রাজধানী ঢাকা
রাজধানী ঢাকা

রাজউক আয়োজিত সেমিনার

৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্পে ধসে পড়বে ঢাকার ৪০% ভবন

দেশে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল ১৮৮৫ সালে। এই ভূমিকম্প হয়েছিল টাঙ্গাইলের মধুপুরের ভূগর্ভস্থ চ্যুতি বা ফাটল রেখায় (ফল্ট)। এরপর ১৩৯ বছর হতে চললেও এত বড় ভূমিকম্প ওই ফাটল রেখায় আর হয়নি। মধুপুরের ওই ফাটল রেখায় যদি রিখটার স্কেলে (ভূমিকম্পের মাত্রা পরিমাপক) এখন ৬ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্পও হয়, তাহলে ঢাকায় কমপক্ষে ৮ লাখ ৬৪ হাজার ভবন ধসে পড়বে, যা ঢাকার মোট ভবনের ৪০ শতাংশ।

ওই মাত্রার ভূমিকম্প দিনে হলে কমপক্ষে ২ লাখ ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু হবে। আর রাতে হলে কমপক্ষে ৩ লাখ ২০ হাজার মানুষ মারা যাবে।

‘আরবান রেজিলিয়েন্স প্রজেক্ট: রাজউক অংশ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। ৫৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। ২০১৫ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া এই প্রকল্প চলতি জুন মাসে শেষ হচ্ছে।

প্রকল্পের আওতায় ভূমিকম্প সহনশীল নগরায়ণ বিষয়ে দুই দিনের আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন করেছে রাজউক। এই সেমিনারের প্রথম দিনে গতকাল শনিবার রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে ভূমিকম্প হলে ঢাকার পরিণতি কী হবে, সে–সংক্রান্ত গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়।

সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল লতিফ হেলালী। তিনি রাজউকের ