সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ কর্মসূচির প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে আজ মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস, পরীক্ষা ও দাপ্তরিক কার্যক্রম সবই বন্ধ রয়েছে। গতকাল সোমবারের মতো আজও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।
সর্বাত্মক কর্মবিরতির অংশ হিসেবে আজ দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের মূল ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকেরা। সেখানে তাঁরা বক্তব্য দেন।
একই দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদও আজ সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছে। সকালে ক্যাম্পাসে মিছিল করে তারা। পরে রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করে।
গত রোববার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের মোর্চা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। প্রত্যয় কর্মসূচির প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলনেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আশ্বাস না পেয়ে এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে তারা। তাদের দাবি তিনটি হলো, ‘প্রত্যয়’ স্কিমের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি ও শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন।
আজ দুপুরে কলা ভবনের ফটকে অবস্থান কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিনাত হুদা বলেন, ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসমাজ প্রত্যয় স্কিমকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এই আন্দোলন নিয়ে অনেক ধরনের বিভ্রান্তি-অপপ্রচার চলছে। এটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে করা হচ্ছে। কিন্তু এটি উদ্দেশ্যমূলক নয়। আগামী প্রজন্মের সুরক্ষার জন্য এই আন্দোলন।
প্রত্যয় স্কিম প্রবর্তনের নামে শিক্ষকসমাজকে ‘জিম্মি করা হয়েছে’ উল্লেখ করে জিনাত হুদা বলেন, ‘অকস্মাৎ কেন এমন একটি বৈষম্যমূলক কর্মসূচি শিক্ষকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হলো? শিক্ষকসমাজ কখনোই এটি গ্রহণ করবে না। এই আন্দোলন আমাদের উত্তরসূরি নতুন প্রজন্মের জন্য।’
শিক্ষকদের এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন আওয়ামীপন্থী শিক্ষকেরা। তবে এতে বিএনপিপন্থী শিক্ষকদেরও অংশগ্রহণ রয়েছে। বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের আহ্বায়ক লুৎফর রহমান আজকের কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘এই আন্দোলন আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। যদি সরকার কালক্ষেপণ করে, আন্দোলনে দেশের মানুষও অংশ নেবে। আমাদের শিক্ষকদের আদর্শের ভিন্নতা থাকলেও এই আন্দোলনে কোনো আদর্শের ভিন্নতা নেই। এটি আমাদের বাঁচা-মরার আন্দোলন। এতে আমাদের জিততেই হবে।’
গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের কর্মসূচিতে অংশ না নেওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ধন্যবাদ জানান লুৎফর রহমান।
কর্মসূচিতে সমাপনী বক্তব্য দেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহারের দাবিতে একযোগে আন্দোলন চলছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। দাবির বিষয়ে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ঘোষণা চাই। চলমান কর্মবিরতির কারণে শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হচ্ছে, তা পরে বিশেষ ক্লাস নিয়ে পুষিয়ে দেওয়া হবে।’
অবস্থান কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে শিক্ষকনেতা আমজাদ আলী, আবদুল বাছির, আবদুর রহিম, ফাজরিন হুদা, আবদুল মুহিত, মো. কামরুজ্জামান ও মনিরুল ইসলাম বক্তব্য দেন।
এদিকে আজ দ্বিতীয় দিনের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনের সব কার্যক্রম বন্ধ আছে। গ্রন্থাগারও বন্ধ রাখা হয়েছে। সকালে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও পরে রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করে কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ। দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের একদল কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে গ্রন্থাগারের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়।
কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের এক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজে ফিরবেন না। এটি এখন তাঁদের অস্তিত্বের লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে।