এক সপ্তাহ আগে খিঁচুনি দিয়ে জ্বর আসে আনাসের, এখনো অসুস্থতায় কাবু শিশুটি

আনাসের কপালে জলপট্টি দিচ্ছেন মা শারমিন আক্তার। চট্টগ্রাম, ১৩ আগস্ট
ছবি: জুয়েল শীল

আট দিন ধরে ডেঙ্গু জ্বরে কাহিল মোহাম্মদ আনাস। এক বছর বয়সী শিশুটি পানি, তরল খাবার কোনো কিছুই মুখে তুলছে না। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার শিশু বিভাগে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে আনাসকে।

আনাসের পাশে বসে মা শারমিন আক্তার জানালেন, ৬ আগস্ট খিঁচুনি দিয়ে জ্বর আসে ছেলের। এরপর পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়ে। সেদিনই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসা চললেও কিছুতেই জ্বর কমছে না।

হাসপাতালে আনাসের পাশেই দিন কাটছে শারমিন আক্তারের। বাইরের মেঝেতে থাকছেন বাবা আরমান হোসেন। তাঁদের বাসা চট্টগ্রাম নগরের রহমাননগর এলাকায়।

আজ রোববার বিকেল চারটার দিকে হাসপাতালে আনাসের শয্যার পাশে দাঁড়িয়ে কথা হয় তাঁর মা-বাবার সঙ্গে। শারমিন তখন আনাসের কপালে জলপট্টি দিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গুতে শিশু মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। এ জন্য ছেলেটাকে নিয়ে ভয় আরও বাড়ছে। জ্বর কমাতে ওষুধ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জ্বর কমেনি। এতটাই দুর্বল যে ছেলেটা উঠে বসতে পারছে না।’

আনাসের বাবা আরমান বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালেই থাকতে হচ্ছে। চাকরিতে যাওয়ার সুযোগ নেই। ধার করে চলতে হচ্ছে। এত কিছুর পর যদি ছেলেটাকে সুস্থ করে বাড়ি ফিরতে পারি, তবেই শান্তি পাব।’ তিনি আরও বলেন, চিকিৎসকেরা তাঁদের বলেছেন, আনাসের রক্তের অণুচক্রিকা (প্লাটিলেট) একটু কমেছে। তবে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।

হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, শুধু আনাস নয়, তাঁর মতো এমন অন্তত ২৬ শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে। আগ্রাবাদ এলাকা থেকে ছেলে আরাফাত রহমানকে (৮) নিয়ে দুদিন আগে হাসপাতালে আসেন মা রাহেলা আক্তার। রাহেলা বলেন, ছেলের শারীরিক অবস্থা এখন ভালোর দিকে। চিকিৎসকেরা বলেছেন, দুশ্চিন্তার কিছু নেই।

তিন বছর বয়সী আয়শা আক্তারকে ভর্তি করানো হয় গত রোববার। তাদের বাড়ি রাউজান উপজেলার কঁচুখালী গ্রামে। আয়শার মামা মোহাম্মদ জুয়েল বলেন, আয়শার অবস্থা ভালো। জ্বর কমেছে।

শয্যা না পাওয়ায় হাসপাতালের মেঝেতেও চিকিৎসা নিচ্ছেন কয়েকজন। এর মধ্যে মিরসরাইয়ের বারইয়ারহাট এলাকার বাসিন্দা আমজাদ হোসেন (২২) গতকাল শনিবার ভর্তি হয়েছেন। তাঁর অবশ্য জ্বর কমেছে।

আমজাদের বড় ভাই কামাল হোসেন বলেন, মেঝেতে থাকতে হচ্ছে। তবে ভাইয়ের শারীরিক অবস্থা ভালোর দিকে। দুর্বলতা কিছুটা কমেছে।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১১০ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৪ হাজার ৫৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন ৩৩ জন। এর মধ্যে ১৫টি শিশু। সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এক রোহিঙ্গা শিশু মারা গেছে।

জানতে চাইলে জেলা সিভিল সার্জন ইলিয়াছ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, শিশুদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে। মারাও যাচ্ছে। তাই মশা জন্মাতে পারে এমন সুযোগ নষ্ট করে দিতে হবে। ঘরবাড়ি ও স্কুল-কলেজ পরিষ্কার রাখতে হবে। মশারি ব্যবহার করতে হবে।