জাতিসংঘের আসন্ন কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলনে জীবাশ্ম জ্বালানি লবির (তদবিরকারী গোষ্ঠী) ক্রমবর্ধমান আধিপত্য প্রতিরোধের দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলেছে, স্বার্থের দ্বন্দ্বের ঊর্ধ্বে উঠে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের চাহিদার ভিত্তিতে একটি বাস্তবসম্মত জলবায়ু অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে।
সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব দাবি বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়। তাতে বলা হয়েছে, কপ সম্মেলনে জলবায়ু অর্থায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতিসহ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতসহ প্যারিস চুক্তির বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের বিবেচনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ৯ দফা সুপারিশসংবলিত ‘পলিসি ব্রিফ’ হস্তান্তর করেছে টিআইবি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজারবাইজানের বাকুতে অনুষ্ঠেয় কপ সম্মেলনে জলবায়ু অর্থায়ন এবং সম্মেলনের এজেন্ডাভুক্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় সুশাসনের বেশ কিছু ঘাটতি লক্ষ করেছে টিআইবি। জলবায়ু অর্থায়নের নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় শুদ্ধাচার ও প্রতিশ্রুত জলবায়ু তহবিল সরবরাহে ঘাটতি, জলবায়ু তহবিলের অপর্যাপ্ততা এবং ক্ষতিগ্রস্ত দেশে অভিযোজনে কম অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সময়ের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন, ক্ষয়ক্ষতি তহবিলে অনুদানভিত্তিক বরাদ্দ, এনডিসি বাস্তবায়ন এবং জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সম্পদ সুরক্ষায় ঘাটতি দেখেছে টিআইবি।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সম্মেলনে জীবাশ্ম জ্বালানি লবির আধিপত্য ক্রমেই বাড়ছে। তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করছে। জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত প্যানেলের (ইউএনএফসিসিসি) প্রতিবেদনে পছন্দসই পরিবর্তনে জন্য চাপ দিচ্ছে। পরিবেশবান্ধব জ্বালানি প্রসারে অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে প্রশ্ন তুলছে।’
ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, প্যারিস চুক্তিতে প্রতিশ্রুতি দেওয়া জলবায়ু তহবিল প্রদান বাধ্যতামূলক না করে ঐচ্ছিক রাখা হয়েছে। ‘নতুন’ ও ‘অতিরিক্ত’ সহায়তাকে উন্নত দেশগুলো শর্তযুক্ত ঋণ আকারে দিচ্ছে। ২০২৪ সাল পর্যন্ত দেওয়া মোট অর্থ, যা জলবায়ু অর্থায়ন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, তার ৭০ শতাংশই ঋণ। ফলে উন্নয়নশীল দেশের জন্য প্রয়োজনীয় জলবায়ু অর্থায়ন প্রাপ্তি একদিকে যেমন ক্রমেই কঠিন ও অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে, অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের জনগণের ওপর নতুন ঋণের বোঝা তৈরি করছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ২০২৪ সাল থেকে প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার সরবরাহ করা হলেও তা কার্যত চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত। সার্বিকভাবে, জলবায়ু তহবিল দেওয়ায় বহুমুখী সুশাসনের ঘাটতি লক্ষ করা যাচ্ছে। কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলনে জীবাশ্ম জ্বালানি লবির ক্রমবর্ধমান আধিপত্য প্রতিরোধ করতে হবে। পাশাপাশি স্বার্থের দ্বন্দ্বের ঊর্ধ্বে উঠে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের চাহিদার ভিত্তিতে একটি বাস্তবসম্মত জলবায়ু অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে।