নতুন করে তালিকাভুক্তি বন্ধ ছিল ১৯ মাস। ১২ জানুয়ারি থেকে অনলাইনে আবেদনপ্রক্রিয়া শুরু।
মা ও শিশুসহায়তা কর্মসূচিতে ভাতার জন্য অন্তর্ভুক্ত হতে ৫ লাখ ৭০২ জন মা আবেদন করেছেন। আবেদনের এ সংখ্যা ভাতাভোগীর তুলনায় প্রায় আড়াই গুণ। চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) জুন মাস পর্যন্ত নতুন করে ২ লাখ ৬ হাজার ৮৭৫ জন দরিদ্র মাকে তালিকাভুক্ত করা হবে। তবে এখন পর্যন্ত সারা দেশ থেকে কতজন মা চূড়ান্তভাবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন, সে হিসাব করা হয়নি।
মা ও শিশুসহায়তা কর্মসূচির আওতায় নতুন করে তালিকাভুক্তি ১৯ মাস বন্ধ ছিল। তবে এ সময় লিখিত আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। গত ১২ জানুয়ারি থেকে অনলাইনে আবেদনপ্রক্রিয়া শুরু হয়। এ সময় আগের আবেদনগুলোও নতুন করে অনলাইনে তোলা হয়। মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের এ কর্মসূচির আওতায় দরিদ্র অন্তঃসত্ত্বা মায়েরা গর্ভধারণ থেকে সন্তান জন্মদানের পর তিন বছর (৩৬ মাস) পর্যন্ত মাসে ৮০০ টাকা করে ভাতা পান। মা ও শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করা এ কর্মসূচির উদ্দেশ্য। যদিও গত জুলাই থেকে ভাতা দেওয়া বন্ধ রয়েছে।
এবার এ কর্মসূচিতে শুধু অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি কড়াকড়িভাবে অনুসরণ করার কথা থাকলেও দীর্ঘদিন নতুন তালিকা তৈরি বন্ধ থাকায় আগের মতো এবারও কয়েক মাসের সন্তানসহ দরিদ্র মায়েদের এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ভাতাভুক্ত হতে না পারায় সংশ্লিষ্ট মা ও গর্ভের সন্তানের পুষ্টি নিশ্চিত করার উদ্দেশ্য পূরণ হয়নি।
গ্রামীণ এলাকায় ২০০৭-০৮ অর্থবছরে চালু করা ‘মাতৃত্বকালীন ভাতা’ ও শহর এলাকায় ২০১০-১১ অর্থবছরে চালু করা ‘কর্মজীবী মায়েদের জন্য ল্যাকটেটিং ভাতা’ কর্মসূচি একত্র করে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ‘মা ও শিশুসহায়তা কর্মসূচি’ চালু করা হয়েছে।
■ প্রতি মাসের ১ থেকে ২০ তারিখ পর্যন্ত আবেদন নেওয়া হবে।
■ ২০ থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত ইউনিয়ন কমিটির মাধ্যমে আবেদন যাচাই করা হবে।
■ ২৫ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত ভাতাভোগীদের তালিকা চূড়ান্ত করবেন মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা।
মা ও শিশুসহায়তা কর্মসূচির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা রুবিনা গনি প্রথম আলোকে বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) যাচাই এবং এনআইডি সার্ভারের সঙ্গে এ কর্মসূচিকে এপিআই (অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম ইন্টারফেস) করার মাধ্যমে মহিলা অধিদপ্তর কর্মসূচিটি তত্ত্বাবধান করছে। কাজটি করতে গিয়ে গত বছরের জুলাই থেকে ভাতা দেওয়া বন্ধ আছে। তবে ওই সময়ে যে মায়েরা আবেদন করেছিলেন ও চূড়ান্তভাবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন, তাঁরা ওই মাস থেকে বকেয়া ভাতা পাবেন।
ভাতা পেতে সবচেয়ে বেশি আবেদন জমা পড়েছে রংপুর বিভাগে—১ লাখ ৮৬২টি। সবচেয়ে কম জমা পড়েছে সিলেট বিভাগে—২৩ হাজার ৪০১টি। এ ছাড়া ঢাকায় ৮৪ হাজার ৭০০, রাজশাহীতে ৭৮ হাজার ৬৫৫, চট্টগ্রামে ৭৭ হাজার ৩৭৬, খুলনায় ৬১ হাজার ৯৪২ ও ময়মনসিংহ বিভাগে ৪৪ হাজার ৯৬৮ মা আবেদন করেছেন।
নতুন তালিকায় প্রথমবারের মতো সিটি করপোরেশনের সব ওয়ার্ডে নির্দিষ্টসংখ্যক দরিদ্র নারী তালিকাভুক্ত হয়েছেন। যেমন ঢাকা উত্তর সিটির কল্যাণপুরের কাউন্সিলর কার্যালয়ের কর্মী এয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ৭২ জন মাকে কর্মসূচির জন্য চূড়ান্ত করেছেন।
কল্যাণপুরের দক্ষিণ পাইকপাড়ার বাসিন্দা সুরমা তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় আবেদন করেছিলেন। তবে ওই সময় নতুন তালিকাভুক্তি বন্ধ থাকায় তিনি এতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেননি। এখন তাঁর ছয় মাসের ছেলেসন্তান রয়েছে।
সুরমা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁকে জানুয়ারি মাসে জানানো হয়, তিনি তালিকাভুক্ত হয়েছেন। তাই ভাতা পেতে কল্যাণপুরে একটি ব্যাংকের শাখায় হিসাব খোলেন। তাঁকে জানানো হয়েছিল, যেকোনো সময় তাঁর ভাতার টাকা আসবে। তিনি জানান, এটি তাঁর দ্বিতীয় সন্তান। জন্মের সময় সন্তানের ওজন আড়াই কেজির কম ছিল। এক মাস পর্যন্ত সন্তানকে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রাখতে হয়েছে। তাঁর স্বামী একজন দোকানকর্মী।
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার ২ নম্বর বাকিলা ইউপি চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর এখানে আবেদন জমা পড়েছিল ১৪০টির মতো। এর মধ্যে গত সপ্তাহে ৮০ জনকে চূড়ান্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, গত বছরের জুলাইয়ে যে মায়েরা অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন, সেই মায়েদের অনেকের সন্তান হয়ে গেছে। যেহেতু জুলাই মাস থেকে টাকা দেওয়া হবে, তাই ওই মায়েদেরও তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
ভাতাভোগী মায়েদের তালিকা চূড়ান্ত করলেও এ পর্যন্ত ব্যাংক হিসাব খোলার কাজ শেষ হয়নি বলে জানান ঢাকার কেরানীগঞ্জের তারানগর ইউপির সচিব সুলতান মাহমুদ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, এ ইউনিয়নে ৬৪ জন মাকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
এখন থেকে প্রতি মাসের ১ থেকে ২০ তারিখ পর্যন্ত আবেদন নেওয়া হবে। ২০ থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত ইউনিয়ন কমিটির মাধ্যমে আবেদন যাচাই করা হবে। ২৫ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত ভাতাভোগীদের তালিকা চূড়ান্ত করবেন মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা।