একটি দেশের আইনের শাসনের পরিস্থিতি বোঝা যায় দেশটির ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা দেখে। কিন্তু সড়ককে নিরাপদ করতে যে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা দরকার, সেটা দেশে নেই। নিরাপদ সড়কের জন্য প্রয়োজন নিরাপদ রাষ্ট্র ও নিরাপদ শাসক।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আন্দোলনের ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক সভায় আলোচকদের কথায় উঠে এল এসব বিষয়। আজ মঙ্গলবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘ছাত্র–জনতার অঙ্গীকার, নিরাপদ সড়ক হোক সবার’ শীর্ষক এ সভার আয়োজন করা হয়।
নিসচার প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন ৩১ বছরের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে বলেন, সড়ককে নিরাপদ করার বিষয়টি সরকার ও রাজনীতিকদের ওপর নির্ভর করে। সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে বহুবার তিনি ক্ষমতাসীন সরকার ও বিরোধী দলের কাছে গেছেন। কিন্তু তাঁকে কোনো না কোনো দলের হিসেবে ট্যাগ দেওয়া হয়েছে।
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, বিভিন্ন দেশে জাতীয় ইস্যুতে সব রাজনীতিক এক হন। কিন্তু বাংলাদেশে তা হয় না। বর্তমান উপদেষ্টাও সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না অভিযোগ করে তিনি বিষয়টিকে জাতীয় ইস্যু হিসেবে বিবেচনা করার আহ্বান জানান। রাজনীতিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সড়ককে নিরাপদ করতে শুধু কথা নয়, তা বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম বলেন, ইলিয়াস কাঞ্চন একক উদ্যোগে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। সেভাবে তাঁর পাশে থাকতে পারেননি উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিরাপদ সড়ক গড়তে যে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা দরকার, সেটা হয়নি। বরং যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের নিয়ে মন্ত্রীরা বিদ্রূপ করেছেন।
এখন কেউ সড়কে সিন্ডিকেট গড়ে তুললে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান আবদুস সালাম। তিনি বলেন, যারা বিএনপির নাম ব্যবহার করে এসব করছে, তারা দলকে খাটো করতে চাইছে। বর্তমান সরকারের উচিত সব সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া।
সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলো চিহ্নিত করে তা নিয়ে কাজ করার মতো প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা এখনো গড়ে ওঠেনি বলে মনে করছেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি থাকায় এসব নিয়ে প্রতিকারও পাওয়া যায় না। একটি দেশে আইনের শাসন আছে কি না, তা বোঝা যায় সে দেশের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা দেখে। সড়কের অনিয়মগুলো রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় হয়ে আসছে বলে অভিযোগ করেন নুরুল হক।
জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম বলেন, নিরাপদ সড়কের জন্য নিরাপদ রাষ্ট্র ও নিরাপদ শাসক প্রয়োজন। পাশাপাশি মানুষের মধ্যে এ বিষয়ে মূল্যবোধ গড়ে তুলতে হবে।
সড়কে গণহত্যা বন্ধে এখনই উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন–বিএফইউজে মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী। ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা যখন রাস্তায় নেমেছিল, তখন আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রীয় দমনের পাশাপাশি দলের নেতা–কর্মী দিয়েও শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করিয়েছে।
সভায় আরও বক্তব্য দেন সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহীদুল ইসলাম, নিরাপদ সড়ক চাই–এর মহাসচিব এস এম আজাদ হোসেন প্রমুখ।