কিছু ব্যবসায়ী নামধারী লুটপাট করে দেশকে শেষ করে দিচ্ছে: জি এম কাদের

জাতীয় কৃষক পার্টির সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের
ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের বলেছেন, ‘রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায়, আমলাতন্ত্রের যোগসাজশে কিছু ব্যবসায়ী নামধারী লুটপাট করে দেশকে শেষ করে দিচ্ছে। কোনো ব্যবসা নেই, কিন্তু হাজার কোটি টাকা আয় করছে তারা। যারা দেশের মানুষের সম্পদ লুট করছে, তাদের জন্যই সরকার বিভিন্ন সুযোগ–সুবিধার সৃষ্টি করছে।’

আজ মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে জাতীয় কৃষক পার্টির সঙ্গে মতবিনিময় সভায় জি এম কাদের এ কথা বলেন।

জি এম কাদের বলেন, ‘দেশে লুটপাটের রাজনীতির সৃষ্টি হয়েছে। যে যত লুটপাট করতে পারবে, সে তত সম্মানিত ব্যক্তি। যে যত বড় লুটেরা, সে তত দেশপ্রেমিক হিসেবে গলায় মালা নিয়ে ঘুরবে। দুঃখের বিষয় হচ্ছে যাঁরা দেশের জন্য ভালো কাজ করতে চাচ্ছেন, তাঁরা যোগ্য সম্মান পাচ্ছেন না।’

জি এম কাদের আরও বলেন, ‘আমরা ৩০০ আসনেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। কারও দয়াদাক্ষিণ্যে নয়, জনগণের ভালোবাসা নিয়ে আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই। সাধারণ মানুষই দেশের মালিক হবে। দেশের মানুষ নির্বাচনের মাধ্যমে ঠিক করবে—কারা, কীভাবে দেশ চালাবে।’

জি এম কাদের বলেন, ‘নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন ও সরকার পরিবর্তনই হচ্ছে স্বাধীনতাযুদ্ধের মূল চেতনা। শহীদের রক্তের সঙ্গে আমরা কখনোই বেইমানি করব না। আমরা শহীদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করব।’

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জি এম কাদের বলেন, ‘দেশের মানুষ সুশাসন চায়, দেশের মানুষ ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজব্যবস্থা চায়। যেখানে গরিব ও দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়াবে সরকার। আমাদের সরকার গরিব ও দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ায় না। দেশের সম্পদ লুট করে যারা হাজার কোটি টাকার মালিক, তাদের পাশে দাঁড়ায় সরকার।’

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘যেহেতু ডলার–সংকটের সৃষ্টি হয়েছে, তাই সরকার সব জমি কৃষিকাজের আওতায় আনতে উপদেশ দিচ্ছে। কিন্তু যাঁরা কৃষিকাজ করে দেশের মানুষকে বাঁচিয়ে রাখছেন, তাঁদের বাঁচিয়ে রাখতে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। কৃষকদের বাঁচিয়ে রাখলে আমরা খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভুগব না। কৃষকদের বাঁচিয়ে রাখতে প্রয়োজনে কৃষিঋণ মওকুফ করতে হবে। ব্যাংক থেকে যারা হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়, তাদের ঋণ সরকার মাফ করে দেয় কিন্তু কৃষকের ১০ হাজার টাকা ঋণ মওকুফ হয় না। লুটেরারা হাজার কোটি টাকা নিয়ে ব্যাংক ফাঁকা করে ফেলে আর কৃষকদের টাকায় সেই ব্যাংককে বাঁচিয়ে রাখা হয়।’

জি এম কাদের বলেন, ‘দেশের কৃষকদের বাঁচাতে পল্লি রেশনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী যেন সাধারণ কৃষকের নাগালের মধ্যে থাকে, সে জন্য সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। যে মূল্য কৃষকেরা দিতে পারেন, সেই মূল্যেই তাঁদের নিত্যপণ্য দিতে হবে। দেশের এমন দুর্দিনে আমাদের কৃষকদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে কৃষককে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।’

এ সময় জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কৃষিতে নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন। ১৯৭৪ সালে ৭ কোটি মানুষের দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছে আর এখন ১৮ কোটি মানুষের দেশে খাদ্যসংকট হচ্ছে না। উপজেলা পরিষদ সৃষ্টির মাধ্যমে ১৮ জন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছিলেন। তাঁরা কৃষি ও পশুপালন থেকে শুরু করে দেশের গ্রামীণ মানুষের উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রেখেছেন।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জাতীয় কৃষক পার্টির সভাপতি সাহিদুর রহমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। দলের সাধারণ সম্পাদক এ বি এম লিয়াকত হোসেন চাকলাদার অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। জাতীয় কৃষক পার্টির নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন শেখ আলমগীর হোসেন, শেখ হুমায়ুন কবির প্রমুখ।