গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনের উপনির্বাচনে অনিয়ম নিয়ে আজ মঙ্গলবার প্রথম দিনের তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। সকাল নয়টা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত তদন্তকাজ চলে। প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টা নির্বাচনসংশ্লিষ্ট অন্তত ১৪০ জনের বক্তব্য শোনে তদন্ত কমিটি। গাইবান্ধা সার্কিট হাউস মিলনায়তনে তদন্ত কমিটি তিন দিন ধরে মোট ৬৮৫ জনের বক্তব্য শুনবে।
প্রথম দিন ১১ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ৬৬ জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ৫৫ জন পোলিং এজেন্ট, ফুলছড়ি উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও মিডিয়া ব্যক্তি, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও গাইবান্ধা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং ফুলছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বক্তব্য নেওয়া হয়েছে।
তদন্ত শেষে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুজন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বলেন, ‘নির্বাচনের দিন আমরা কী দেখেছি, তা তদন্ত কমিটি আমাদের কাছে জানতে চান। আমরা তদন্ত কমিটিকে বলেছি, আমাদের কেন্দ্রে কোনো সমস্যা হয়নি। শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ হয়েছে।’
এ ছাড়া আজ বিকেলে ফুলছড়ি উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। সাক্ষাৎকার শেষে ফুলছড়ি উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আমিনুল হক বলেন, ‘নির্বাচনের দিন সংবাদ সংগ্রহের জন্য আমরা যেসব কেন্দ্র দেখেছি, সেগুলোতে সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ হয়েছে। সে সময় আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ দেয়নি। এসব আমরা তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছি।’
একই প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম বলেন, ‘ফুলছড়ি উপজেলার চরাঞ্চলের মানুষ বেশির ভাগ নিরক্ষর। তাঁদের ভোটের আগে ইভিএম সম্পর্কে কোনো ধারণা বা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। এ কারণে অনেকে সহায়তার জন্য সঙ্গে লোক নিয়ে এসে ভোট দেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। এমন সব কথা আমরা তদন্ত কমিটিকে বলেছি।’
শেষে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘ফুলছড়ি উপজেলার ১১টি ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার বক্তব্য নিয়েছি। পোলিং এজেন্টদের বক্তব্য নিয়েছি। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও গাইবান্ধা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং ফুলছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বক্তব্য নেব। আগামীকাল আমরা যাচ্ছি সাঘাটা উপজেলায়। সব মিলিয়ে আমরা যে নোটিশ করেছি, তাতে ৬৮৫ জনের একটা তালিকা আছে। তার মধ্যে থেকে কিছু হয়তো বেড়ে যেতে পারে।’
গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে অনিয়মের তদন্তে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করে নির্বাচন কমিশন। কমিটির কর্মকর্তারা হচ্ছেন, আহ্বায়ক নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ, সদস্যসচিব মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী এবং সদস্য যুগ্ম সচিব কামাল উদ্দিন বিশ্বাস। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল এ কমিটি গঠন করেন। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
গত বুধবার সকাল আটটায় গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ওই দিন দুপুরে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে চারজন প্রার্থী ভোট বর্জন করেন। এরপর ঢাকা থেকে সিসিটিভি ক্যামেরায় গোপন বুথে ঢুকে ভোট নেওয়াসহ নানা অনিয়ম দেখে নির্বাচন কমিশন প্রথমে ৪৪টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করে। এরপর বেলা দুইটার দিকে উপনির্বাচন বন্ধ ঘোষণা করা হয়।