আলোচনা সভা

পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু নীরব মহামারি, সাঁতার শেখানো জরুরি

বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ উপলক্ষে বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে অংশীজনদের নিয়ে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি)
 ছবি: সংগৃহীত

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতিদিন ৪০ শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু দুনিয়াজুড়ে একটি নীরব মহামারি। এর থেকে রক্ষায় শিশুদের সাঁতার শেখানো জরুরি।

‘বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ’ উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে অংশীজনদের নিয়ে সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

সভায় শিশুদের সঠিক বয়সে সাঁতার শেখা, কেউ ডুবে গেলে তাকে উদ্ধারকৌশল, তৃণমূল মানুষকে পানিতে ডুবে মৃত্যু থেকে বাঁচাতে ও শিশুদের সাঁতার শেখানোতে উদ্যোগ গ্রহণ, প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানের প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

আলোচকেরা বলেন, পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু দুনিয়াজুড়ে একটি নীরব মহামারি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ মৃত্যুকে নিছক দুর্ঘটনা হিসেবে গণনা করা হয়। ফলে জাতীয় মৃত্যু নথিতে এই বিশালসংখ্যক মৃত্যু দৃষ্টিগোচর হয় না।

আলোচকেরা আরও বলেন, মৃত্যু নথিতে পানিতে ডুবে মৃত্যুকে মৃত্যুর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা জরুরি। এ জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে উদ্যোগী হতে হবে। একই সঙ্গে পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধের যে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি রয়েছে, তা তৃণমূল পর্যায়ে বাস্তবায়নে জোর দিতে হবে।

অনুষ্ঠানে সিআইপিআরবির উপনির্বাহী পরিচালক আমিনুর রহমান বলেন, মাত্র এক হাজার টাকা খরচ করেই প্রতিটি শিশুকে সাঁতার শেখানো ও উদ্ধারপদ্ধতি শেখানো সম্ভব। আর পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর অন্যতম সময় সকাল নয়টা থেকে বেলা একটা। এ সময় যদি পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের এলাকাভিত্তিক শিশুযত্ন কেন্দ্রে রাখা যায়, তাহলেও ডুবে মৃত্যু রোধ করা যায়।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান লাকী ইনাম বলেন, এখন সময় এসেছে সাঁতার শেখানোকে সপ্তম টিকা হিসেবে দাবি করার এবং প্রতিষ্ঠা করার। সাঁতারই পারে একটি শিশুকে অকালমৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে।

লাকী ইনাম জানান, শিশু একাডেমির অধীন সরকার এরই মধ্যে ‘সমাজভিত্তিক সমন্বিত শিশুযত্ন কেন্দ্রের মাধ্যমে শিশুদের সমন্বিত বিকাশ ও সুরক্ষা এবং শিশুর সাঁতারসুবিধা প্রদান প্রকল্প’ নামের তিন বছর মেয়াদি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। প্রকল্পটি শেষ হবে ২০২৩ সালে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১৬টি জেলার ৪৫টি উপজেলায় প্রায় সাড়ে তিন লাখ শিশুকে সাঁতার শেখানো হবে। এটি শিশুদের নিরাপত্তার জন্য খুবই কার্যকর হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সভাপতির বক্তব্যে শিশু একাডেমির মহাপরিচালক মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিটি শিশু সম্ভাবনাময়। তাদের শিশুকাল সুরক্ষিত করতে পারলে তারা সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে। আর এ জন্য সব ব্যবস্থা আমাদের গ্রহণ করতে হবে।’