দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে সরকারের নীতিগুলো ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা বা সুরক্ষার জন্য নয়, বরং মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহার করা হয়, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। মানুষ কী বলতে পারবে, সেটা রাষ্ট্র নিজেই ঠিক করে দেয়।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টারে ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ এবং আইনের শাসন: শ্রীলঙ্কা, ভারত ও বাংলাদেশের প্রবণতা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন। প্রতিবেদনটি যৌথভাবে প্রকাশ করেছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ, লার্ন এশিয়া, ভারতের সেন্টার ফর কমিউনিকেশন গভর্ন্যান্স অ্যাট ন্যাশনাল ল ইউনিভার্সিটি। এ ছাড়া সহায়তা করেছে কনরাড অ্যাডেনাউর স্টিফটাংক।
অনুষ্ঠানে ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা হুমা খান বলেন, সুরক্ষার চেয়ে নিয়ন্ত্রণ করার নীতি তৈরি দক্ষিণ এশিয়ার একটি সহজাত সমস্যা, যা ঔপনিবেশিক সময় ধরে চলে আসছে। মানুষ কী বলবে কী বলবে না, তা এখনো রাষ্ট্র নিজেই নিয়ন্ত্রণ করে। তিনি আরও বলেন, এটা ঠিক যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উদ্বেগ, সহিংসতা, ঘৃণাসূচক বক্তব্য ছড়ায়। কিন্তু নীতিতে এই বিষয়গুলো মোকাবিলার ভাবনাকে সেভাবে প্রাধান্য দেওয়া হয় না।
গবেষণা প্রতিবেদনটিতে মূলত দেখানো হয়েছে, কীভাবে শ্রীলঙ্কা, ভারত ও বাংলাদেশের সরকার নিরাপত্তার নামে অনলাইনের নীতিগত বিষয়গুলোকে দেখছে এবং ন্যায্যতা দিচ্ছে। এতে বলা হয়েছে, বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো জাতীয় নিরাপত্তা এবং ভূরাজনৈতিক বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলছে। সহিংসতা ও চরমপন্থার মতো বিষয়গুলো ছড়িয়ে দিতে এই প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় সমর্থনে বিভ্রান্তিমূলক তথ্যও ছড়ানো হয়।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য সৈয়দ মাহফুজুল আজিজ বলেন, বাংলাদেশে অনেক আইন রয়েছে। কিন্তু তা মানুষকে সুরক্ষার চেয়ে নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যেই বেশি ব্যবহৃত হয়।
ইন্টারনেট বন্ধ এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের মতো শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞতাও একই বলে জানান লার্ন এশিয়া শ্রীলঙ্কার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হেলানি গ্যালপায়া। অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কাতেও মন্ত্রী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের নির্দেশনা দিয়ে নিজেই তা ভিপিএন দিয়ে ব্যবহার করতেন।
বাংলাদেশে সরকারের কোন সংস্থা সাইবার নিরাপত্তার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত, তার কোনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না বলে মন্তব্য করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক সাইমুম রেজা তালুকদার। তিনি বলেন, কারা এ–সংক্রান্ত আইনগুলো করছে, কেন করছে, তা আগে থেকে জানা যায় না বা আলোচনা হয় না। বিগত সরকারের সময়ে আইন তৈরির প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ছিল না। মৌলিক অধিকার খর্ব করে এমন অনেক নির্বাহী আদেশ দেওয়া হতো।
আলোচনায় আরও অংশ নেন অ্যাডেনাউর স্টিফটাংকের রুল অব ল এশিয়া প্রোগ্রামের প্রোগ্রাম ম্যানেজার অলিভিয়া স্কুলাউচ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক সায়রা রহমান খান, মানবাধিকারকর্মী রেজাউর রহমান লেনিন, ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটির খণ্ডকালীন শিক্ষক মুবাশ্বার হাসান, ভারতের সেন্টার ফর কমিউনিকেশন গভর্ন্যান্স অ্যাট ন্যাশনাল ল ইউনিভার্সিটির প্রোগ্রাম অফিসার তাভিশি আহলুয়ালিয়া প্রমুখ।