বাবা-মা, বিশেষ করে মা কর্মজীবী হলে প্রথমেই যে চিন্তাটা মাথায় আসে, সন্তানকে কে দেখবে? একসময় নানি-দাদিরা নাতি–নাতনিদের দেখভাল করলেও এখন বাস্তবতার খাতিরে সেই দৃশ্যও বদলেছে। ফলে সমস্যাটি দিন দিন প্রকট হচ্ছে। শুধু সন্তানকে কে দেখবে, সে চিন্তায় অনেক নারীকে কাজ ছেড়ে দিতে হচ্ছে। এ সমস্যার সমাধানে শিশুযত্নে ‘রোডম্যাপ ফর চাইল্ড কেয়ার ইন বাংলাদেশ’ প্রণয়ন করেছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
আজ রোববার রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে এ রোডম্যাপের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মমতাজ আহমেদ, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কেয়া খান, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা-আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর টুওমো পৌটিআইনেনসহ অনুষ্ঠানের অন্য অতিথিরা। এই রোডম্যাপ তৈরিতে কারিগরি সহায়তা দিয়েছে আইএলও।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মমতাজ আহমেদ বলেন, শিশুযত্নের বিষয়টি নতুন কোনো বিষয় নয়। নানি, দাদি, মায়েরা বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। তাই নতুন করে চিন্তা করতে হবে। শিশুযত্ন ব্যবস্থা উন্নত করতে হলে শুধু সরকারি উদ্যোগ নয়, বেসরকারি অংশীদারত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই রোডম্যাপ উন্নত শিশুযত্ন ব্যবস্থা, নারীদের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ এবং দীর্ঘ মেয়াদে তাঁদের কর্মক্ষেত্রে থাকার স্থায়িত্ব নিশ্চিত করবে। পাশাপাশি চাইল্ড কেয়ার গিভার হিসেবে নারী এবং পুরুষের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে।
আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পৌটিআইনেন বলেন, সহজপ্রাপ্যতা, মানসম্মত এবং কম খরচে শিশুযত্ন সেন্টারের সেবা পাওয়া গেলে তা জেন্ডারসমতা ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। অভিভাবক, বিশেষ করে মায়েরা কর্মক্ষেত্রে সক্রিয় হতে পারবেন কি না, তা নির্ভর করে এ সেবার ওপর। শিশুসেবা উদ্যোগগুলোকে আন্তর্জাতিক শ্রমমানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার সুপারিশ করেন তিনি।
গবেষণাপ্রতিষ্ঠান র্যাপিডের (আরএপিআইডি) তত্ত্বাবধানে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা, শ্রমিক ও মালিক সংগঠন, চাইল্ড কেয়ার ওয়ার্কার এবং অভিভাবকদের সঙ্গে পরামর্শের মাধ্যমে এ রোডম্যাপ প্রণয়ন করা হয়েছে। রোডম্যাপটি শিশুযত্ন খাতে বিদ্যমান প্রধান চ্যালেঞ্জ, মানের ঘাটতিসহ বিভিন্ন বিষয় চিহ্নিত করেছে এবং তা দূর করতে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে।
অনুষ্ঠানের আলোচকেরা জানিয়েছেন, রোডম্যাপটি বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) ডিসেন্ট ওয়ার্ক বা শোভন কাজ এবং জেন্ডারসমতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। নারীদের অবৈতনিক কাজের সময় কমাবে।
র্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আবু ইউসুফ অনুষ্ঠানে রোডম্যাপটি নিয়ে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন। গবেষণার বরাত দিয়ে তিনি জানান, বর্তমানে দেশে সরকারি পরিচালিত ৬৩টি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র এবং ১০০টির বেশি বেসরকারি কেন্দ্র রয়েছে। ৫৪ শতাংশ নারী কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে না পারার প্রধান কারণ শিশুকে দেখাশোনার লোকসংকট।
রোডম্যাপটিতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ধরনের কেন্দ্র ব্যবহারে সচেতনতা বাড়ানো, কেন্দ্রের কর্মীদের দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ এবং সনদ দেওয়া এবং কেন্দ্রগুলো কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে, তাতে সরকারের নজরদারি নিশ্চিত করার বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব তানিয়া খান, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সবুর হোসেন, জাতীয় শ্রমিক শিক্ষা সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান বাদল খান, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল ফারুক আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন এবং বক্তব্য দেন।