টাঙ্গাইলের পাথরাইলে শাড়িতে নকশার কাজে ব্যস্ত এক নারী
টাঙ্গাইলের পাথরাইলে শাড়িতে নকশার কাজে ব্যস্ত এক নারী

ভারতে টাঙ্গাইল শাড়ির জিআইয়ের পর নড়েচড়ে বসেছে সরকার

‘কোনোভাবেই টাঙ্গাইল শাড়ি ভারতের হতে পারে না। এটা ঠিক, এই শাড়ি উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত বসাক সম্প্রদায়ের অনেকেই ভারতের পশ্চিমবঙ্গে থাকেন। তাই বলে তাদের শাড়ি তো টাঙ্গাইল শাড়ি হতে পারে না। আমাদের দেশে পাবনা, নরসিংদী এলাকায়ও শাড়ি হয়। সেটি টাঙ্গাইলের শাড়ি নয়। তাহলে পশ্চিমবঙ্গের শাড়ি কীভাবে টাঙ্গাইলের শাড়ি হয়।’

 কথাগুলো বলছিলেন টাঙ্গাইল শাড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রঘুনাথ বসাক।

বাংলাদেশের প্রসিদ্ধ টাঙ্গাইল শাড়িকে ভারতের নিজস্ব ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির বিষয়টি রঘুনাথের মতো অনেককেই ক্ষুব্ধ করেছে। ভারতে জিআইয়ের খবর পাওয়ার পর এখন বাংলাদেশ নড়েচড়ে বসেছে।

শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয়ভাবে বিষয়টি সুরাহার চেষ্টা হবে। তা না হলে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) কাছে যেতে পারে বাংলাদেশ।

আজ (মঙ্গলবার) টাঙ্গাইল শাড়িকে জিআই পণ্য করার বিষয়ে ই-মেইলে সকল নথিসহ আবেদন করা হয়েছে।
মো. কায়ছারুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক, টাঙ্গাইল

জিআই নিয়ে বাংলাদেশের ঢিলেঢালা ভাব

শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) দেশে কোনো পণ্যের জিআই স্বীকৃতি দেয়। কোনো পণ্যের জিআই স্বীকৃতির জন্য কোনো সংগঠন বা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আবেদন করতে হয়। সেখানে ওই পণ্যের ইতিহাস, জিআই স্বীকৃতির পক্ষে যুক্তি, এর ভিন্নতা সম্পর্কিত তথ্য দিতে হয়। এসব নিয়ে বিশ্লেষণের পরই পণ্যটি স্বীকৃতি পায়।

বাংলাদেশে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন পাস হয় ২০১৩ সালে। প্রথম জিআই পণ্য হয় জামদানি। এরপর গত ১০ বছরে মাত্র ১১টি পণ্যের জিআই স্বীকৃতি হয়েছে। আর ২০২৩ সালে এক বছরেই ১০টি পণ্যের স্বীকৃতি মিলেছে। ই-কমার্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (ইডিসি) নামের বেসরকারি একটি সংগঠনের সদস্যদের স্বেচ্ছাশ্রমে এক বছরে এতগুলো পণ্যের স্বীকৃতির কাজটি হয়েছে। ইডিসির কর্মীরাই জিআই পণ্য করতে জটিল গবেষণার কাজ করেছেন।

ভারতের জিআই জার্নালে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বীকৃতির জন্য আবেদন করা হয়। আর স্বীকৃতি পায় গত ২ জানুয়ারি। ভারতের এই তৎপরতা কয়েক মাস ধরেই নানা গণমাধ্যমে এলেও বাংলাদেশ কোনো উচ্চবাচ্য করেনি। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে দেশীয় পণ্য টাঙ্গাইল শাড়িকে জিআই হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. কায়ছারুল ইসলাম গতকাল বলেন, ‘আজ (মঙ্গলবার) টাঙ্গাইল শাড়িকে জিআই পণ্য করার বিষয়ে ই-মেইলে সকল নথিসহ আবেদন করা হয়েছে।’

বাংলাদেশের যে সুযোগ আছে

আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ব আইনের গবেষক ও জিআই বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই আবেদনে বেশ কিছু দুর্বলতা আছে।

মেধাস্বত্ব আইনের বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক তৌহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, কোনো পণ্য জিআই হিসেবে স্বীকৃতির ক্ষেত্রে মূল বিচার্য হলো স্থান। ভারতে টাঙ্গাইল নামে কোনো জায়গা নেই। তাদের ‘টাঙ্গাইল শাড়ি’ শান্তিপুর ও ঢাকা–টাঙ্গাইলের মিশ্রণ। তাহলে এর নাম টাঙ্গাইল হবে কেন?

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) কাছে আবেদন করলে সেখানকার বিরোধ নিষ্পত্তি পর্ষদে (ডিএসবি) টাঙ্গাইল শাড়ির বিষয়টি বাংলাদেশের পক্ষে যেতে পারে বলে মনে করেন অধ্যাপক তৌহিদুল।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব জাকিয়া সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে আমাদের কাজ টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বীকৃতি। এটি হয়ে যাওয়ার পর আন্তর্জাতিক আইনগত সুবিধার দিকগুলো দেখা হবে।’