আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতিকে সরকার খুব গুরুত্ব দিচ্ছে না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেছেন, তাঁরা যদি নির্বাচন পর্যবেক্ষণে না-ও আসেন, সেটি দেশের ক্ষতির কারণ হবে না। বিদেশি পর্যবেক্ষক না এলে বাংলাদেশ পরোয়া করে না।
আজ শনিবার সকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক অনুষ্ঠানে প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি এদিন ডিপ্লোমেটিক করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিকাব) আয়োজিত ডিকাব টকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দুনিয়ার বড় বড় দেশে নির্বাচন দেখার জন্য কোনো পর্যবেক্ষক যান না। আমাদের দেশে পর্যবেক্ষক এলো কি এলো না, এতে কিছু যায় আসে?’
বিদেশি পর্যবেক্ষক যদি আসতে চান, তাহলে আপত্তি নেই জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনে পর্যবেক্ষক এলে ভালো, কিন্তু না এলে আমরা পরোয়া করি না।’ আব্দুল মোমেন বলেন, দেশে একটি সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে বিদেশিদের এনে এনে নির্বাচন দেখানোর। তাঁর মতে, এটা ভবিষ্যতে বন্ধ করা দরকার।
কারও নাম উল্লেখ না করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল দেশের ‘নির্বাচনী প্রক্রিয়ায়’ বাধা সৃষ্টি করছে। কেউ কেউ নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে বলেও তাঁরা আভাস পেয়েছেন।
দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে টেকসই করার দায়িত্ব গণমাধ্যমের রয়েছে মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব বিষয়ে সাংবাদিকদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে টেকসই করতে হবে। দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, শান্তি ও স্থিতিশীলতা ব্যাহত হলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় নিযুক্ত কূটনীতিকদের কাছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ের সমাধান চাওয়ার নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আপনারা (মিডিয়া) এ ব্যাপারে তাদের সহায়ক ভূমিকা পালন করবেন না।’
এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার বিদেশিদের দ্বারা নির্বাচনী আলোচনা নিয়ে কোনো চাপ অনুভব করছে না। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ ধরনের সংলাপ অতীতে কোনো ফল দিয়েছে কি না, তা তিনি জানেন না।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপকে ‘অকার্যকর আলোচনা’ আখ্যা দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোতে এ ধরনের সংলাপ হয় না বা সরকারপ্রধানদের পদত্যাগও করতে হয় না। আব্দুল মোমেন বলেন, সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচন হবে এবং আওয়ামী লীগ সরকার কোনো সন্ত্রাসীর সঙ্গে কথা বলবে না।
বাংলাদেশ কোনো দেশের লেজুড় নয় এবং চীনের দিকে কখনো ঝুঁকেও পড়েনি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ঢাকা একটি “ভারসাম্যপূর্ণ ও স্বাধীন” পররাষ্ট্রনীতি বজায় রেখে চলে। কিছু লোক মনে করেন, আমরা চীনের দিকে ঝুঁকছি, কিন্তু আমরা কারও দিকে ঝুঁকছি না। আমরা কারও লেজুড় নই। আমরা চীনেরও লেজুড় নই।’
বেইজিংকে উন্নয়ন অংশীদার বলে অভিহিত করে এবং ‘চীনা ঋণের ফাঁদে’ পড়ার কোনো ধরনের আশঙ্কা নাকচ করে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘এটি একটি ভুল ধারণা।
কোনো কোনো পণ্ডিত এমন কথা বলেন। অনেকে এটা বিশ্বাস করেন, বিশেষ করে কিছু বিদেশি প্রতিষ্ঠান। কোনো অবস্থাতেই আমরা “চীনা ঋণের ফাঁদে” পড়ব না ।
বিদেশি ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা খুবই বিচক্ষণ ও সতর্ক। আমরা অপ্রয়োজনীয় ঋণ নিই না।’
ডিকাব সভাপতি রেজাউল করিম লোটাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ইমরুল কায়েস।