এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ পর্যায়ে। মার্চেই এটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। চট্টগ্রামের সল্টঘোলা এলাকায়
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ পর্যায়ে। মার্চেই এটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। চট্টগ্রামের সল্টঘোলা এলাকায়

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে কোন গাড়িতে কত টোল নিতে চায় সিডিএ

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে খরচ হচ্ছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। সেখানে চট্টগ্রামের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ ব্যয় ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ অর্ধেকেরও কম। আবার দৈর্ঘ্যও অর্ধেক। তবে নির্মাণ ব্যয় ও দূরত্ব অর্ধেক হলেও তুলনামূলকভাবে বেশি টোল আদায় করতে চায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।

ইতিমধ্যে টোলের হারও প্রস্তাব করেছে সংস্থাটি। প্রস্তাবিত টোলের হার সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪৫০ টাকা। তা অনুমোদনের জন্য গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অবশ্য এখন পর্যন্ত তা অনুমোদন দেওয়া হয়নি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ১৪ নভেম্বর চট্টগ্রামের ‘মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী সিডিএ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের’ উদ্বোধন করেন। উদ্বোধন হলেও নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো গাড়ি চলাচল শুরু হয়নি। নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার পর মার্চের শেষে বা এপ্রিলের শুরুতে গাড়ি চলাচলের জন্য এক্সপ্রেসওয়ে উন্মুক্ত করে দেওয়া হতে পারে।

প্রস্তাবিত টোলের হার অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস। তিনি গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে জানান, প্রস্তাবিত টোলের হার এখনো চূড়ান্ত হয়নি। চূড়ান্ত হলে গেজেট আকারে তা প্রকাশ করা হবে।

এক্সপ্রেসওয়েতে টোলের হার বেশি রাখা হলে তা ব্যবহারে মানুষ নিরুৎসাহিত হতে পারেন বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। টোলের হার সহনীয় রাখার মত দিয়েছেন তাঁরা।

ব্যয়–দৈর্ঘ্য অর্ধেক, তারপরেও টোল বেশি

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) প্রকল্পের আওতায়। এই এক্সপ্রেসওয়ের মূল অংশের দূরত্ব ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। এর মধ্যে গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাওলা থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটার অংশের উদ্বোধন করেছেন। পরদিন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যান চলাচল শুরু হয়েছে। বাকি অংশ চলতি বছরের জুনে চালুর লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার। এই উড়ালসড়কটিতে ওঠা–নামার জন্য ৩১টি স্থান থাকছে। এসব ওঠা–নামার স্থান ধরলে উড়ালসড়কের দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার।

‘মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী সিডিএ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের’ মূল অংশের দৈর্ঘ্য সাড়ে ১৬ কিলোমিটার। এতে ১৫টি ওঠা-নামার পথ (র‍্যাম্প) থাকবে। সব মিলিয়ে এর দৈর্ঘ্য হবে ২৪ কিলোমিটার। মূল অংশের কাজ শেষ পর্যায়ে থাকলেও র‍্যাম্পগুলোর কাজ পুরোপুরি শুরু হয়নি।

এর আগে তিনটি উড়ালসড়ক নির্মাণ করলেও তার থেকে কোনো টোল নেয় না সিডিএ। তবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ক্ষেত্রে প্রকল্প অনুমোদনের সময় টোল আদায়ের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল সিডিএকে। যানবাহন চলাচল শুরুর আগে কোন গাড়ি থেকে কত টাকা টোল আদায় করতে চায়, তার একটি তালিকা করেছে সিডিএ।

ঢাকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচলের অনুমতি নেই। তবে চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে এই বাধা নেই। এই গাড়িগুলো চলাচল করতে পারবে। মোটরসাইকেলের জন্য টোল প্রস্তাব করা হয়েছে ওঠা-নামার পয়েন্ট ভেদে ১০ ও ১৫ টাকা। সিএনজিচালিত অটোরিকশার জন্য নিতে চায় ২০ ও ৩০ টাকা করে। চট্টগ্রামের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে যেতে হলে প্রাইভেট কার থেকে ৮০ টাকা, জিপগাড়ি ও মাইক্রোবাসের জন্য ১০০ টাকা করে টোল আদায়ের প্রস্তাব দিয়েছে সিডিএ। ঢাকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে প্রাইভেট কার, জিপ, মাইক্রোবাস–জাতীয় গাড়ি থেকে টোল নেওয়া হয় ৮০ টাকা করে।

ঢাকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে সব ধরনের বাসের জন্য ১৬০ টাকা টোল নির্ধারণ করা হলেও চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে দুই ধরনের টোল প্রস্তাব করেছে সিডিএ। মিনিবাসের জন্য ২০০ টাকা এবং বড় বাসের জন্য ২৮০ টাকা টোল নিতে চায় সংস্থাটি।

অবশ্য ট্রাকের ক্ষেত্রে টোলের হার তুলনামূলকভাবে কম। যেমন চার চাকার ট্রাকের জন্য  ২০০ টাকা এবং ৬ চাকার ট্রাকের জন্য ৩০০ টাকা। যদিও ঢাকায় নেওয়া হচ্ছে ৬ চাকা পর্যন্ত ৩২০ টাকা এবং ৬ চাকার বেশি ট্রাকের ক্ষেত্রে ৪০০ টাকা। চট্টগ্রামের এক্সপ্রেসওয়েতে কাভার্ড ভ্যান ও ট্রেইলর গাড়ির জন্য সাড়ে চার শ টাকা করে টোলের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। আর পিকআপ থেকে নিতে চায় ১৫০ টাকা করে।

সিডিএর প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল আদায় করা হবে ছয়টি পয়েন্টে। এসব পয়েন্টে ১৪টি বুথ থাকবে। নগদ টাকার পাশাপাশি কার্ড এবং বিকাশ, নগদসহ মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর (এমএফএস) মাধ্যমেও টোল পরিশোধ করার ব্যবস্থা রাখা হবে।

ঢাকার তুলনায় চট্টগ্রামের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে তুলনামূলক বেশি টোল প্রস্তাব করার বিষয়ে জানতে চাইলে সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, এই বিষয়ে (টোল) কথা না বলার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা আছে।

সড়ক পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদ ওমর ইমাম প্রথম আলোকে বলেন, কিসের ভিত্তিতে টোলের হার নির্ধারণ করেছে এবং কেন ঢাকার চেয়ে এখানে বেশি, তার ব্যাখ্যা সিডিএকে দিতে হবে। এমনিতেই ঢাকার তুলনায় চট্টগ্রামে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কম। যদি টোলের হার বেশি হয়, তাহলে অনেকেই এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে আগ্রহী হবেন না।

তখন তাঁরা নিচ দিয়ে চলে যাবেন। প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী গাড়ি না চললে নির্মাণ খরচ দূরের বিষয়, টোল আদায়ের জন্য যে টাকা খরচ (টোল প্লাজা, জনবলের বেতন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ) হবে, তা তুলতে কষ্ট হয়ে যাবে।