মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনারা শুধু গণহত্যা করেই খান্ত হয়নি, জ্বালিয়ে দিয়েছিল মানুষের ঘরবসতিও
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনারা শুধু গণহত্যা করেই খান্ত হয়নি, জ্বালিয়ে দিয়েছিল মানুষের ঘরবসতিও

হামুদুর রহমান কমিশন: একটি আলোকপাত

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর, বিকেল পাঁচটায় ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তান বাহিনীর পূর্বাঞ্চল কমান্ডের সেনাপতি লে. জেনারেল এ এ কে নিয়াজি তাঁর পিস্তল ও ব্যাজেস অব র​্যাঙ্ক (ঘাড়ে থাকা পদবির প্রতীক) লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে হস্তান্তরের মাধ্যমে নিঃশর্তভাবে আত্মসমর্পণ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটাই ছিল সর্বোচ্চ পর্যায়ের সামরিক আত্মসমর্পণ। ইতিমধ্যে পশ্চিম রণাঙ্গনেও পাকিস্তানের একটা বড় অংশ দখল করে নেয় ভারত। ১৭ ডিসেম্বর ভারত পশ্চিম পাকিস্তানে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করলে পাকিস্তান তা মেনে নিতে বাধ্য হয়। যদিও ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান দম্ভ করে বলেছিলেন যে পশ্চিম পাকিস্তানের সীমান্তে বিজয়ী না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন। পাকিস্তানের জন্য এই আত্মসমর্পণ, নিজস্ব এলাকা খোয়ানো ও যুদ্ধবিরতি শুধু অপমানজনকই ছিল না, সামরিক বাহিনী নিয়ে তাদের দীর্ঘদিনের অহংকার ও গর্বকে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছিল।

এ ঘটনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের প্রশ্নে পাকিস্তান রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, নৈতিক এবং সর্বোপরি সামরিকভাবে চূড়ান্ত পরাজয় মেনে নেয়। পাকিস্তানের জনগণ বিশেষ করে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি। তাঁরা এই বিপর্যয়ের জন্য প্রেসিডেন্ট ও তাঁর সহযোগীদের দায়ী করেন এবং রোষে ফেটে পড়েন। ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে সেনাবাহিনীতে প্রায় বিদ্রোহের অবস্থার সৃষ্টি হয়। এদিন ৬ আর্মড ডিভিশনের অধিনায়ক মেজর জেনারেল এম আই করিম সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ লে. জেনারেল গুল হাসানকে বার্তা পাঠান যে তাঁর অধীন অধিনায়ক ও সৈনিকেরা সরকার ও সেনা নেতৃত্বের ওপর পুরোপুরিভাবে আস্থা হারিয়েছেন। তাঁরা জানিয়েছেন যে বর্তমান সরকারকে রক্ষা করার জন্য তাঁরা আর অস্ত্র ধারণ করবেন না। যদি আবারও বৈরিতা শুরু হয়, তাহলে বর্তমান সামরিক নির্দেশাবলির আওতায় যুদ্ধ করবেন না। দেশ ও সেনাবাহিনীর অখণ্ডতা ও সংহতি বজায় রাখার জন্য অতিসত্বর সরকার ও সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বে পরিবর্তন আনতে হবে, জনগণের কাছে এবং গ্রহণযোগ্য নেতাদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। ঘটনাপ্রবাহ অফিসার ও সৈনিকদের মধ্যে প্রবল অসন্তোষের সৃষ্টি করেছে এবং দ্রুত আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে। সারা পাকিস্তানে প্রতিবাদের ঝড় ক্রমেই উত্তাল হতে থাকে। ১৮ ডিসেম্বর জনগণ প্রেসিডেন্ট ভবন আক্রমণে উদ্যত হলে অনেক কষ্টে তাদের নিরত করা হয়। তবে জনতা পেশোয়ারে প্রেসিডেন্টের নিজস্ব বাসভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়।

১৯ ডিসেম্বর প্রধান সেনাপতি সামরিক অফিসারদের মুখোমুখি হলে তাঁরা মারমুখী হয়ে ওঠেন। সেনাপ্রধান কয়েক দফা মঞ্চ ছেড়ে চলে যান, আবার ফিরে আসতে বাধ্য হন।

