লেখক হওয়ার টিপস কী, লেখার সময়ে কী মাথায় থাকে, গল্পের প্লট আসে কোথা থেকে—এমন নানা প্রশ্ন ছিল খুদে শিক্ষার্থীদের। কিশোর আলোর (কিআ) সম্পাদক একে একে সব প্রশ্নেরই উত্তর দিয়ে বললেন, পড়তে হবে প্রচুর। ভালো মানুষ হতে হবে। অভিভাবকদের উদ্দেশে বললেন, সন্তানদের মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
আজ রোববার নগদ-কিআ কার্নিভ্যালে খুদে শিক্ষার্থীদের এমন নানা প্রশ্নে মুখর হয়ে ওঠে অনুষ্ঠানস্থল। শিশু-কিশোরদের প্রিয় সাময়িকী কিশোর আলোর দশম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দিনব্যাপী এ আয়োজন ছিল রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আলোকি কনভেনশন সেন্টারে।
আয়োজনে লেখকের সঙ্গে আড্ডার পর্ব দিয়ে কিশোর আলো সম্পাদক ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক শিক্ষার্থীদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন ও নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, যাঁরা বিখ্যাত হয়েছেন, তাঁরা অনেক সাধনা করে উঠেছেন। লেখক হতে চাইলে পরিশ্রম করতে হবে এবং পড়তে হবে প্রচুর। লেখকের পড়া এবং পাঠকের পড়ার মধ্যে পার্থক্য আছে। লেখক পড়ার পাশাপাশি দেখেনও।
আনিসুল হকের কাছে প্রশ্ন ছিল, বাবা-মা কি লেখালেখির ব্যাপারে উৎসাহ দিতেন? উত্তরে তিনি বলেন, ‘বাবা খুব উৎসাহ দিতেন, তবে মা খুব কড়া ছিলেন।’
অনুষ্ঠানে কিশোর আলো নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন কিশোর আলোর সহকারী সম্পাদক পাভেল মহিতুল আলম এবং আদনান মুকিত।
অভিভাবকদের জন্য নির্ধারিত পর্বে সাইদুজ্জামান রওশনের সঞ্চালনায় আনিসুল হক অভিভাবকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। তার আগে তিনি অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেন, শিল্প, সংগীত, নাটক ও মানুষের কাছে সন্তানদের নিতে হবে। শুধু জিপিএ-৫-এর পেছনে ছোটা যাবে না। সমাজে মানবিক চিকিৎসক, মানবিক প্রকৌশলী ও মানবিক মানুষ প্রয়োজন।
একজন অভিভাবকের জিজ্ঞাসা ছিল একসময় আনিসুল হক ও মোস্তফা সরয়ার ফারুকী মিলে অনেক ভালো নাটক নির্মাণ করেছেন। এখন আর দেখা যায় না। সে ধরনের নাটক আবার লেখার অনুরোধে আনিসুল হক জানান, তিনি চেষ্টা করবেন।
আরেক অভিভাবক বলেন, শিশুরা অনেক বেশি ডিজিটাল ডিভাইসনির্ভর হয়ে পড়ছে। কিশোর আলোয় বেশি ডিভাইস ব্যবহারের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে লেখা ও মানবিক গল্প ছাপানোর আহ্বান জানান। এসব বিষয়ে আনিসুল হক বলেন, তিনি এ পরামর্শ খেয়াল রাখবেন।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের মনোরোগ চিকিৎসক ও সহকারী অধ্যাপক আহমেদ হেলাল কার্নিভ্যালে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শ দেন। অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেন, ডিভাইসকে শত্রু মনে করা যাবে না। ডিভাইস দিয়েও সন্তানেরা অনেক কিছু শিখতে পারে। তবে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ব্যবহার করতে দিতে হবে। সন্তানেরা কী দেখছে, শিখছে খেয়াল রাখতে হবে।
এক শিক্ষার্থীর প্রশ্ন ছিল, এখন তো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সঙ্গেও খেলা যায়। এ প্রসঙ্গে আহমেদ হেলাল মা-বাবার সঙ্গে খেলার পরামর্শ দেন। এতে সম্পর্ক ভালো ও সুন্দর থাকে। কার্নিভ্যালে আরও ছিল বিজ্ঞান কুইজ এবং জাদু পরিবেশনা।
এ ছাড়া সকাল থেকে কার্নিভ্যালে উৎসবমুখর পরিবেশে বিভিন্ন কর্মশালা ও আড্ডায় অংশ নেয় শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে আড্ডা দেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, অভিনয়শিল্পী নুসরাত ইমরোজ তিশা, চঞ্চল চৌধুরী, অপি করিম, ছড়াকার আখতার হুসেন, রোমেন রায়হান, জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার। আরও ছিলেন ইসমাইল আরমান, শিবব্রত বর্মন, তানজিনা হোসেন প্রমুখ।
এ ছাড়া বিভিন্ন কর্মশালায় অংশ নেন নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমন, আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুন, কার্টুনিস্ট মেহেদী হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তারিক মনজুর।