তথ্য ফাঁস: প্রতিমন্ত্রীর এ কথা শোনা দুঃখজনক, পরিণতি হতে পারে ভয়ংকর

মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি অব মালয়ার আইন ও উদীয়মান প্রযুক্তি বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক মুহাম্মদ এরশাদুল করিম বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ওপর নজর রাখেন। বাংলাদেশের একটি সরকারি ওয়েবসাইট থেকে তথ্য ফাঁস হওয়ার বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাজীব আহমেদ।

মুহাম্মদ এরশাদুল করিম
প্রশ্ন

প্রথম আলো: তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, এটা হয়েছে ওয়েবসাইটের দুর্বলতায়। দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। আপনি কী বলবেন?

এরশাদুল করিম: এটা ভালো যে প্রতিমন্ত্রী অন্তত স্বীকার করলেন, একটা ভালো উদাহরণ সৃষ্টি হলো। সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায় তো উনার ওপরও বর্তায়।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: প্রতিমন্ত্রী তো বলেছেন, তাঁরা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে নানা সময় যোগাযোগ করেন, নানা নির্দেশিকা দেন। সরকারি কিছু সংস্থা তা শোনে না। তাহলে প্রতিমন্ত্রী কী করতে পারেন?

এরশাদুল করিম: সরকারি কাজ কি এভাবে চলতে পারে? এ ছাড়া এভাবে পাবলিক প্লেসে (জনসমক্ষে) বলা এ কথাটা শোনা দুঃখজনক। এর পরিণতি ভয়ংকর হতে পারে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তাঝুঁকি এ কারণে বাড়তে পারে। অপরাধীরা সুযোগ খুঁজতে থাকবে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: সরকারের এখন কী করা উচিত?

এরশাদুল করিম: সবার আগে এর একটা পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে হবে। এরপর এর গুরুত্ব অনুসারে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এই তথ্য ফাঁস সম্পর্কে এবং করণীয় সম্পর্কে জানাতে হবে। যাঁর তথ্য ফাঁস হয়েছে, তাঁর জানার অধিকার আছে। আবার জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে যেসব প্রতিষ্ঠান (যেমন ব্যাংক), তাদেরও সতর্ক করতে হবে। আর জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: ধরুন আমার তথ্য ফাঁস হয়েছে, আমি কী করতে পারি?

এরশাদুল করিম: দেখতে হবে কী কী ধরনের তথ্য ফাঁস হয়েছে। আপনি হয়তো মুঠোফোন নম্বর পাল্টে ফেলতে পারেন, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর তো পাল্টাতে পারবেন না।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: মুঠোফোন নম্বর কেন পাল্টাব। এটা তো আমার পেশাগত কাজে খুবই জরুরি।

এরশাদুল করিম: এটাও সত্য। আসলে এখন সতর্ক থাকা ছাড়া সাধারণ মানুষের তেমন কিছু করার নেই।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: তথ্যগুলো ব্যবহার করে কী কী ক্ষতি করার চেষ্টা হতে পারে?

এরশাদুল করিম: নানা কিছু হতে পারে। তথ্য–সম্পর্কিত ব্যক্তির আর্থিক এবং অন্য নিরাপত্তাঝুঁকি তৈরি হতে পারে। অসচেতন মানুষের কাছে ফোন করে তাঁর সব তথ্য বলে বিশ্বাস অর্জন করার পর প্রতারণা হতে পারে। তথ্য উন্মুক্ত হয়ে গেলে সেসব তথ্যনির্ভর বিভিন্ন সেবার ক্ষেত্রে অপব্যবহারের সুযোগ থাকে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: ফাঁস হওয়া তথ্য থেকে মানুষের ক্ষতি করার ঘটনা কী ঘটে?

এরশাদুল করিম: বিশ্বজুড়ে প্রচুর উদাহরণ রয়েছে।  

প্রশ্ন

প্রথম আলো: বাংলাদেশে বলা হচ্ছে ৫ কোটি মানুষের তথ্য ফাঁস হয়েছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে সংখ্যাটি বলা হয়নি। এটা যদি সত্যি হয়, তাহলে এটা বিশ্বের বড় তথ্য ফাঁসের ঘটনা হবে?

এরশাদুল করিম: বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইয়াহুর ৩০০ কোটি গ্রাহকের তথ্য ফাঁস হওয়ার ঘটনা আছে। আর সরকারি সংস্থার কাছ থেকে ২০১৮ সালে ভারতের আধার কার্ডের ১১০ কোটি এবং ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ১৯ কোটি ৮০ লাখ ভোটারের তথ্য ফাঁস হয়। সে হিসাবে বাংলাদেশের ৫ কোটি মানুষের তথ্য ফাঁস হলে তা অন্যতম বড় ফাঁসের ঘটনা হবে। ২০১৭ সালে মালয়েশিয়াতে ৪ কোটি ৬ লাখ মানুষের ফোন নম্বর ফাঁস হয়ে গিয়েছিল, যা ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: আমরা তো দেখছি বারবার তথ্য ফাঁস হচ্ছে। করণীয় কী?

এরশাদুল করিম: আমার মনে হয়, এ ঘটনাটিকে অনেকটা ‘ওয়েক আপ কল’ (সতর্কীকরণ বার্তা) হিসেবে দেখে এর বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত ও পরিণতি হওয়া দরকার। সুযোগ এসেছে আইন অনুযায়ী জড়িত বা দায়িত্ব অবহেলাকারীদের শাস্তি দিয়ে নজির সৃষ্টি করে সবাইকে সতর্ক করা। অন্যথায় এ রকম ঘটনা ঘটতেই থাকবে।