জাতীয় নির্বাচনে পশ্চিম পাকিস্তানে অধিক আসন পাওয়া দলের প্রধান জেড এ ভুট্টোকে ২০ ডিসেম্বর বিশেষ বিমানে করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে উড়িয়ে এনে পাকিস্তানের মসনদে বসানো হয়। যদিও প্রেসিডেন্ট শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাঁর অথবা প্রধান সেনাপতির পদ ধরে রাখার চেষ্টা করেন। ভুট্টো দেশে ফিরেই জনগণ ও সেনাবাহিনীর বিপর্যস্ত মানসিক অবস্থা ও ক্ষুব্ধ অনুভূতি টের পান এবং তা প্রশমন করার জন্য ২৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি হামুদুর রহমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেন। কমিশনের অপর দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি (লাহোর হাইকোর্ট) আনওয়ারুল হক ও বিচারপতি (সিন্ধু ও বেলুচিস্তান হাইকোর্ট) তোফায়েল আলী আবদুর রহমান। পরবর্তীকালে লে. জেনারেল আলতাফ কাদেরকে সামরিক উপদেষ্টা এবং সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার এম এ লতিফকে কমিশনের সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখা ও সমন্বয় সাধনের জন্য কর্নেল সাবির হোসের কোরেশি (সেনাবাহিনী), ক্যাপ্টেন এ ওয়ালিউল্লাহ (নৌবাহিনী) এবং এয়ার কমোডর জাফর মাহমুদকে (বিমানবাহিনী) কমিশনের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। কমিশনের প্রধানের নামানুসারে কমিশনটি ‘হামুদুর রহমান কমিশন’ নামে পরিচিত হয়।

কমিশনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়, কোন পরিস্থিতিতে পূর্বাঞ্চলের অধিনায়ক ভারতীয়দের কাছে আত্মসমর্পণ করেন এবং তাঁর অধীনস্থ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের অস্ত্র সমর্পণের আদেশ দেন এবং পশ্চিম পাকিস্তান ও ভারত সীমান্তে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়, সেসব খতিয়ে দেখতে। কমিশনের প্রধান চেয়েছিলেন যে যুদ্ধে ভারতের কাছে পরাজয়ের সামরিক কারণ ছাড়া রাজনৈতিক এবং অন্যান্য বিষয়ও তাদের কার্যপরিধিতে আনা হোক। কিন্তু প্রেসিডেন্ট তার অনুমোদন দেননি। অর্থাৎ কমিশনকে সামরিক বিপর্যয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়।

কমিশনের দায়িত্বের পরিধি শুধু সামরিক ব্যক্তি ও কর্মকাণ্ডের মধ্যে সীমিত থাকার ফলে সেনা কর্মকর্তারা তাঁদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। পাকিস্তানের সাবেক ভাইস চিফ অব আর্মি স্টাফ জেনারেল কে এম আরিফ উল্লেখ করেন, ‘হামুদুর রহমান কমিশন শুধু সমুদ্রে ভাসমান বিরাট তুষারস্তূপের চূড়াটুকুতে সীমিত ছিল—অর্থাৎ সামরিক আত্মসমর্পণ। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেমন রাজনৈতিক এবং অন্য বিষয়গুলো ভেবেচিন্তে কার্পেটের তলে সরিয়ে রাখা হয় এবং সত্য ঘটনা পাকিস্তানের জনগণের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখা হয়।’

কমিশন ৩১ ডিসেম্বর লাহোরে তাদের কর্মকাণ্ড শুরু করে। তারা ১৯৭২ সালের ২ জানুয়ারি তদন্তকর্মে সহযোগিতা করা ও তথ্য প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তিদের আহ্বান জানিয়ে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।

কমিশন ১৭ জানুয়ারি তাদের দপ্তর রাওয়ালপিন্ডিতে স্থানান্তর করে। ২০ জানুয়ারি কমিশন ২০টি রাজনৈতিক দলের প্রধানের কাছে চিঠি দিয়ে তদন্ত বিষয়ে তাঁদের মতামত প্রদানের অনুরোধ করে।

