মামলা থেকে রোজিনা ইসলামের অব্যাহতি পাওয়াকে স্বাগত জানিয়েছে সিপিজে

অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ও দণ্ডবিধির মামলা থেকে প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি রোজিনা ইসলামের অব্যাহতি পাওয়াকে স্বাগত জানিয়েছে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। আজ বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

সিপিজের ভেরিফায়েড এক্স অ্যাকাউন্টে দেওয়া পোস্টে বলা হয়, রোজিনা ইসলামকে হয়রানি বন্ধ করতে সিপিজে ও তার অংশীদারেরা (বাংলাদেশের) সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর কাছে বারবার অনুরোধ জানিয়েছে। আদালতের হেফাজতে থাকা তাঁর পাসপোর্ট ফেরত দিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করতেও উপর্যুপরি আহ্বান জানানো হয়েছে।

পোস্টে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে সম্প্রতি নতুন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছে। এ অবস্থায় নিজেদের কাজের কারণে যেসব সাংবাদিকের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক মামলা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহার করার জন্যও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর কাছে অনুরোধ জানাচ্ছে সিপিজে।

তিন বছর তিন মাস পর অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে করা মামলা থেকে গতকাল বুধবার অব্যাহতি পেয়েছেন প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি রোজিনা ইসলাম। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সুলতান সোহাগ উদ্দিন তাঁর অব্যাহতির আদেশ দেন।

আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন–পিবিআইয়ের পরিদর্শক নূর নবী সরকার মামলা থেকে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেন। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। তাই তাঁকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করা হলো।

আদালত আদেশে উল্লেখ করেন, অধিকতর তদন্ত করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন (তথ্যগত ভুল) দাখিল করেছে পিবিআই। পিবিআইয়ের আবেদন মঞ্জুর করা হলো।

এর আগে ২০২২ সালের অক্টোবরে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে করা মামলায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ডিবিও চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছিল, সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সপক্ষে কোনো উপাদান পাওয়া যায়নি।

পরে ডিবির চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি আবেদন করেন মামলার বাদী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা। তখন আদালত অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন।

২০২১ সালের ১৭ মে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রায় ছয় ঘণ্টা আটকে রেখে হেনস্তা ও নির্যাতন করা হয়। একই দিন রাত সাড়ে আটটার দিকে তাঁকে শাহবাগ থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রাত পৌনে ১২টার দিকে তাঁর বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়। ওই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এক সপ্তাহের মাথায় ওই বছরের ২৩ মে তিনি জামিনে ছাড়া পান। এর পর থেকে তিনি আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিয়ে আসছেন।

সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম ‘সেরা অদম্য সাহসী’ হিসেবে ২০২১ সালে ফ্রি প্রেস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। সাংবাদিকতার মাধ্যমে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভূমিকা রাখার জন্য ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর রোজিনা ইসলামকে অ্যান্টিকরাপশন চ্যাম্পিয়নস অ্যাওয়ার্ড দেয়।