‘নতুন বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন: তরুণদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। ঢাকা, ১৫ সেপ্টেম্বর
‘নতুন বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন: তরুণদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। ঢাকা, ১৫ সেপ্টেম্বর

টিআইবির আলোচনা সভায় বক্তারা

নতুন বাংলাদেশে দলবাজি-দখলবাজির লক্ষণ উদ্বেগের কারণ

দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে গোষ্ঠীস্বার্থ নয়, জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিনিধিত্ব করতে হবে। কিন্তু নতুন বাংলাদেশে যে দলবাজি, দখলবাজি ও চাঁদাবাজির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, তাতে শঙ্কা ও উদ্বেগের কারণ রয়েছে। অতীত থেকে শিক্ষা গ্রহণ না করলে বর্তমান ক্ষমতাসীনেরা ফ্যাসিবাদের জায়গায় যাবে। তাদেরও পতন হবে।

‘নতুন বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন: তরুণদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। স্বৈরাচারের পতনের মাধ্যমে উন্নততর জায়গায় যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বহুমত থাকা খুবই স্বাভাবিক। বহুমত কীভাবে সমন্বিতভাবে ঐকমত্যে পৌঁছাবে; সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠরা তাদের প্রত্যাশা অন্যদের ওপর চাপিয়ে দেবে নাকি সমঝোতা করবে—এসব বিষয়ে আলোচনার দরকার আছে।

ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, ইতিমধ্যে দলবাজি, দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও আমলাতন্ত্র দখলবাজি শুরু হয়েছে। এসব যদি নতুন বাংলাদেশের লক্ষণ হয়, তাহলে অনেক শঙ্কা ও উদ্বেগের কারণ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই জায়গা মনে রাখতে হবে। তাদের (সংখ্যাগরিষ্ঠ) বলব, আপনারা শিক্ষা গ্রহণ করুন। না করলে কিন্তু আপনারা নিজেদের ওই ফ্যাসিবাদের জায়গায় উপস্থাপন করবেন এবং একইভাবে আপনাদের পতন হতে হবে।’

রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি সামরিক ও বেসামরিক আমলাতন্ত্র, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা—সবাইকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।

টিআইবির প্রতিনিধি হিসেবে নয়, ব্যক্তিগত মত তুলে ধরে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনার ধারক হিসেবে একটি রাজনৈতিক শক্তি বিকাশের অপরিহার্যতা রয়েছে। এটা কখন হবে, কীভাবে হবে, সেটা দেখার বিষয়।

আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, যাঁরা দ্বিমত প্রকাশ করতে চান, তাঁদের নিরাপত্তা আরও বেশি নিশ্চিত করা উচিত। তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষমতাকে প্রশ্ন করাকে স্বাগত জানাই। এই প্রশ্ন করার চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে।’

আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। ঢাকা, ১৫ সেপ্টেম্বর ছবি: দীপু মালাকার

সবাইকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের ওপর বিশ্বাস রাখার আহ্বান জানিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, তাঁদের সবাই সন্দেহ করছে। কারণ, তাঁদের জায়গায় আগে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা বিষয়টিকে পুঁজি করে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করেছিলেন। বিভিন্ন সময় মানুষ আস্থা রেখে আহত হয়েছেন। তবে কোথাও না কোথাও আস্থা স্থাপন করতে হবে। তাঁদের স্বাগত না জানালে পুনর্গঠন হবে না।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক আরিফ সোহেল বলেন, দেশের রাজনৈতিক দলগুলো ঐতিহাসিকভাবে জনগণের আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরে না। তারা সব সময়ই সুনির্দিষ্ট গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করে। তাদের গোষ্ঠীস্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে সত্যিকার অর্থে জনগণের উদ্দেশ্য পূরণ করতে হবে। এ জন্য গণতন্ত্রায়ন তৃণমূল পর্যায় থেকে করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা ও পরিবারতন্ত্র রাখা যাবে না।

বর্তমান জনপ্রশাসনব্যবস্থা ভেঙে দেওয়ার পক্ষে মত দেন আরিফ সোহেল। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রটোকল চাচ্ছি না, কিন্তু দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের “স্যার, স্যার” বলা হচ্ছে। আমলাতন্ত্র চাচ্ছে, আমরা যেন সত্যিকার অর্থে “স্যার” হয়ে উঠি। তাহলে তারা নিরাপদ। কিন্তু আমরা তাদের নিরাপদ রাখব না। আমরা চাচ্ছি, জনপ্রশাসনব্যবস্থাকে একদম ধ্বংস করে দিতে হবে। নতুন ধরনের প্রশাসনব্যবস্থা, যারা জনগণকে সার্ভ (সেবা দেবে) করবে, জনগণের চাকর হবে, সেই প্রশাসন তৈরি করতে হবে।’

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের শক্তিকে সংহত করে দেশ পুনর্গঠনের লক্ষ্যে সম্প্রতি জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। টিআইবির আলোচনা সভায় অংশ নেন কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন। দেশের মানুষ ৫৩ বছরেও কথা বলার জায়গা পায়নি বলে মনে করেন তিনি। সামান্তা শারমিন বলেন, দেশে একটি রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী তৈরি করতে হবে। প্রান্তিক পর্যায়েও আলোচনার গণপরিসর তৈরি করা জরুরি।

মানুষের মৌলিক অধিকার যেন খর্ব না হয়, তা নিশ্চিত করার তাগিদ দেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য আরিফুল ইসলাম। তিনি আরও বলেন, থানায় এখনো মামলা নেওয়া হবে কি না, সে জন্য স্থানীয় বিএনপি নেতা ও সমন্বয়কদের ফোন করে পুলিশ। তাদের আইন প্রয়োগের মানসিকতাই নেই। রাষ্ট্রব্যবস্থাকে নিরাপত্তা যন্ত্র হিসেবে গড়ে তোলার ওপর জোর দেন তিনি।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন লেখক সাদাত হোসাইন, লেখক ও সাংবাদিক সিমু নাসের, সাংবাদিক ফারাবী হাফিজ। এ সময় উপস্থিত শিক্ষার্থীরাও তাঁদের বক্তব্য তুলে ধরেন এবং আলোচকদের বিভিন্ন প্রশ্ন করেন।