১ ফেব্রুয়ারি থেকে কমিশন সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু করে। প্রথম দফায় তারা ২১৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে, যার মধ্যে সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান, চলতি প্রেসিডেন্ট জেড এ ভুট্টো, প্রতিটি বাহিনীর প্রধান, জ্যেষ্ঠ সামরিক অধিনায়ক এবং রাজনৈতিক নেতারাও ছিলেন। এসব সাক্ষ্যের ভিত্তিতে কমিশন ৮ জুলাই তাদের মূল প্রতিবেদন প্রেসিডেন্টের কাছে দাখিল করে। বাংলাদেশে আটক পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দীরা ভারত হয়ে ১৯৭৪ সালের প্রথম দিকে পাকিস্তানে ফিরে গেলে কমিশন দ্বিতীয় দফার তদন্ত শুরু করে। এ দফায় তারা লে. জেনারেল নিয়াজি ও বাংলাদেশে থাকা অন্যান্য ফরমেশন অধিনায়কসহ ৭২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে। কমিশন ১৯৭৪ সালের ২৩ অক্টোবর দ্বিতীয় দফার প্রতিবেদন বা সম্পূরক প্রতিবেদন জমা দেয়। দুই দফায়ই কমিশন মোট ১২ কপি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল।

জুলফিকার আলী ভুট্টোর হাতে কমিশনের প্রতিবেদন তুলে দিচ্ছেন হামুদুর রহমান, ১৯৭২

তিন বছর গত হওয়ার পর ১৯৭১ সালের যুদ্ধে পরাজিত পাকিস্তানের জনগণের ক্ষোভ বা সামরিক অফিসারদের অপমানবোধ অনেকটা থিতিয়ে যায়। উপরন্তু ১৯৭৪ সালে পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে এবং সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেয়। ফলে কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে পাকিস্তানে কারোরই বিশেষ কোনো আগ্রহ আর অবশিষ্ট থাকে না। তা ছাড়া ক্ষমতাসীনেরা বুঝতে পারে যে কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশ পেলে বাংলাদেশে করা তাদের অপরাধগুলো আবারও প্রকাশ্যে চলে আসবে। উপরন্তু শুধু সামরিক বাহিনীকে বলির পাঁঠা বানানোর বিষয়টি নতুন করে সামনে এলে সেনাবাহিনীতে ক্ষোভের সৃষ্টি হতে পারে। তাই সেনাবাহিনী নিজেও চায়নি যে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হোক। পাকিস্তানি গবেষক সুজা নাওয়াজ তাঁর বই ক্রশ সোর্ড-এ উল্লেখ করেন যে সম্ভবত সেনাবাহিনী তাদের ভাবমূর্তি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হোক তা রোধ করার জন্যই প্রতিবেদন প্রকাশে আগ্রহ দেখায়নি। স্বভাবতই কমিশনের প্রতিবেদন হিমাগারে চলে যায়। একপর্যায়ে জানা যায় যে প্রতিবেদনের কোনো কপিই আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ধারণা করা হয় যে তা ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে।

২০০০ সালে অনেকটা আকস্মিতভাবে জানা যায়, প্রতিবেদনের একটি কপি সশস্ত্র বাহিনীতে পাওয়া গেছে। তবে সংবেদনশীলতার কারণে তা গোপন রাখার চেষ্টা করা হয়। সেই বছরের আগস্ট মাসে ভারতীয় একটি পত্রিকা প্রতিবেদনটির অংশবিশেষ প্রকাশ করে। পরদিনই পাকিস্তানের একটি পত্রিকা সম্পূরক প্রতিবেদনের পুরোটা ছাপিয়ে দেয়। অতঃপর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পারফেজ মোশারফ একটা পরিষদ গঠনের মাধ্যমে পুরা প্রতিবেদনই (দু-একটা জায়গা ছাড়া) উন্মুক্ত করে দেন। কিছুদিনের মধ্যেই পাকিস্তানি প্রকাশনা সংস্থা ভ্যানগার্ড প্রতিবেদনটি বই আকারে বাজারজাত করে।

কমিশন ১৯৭১ সালের যুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয়ের জন্য সুস্পষ্টভাবে সশস্ত্র বাহিনীকে দায়ী করে। তারা বাংলাদেশে সংঘটিত নির্যাতন, নিষ্ঠুরতা, নিপীড়ন, গণহত্যা এবং সামরিক ব্যর্থতা ও প্রশাসনিক দুর্বলতার জন্যও সশস্ত্র বাহিনীকেই অভিযুক্ত করে। প্রতিবেদনে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের নিবর্তনমূলক কর্মকাণ্ডের অনেক গোপন নথি সংযুক্ত করেছে, যার সঙ্গে আমরা আগে পরিচিত ছিলাম না।

কমিশন মোটাদাগে সামরিক বাহিনীর বিচ্যুতি ও ব্যর্থতাগুলো তুলে ধরলেও বেসামরিক প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের বিষয়ে বিশেষ কিছুই উল্লেখ করেনি। প্রতিবেদন প্রকাশের পর অনেক পাকিস্তানি বিশেষ করে সামরিক কর্মকর্তারা প্রতিবেদনটি পক্ষপাতদুষ্ট বলে মত প্রকাশ করেন।

প্রতিবেদনে প্রেসিডেন্ট, সেনাপতিসহ বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তার দুর্নীতি ও নৈতিক স্খলন বিষয়ে অনেক তথ্য ও নথি যুক্ত করা হয়েছে। একজন প্রেসিডেন্ট কীভাবে দিনের পর দিন, এমনকি পরাজয়ের মুখোমুখি হয়েও প্রকাশ্যে সুরা ও সাকি নিয়ে মত্ত ছিলেন, তা কমিশন উন্মোচন করেছে।

প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত দ্য রিপোর্ট অব দ্য হামুদুর রহমান কমিশন অব ইনকোয়ারি ইনটু দ্য নাইন্টিন সেভেন্টি ওয়ান ওয়ার–এর প্রচ্ছদ

কমিশন ইয়াহিয়া খানসহ বেশ কিছু জ্যেষ্ঠ অধিনায়ককে সামরিক বিপর্যয় ও পরাজয়ের জন্য দায়ী করে শাস্তির সুপারিশ করে। কিন্তু তা কার্যকর না করায় মেজর জেনারেল শওকত রাজা তাঁর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন, ‘জেনারেল ইয়াহিয়ার খোলা আদালতে বিচার করার কথা ছিল। যদি তাঁর বিচার করা হতো, তাহলে হয়তো আমাদের শিলাভূত ভণ্ডামি থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারতাম। হয়তো আমরা পরিচ্ছন্ন মানুষ হিসেবে উঠে আসতে পারতাম। হয়তো আমরা আমাদের অতীতের সঙ্গে সৎ আচরণ করতে সক্ষম হতাম।’

১৯৭১ সালে যুদ্ধে অংশ নেওয়া অথবা যুক্ত থাকা বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তি যুদ্ধে তাঁদের পরাজয়ের কারণ নিয়ে বই রচনা করেছেন, আবার বেশ কিছু পাকিস্তানি গবেষকও এই যুদ্ধের রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পৃথক পৃথক অথবা সামষ্টিক অনেক বইপত্র প্রকাশ করেছেন। তবে সেগুলোয় লেখকের নিজস্ব ও জাতিগত দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাব থাকায় তা সব সময়ই প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। উপরন্তু তাঁরা গণহত্যা, রাজনৈতিক, সামরিক ব্যর্থতা ইত্যাদি বিষয়গুলো হালকা করে দেখানোর চেষ্টা করেছেন। হামুদুর রহমান কমিশনও এসব দোষে দুষ্ট হলেও একেবারেই এড়িয়ে যেতে পারেনি। তারা আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের দোষ-ত্রুটি ও অপরাধগুলো প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।

প্রকাশিত হওয়ার অনেক পরও বাংলাদেশে বইটি পাওয়া বেশ দুষ্কর ছিল। সম্প্রতি প্রথমা প্রকাশন দ্য রিপোর্ট অব দ্য হামুদুর রহমান কমিশন অব ইনকোয়ারি ইনটু দ্য ১৯৭১ ওয়ার (এজ ডিক্লাসিফাইড বাই দ্য গভর্নমেন্ট অব পাকিস্তান) শিরোনামে ভ্যানগার্ড প্রকাশিত হামুদুর রহমান কমিশনের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।

মুহাম্মদ লুৎফুল হক: গবেষক।