তাঁদের ভূরাজনীতির প্রতিযোগিতা বাংলাদেশের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ

শ্রীরাধা দত্ত, এ কে আব্দুল মোমেন ও এম হুমায়ুন কবির
শ্রীরাধা দত্ত, এ কে আব্দুল মোমেন ও এম হুমায়ুন কবির

বাংলাদেশের অব্যাহত অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা অনেকের নজর কেড়েছে। সেই সঙ্গে ভৌগোলিক অবস্থান এবং ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরকে ঘিরে ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার নিরিখে এ অঞ্চলে বড় শক্তিগুলোর আগ্রহ বাড়ার কারণে বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি করেছে।

গতকাল বুধবার রাজধানীর বিআইআইএসএস (বিস) মিলনায়তনে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা এই মন্তব্য করেছেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) ও বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর রিজিওনাল স্টাডিজ (বিএফআরএস) যৌথভাবে বাংলাদেশ অন আ নিউ জার্নি মুভিং বিয়ন্ড দ্য রিজিওনাল আইডেন্টিটি শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বইটি সম্পাদনা করেছেন ভারতের ওপি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত।

আলোচনার শুরুতে বইটি সম্পর্ক বলতে গিয়ে শ্রীরাধা দত্ত বাংলাদেশের গত ৫২ বছরের উত্তরণ সম্পর্কে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, সামগ্রিকভাবে বইটিতে পররাষ্ট্রনীতি ও নতুন যাত্রার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নতুন বৈশ্বিক রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে সবাই বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত থাকতে চায়। এটি পুরোপুরি নতুন একটি পর্ব, যা অতীতে কখনোই দেখা যায়নি।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশ এখন এক অপার সম্ভাবনার দেশ। আন্তর্জাতিক নানা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের সম্ভাবনার কথা বলছে। বৈশ্বিক ভূরাজনীতির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের গুরুত্ব অবধারিতভাবে বেড়ে চলেছে। আলোচ্য বইটিতে একটি স্বল্প আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে।

ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) প্রেসিডেন্ট এম হুমায়ুন কবির বলেন, ভবিষ্যতের প্রেক্ষাপট থেকে বইটিতে বাংলাদেশকে দেখা হয়েছে। বাংলাদেশ আজ যে অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে, তার মূলে রয়েছে সামাজিক উদ্যোগের ফল। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা অনেকের নজর কেড়েছে। বাংলাদেশ এই অঞ্চল এবং এই অঞ্চলের বাইরে বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। সামগ্রিকভাবে অর্থনীতি, মানবসম্পদ ও কূটনীতির ওপর নির্ভর করছে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অগ্রযাত্রা।

তাঁর মতে, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও সবার সঙ্গে ভারসাম্য রেখে এগিয়ে চলছে। বিশেষ করে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরকে ঘিরে ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার নিরিখে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও ভারসাম্যের কূটনীতি এগিয়ে নেওয়া সামনের দিনে বড় চ্যালেঞ্জ।

মুক্ত আলোচনায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের অগ্রগতির কারণে দেশটি বৈশ্বিক পরাশক্তিগুলোর নজরে এসেছে। আর বৈশ্বিক ভূরাজনীতিতে পরিবর্তন ঘটে চলেছে। ফলে সেই চ্যালেঞ্জগুলো বাংলাদেশের ওপর এসে পড়ছে। এর সঙ্গে অভ্যন্তরীণ যে চ্যালেঞ্জগুলো আছে, সেগুলো মোকাবিলা করতে হবে বাংলাদেশকে। গণতন্ত্র, সুশাসন এবং অর্থনৈতিক যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে, তা ঠিক করার মাধ্যমে এ পরিস্থিতিকে ব্যবহার করে সুযোগ গ্রহণ করতে পারে বাংলাদেশ। বৈশ্বিক পরাশক্তিগুলোর দৃষ্টি এখন বাংলাদেশের ওপর। ফলে নিজস্ব পররাষ্ট্রনীতি অনুযায়ী ভারসাম্য রক্ষা করে চলার যে কাজটি বাংলাদেশ এত দিন করে আসছিল, তা আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। এখন আর এ নীতি কাজ না–ও করতে পারে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা দেন বিআইআইএসএসের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. আবু বকর সিদ্দিক খান। আলোচনায় আরও বক্তৃতা দেন সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের (আইএসএএস) পরিচালক ইকবাল সিং সেভিয়া ও বিএফআরএসের চেয়ারম্যান এ এস এম শামসুল আরেফিন।