয়। অন্যদিকে শতকরা ৮৩ জন মোটরসাইকেল আরোহী হেলমেট পরলেও ৫৩ জনের সঠিক হেলমেট থাকে না। আর সামগ্রিকভাবে হেলমেট ব্যবহার করেন শতকরা ৯২ জন।  

এসব মোটরসাইকেলচালক ও আরোহী ক্যাপ বা টুপির মতো হেলমেট ব্যবহার করেন। সঠিক হেলমেট বলতে পুরো মুখ (ফুল ফেস) বা অর্ধেক মুখ (হাফ ফেস) ঢাকা থাকে, এমন হেলমেটকে বোঝায়।

ঢাকা উত্তর সিটিতে সড়ক নিরাপত্তার অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নে পরিচালিত ‘রোড সাইড অবজারভেশনাল স্টাডি’ নামের এক গবেষণায় এ ফলাফল পাওয়া গেছে। সোমবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নগর ভবন মিলনায়তনে আয়োজিত এক কর্মশালায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

জনস হপকিনস ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিটের রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট শিরিন ওয়াধানিয়া ও সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশের (সিআইপিআরবি) পরিচালক (আরটিআই প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ ইউনিট) সেলিম মাহমুদ চৌধুরী গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন।

ঢাকা উত্তর সিটিতে ২০২১ সালের আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত তিনটি পর্যায়ে করা ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৮৭২টি পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে এ গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

গবেষণায় বিভিন্ন যানবাহনে সিটবেল্ট ব্যবহারের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, দুর্ঘটনায় আঘাতের তীব্রতা কমাতে সিটবেল্ট এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সিটবেল্ট বাধা থাকলে যেকোনো দুর্ঘটনায় চালক ও যাত্রীর অন্তত ৫০ ভাগ মৃত্যুহার কম হয়।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিশ্চিত করতে এবং সড়ক দুর্ঘটনাকে সহনীয় মাত্রায় রাখতে ‘ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস’ ঢাকা উত্তর সিটিসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ও শহরে কাজ করছে। ‘ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটি: ২০২০-২০২৫’–এর অংশ হিসেবে জনস হপকিনস ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিট ও তাদের স্থানীয় অংশীদার ‘সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশ’ যৌথভাবে এ গবেষণা করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মোটরসাইকেলে সঠিকভাবে হেলমেট ব্যবহার করলে দুর্ঘটনায় শতকরা ৪২ ভাগ মৃত্যুঝুঁকি কমে। আর মাথায় গুরুতর আঘাতের ঝুঁকি কমে ৬৯ ভাগ।

নারী ও শিশুদের মধ্যে সঠিক হেলমেটের ব্যবহার খুবই কম উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, শতকরা ৭৫ ভাগ নারী ও ৫৪ ভাগ শিশু আরোহীর মাথায় হেলমেট থাকলেও ৩২ ভাগ নারী ও ২৯ ভাগ শিশুর ক্যাপ–জাতীয় হেলমেট থাকে।

গবেষণায় বিভিন্ন যানবাহনে সিটবেল্ট ব্যবহারের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, দুর্ঘটনায় আঘাতের তীব্রতা কমাতে সিটবেল্ট এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সিটবেল্ট বাঁধা থাকলে যেকোনো দুর্ঘটনায় চালক ও যাত্রীর অন্তত ৫০ ভাগ মৃত্যুহার কম হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তিগত গাড়িতে (প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, মিনিবাস) শতকরা ৮৫ ভাগ সিটবেল্ট ব্যবহার করা হয়। তবে গণপরিবহনে (বাস) চালকদের এটি ব্যবহারের প্রবণতা মাত্র ৪ শতাংশ। এ ছাড়া ব্যক্তিগত গাড়ির শিশু যাত্রীদের ক্ষেত্রে কাউকেই নিরাপদ কিংবা শিশু সুরক্ষিত আসন ব্যবহার করতে দেখা যায় না।

গবেষণার তথ্য সংগ্রহে ঢাকা উত্তর সিটির পাঁচটি ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা বেছে নেওয়া হয়েছিল। এলাকাগুলো হচ্ছে শ্যামলী, জাতীয় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউটের সামনে, মোহাম্মদপুর হুমায়ুন রোড, আসাদ অ্যাভিনিউ, গজনবী সড়ক, বছিলা সড়ক, তেজগাঁও নাবিস্কো মোড়, বিজয় সরণি, গুলশান লিংক রোড, মাদানি অ্যাভিনিউ, শাহজাদপুর, সাঁতারকুল, মৌচাক ও মগবাজার।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রকাশিত ‘গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অন রোড সেফটি ২০১৮’ অনুযায়ী প্রতিবছর সারা বিশ্বে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ মানুষ মারা যায়। এ ছাড়া ২০ থেকে ৫০ লাখ মানুষ আহত হয় বা পঙ্গুত্ববরণ করে।

কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, ঢাকা উত্তর সিটিতেও সড়ক দুর্ঘটনায় বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে। তবে উত্তর সিটিতে ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেল, মেকানিক্যাল সার্কেল ও সিভিল সার্কেল নামে প্রকৌশল বিভাগের তিনটি সার্কেল করে সড়ক নিরাপত্তা কার্যক্রম বাস্তবায়নে কাজ করছে।

কর্মশালায় সরকারি বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জনস হপকিনস ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিট, ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস, জিএইচএআই, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ডব্লিউআরআইয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।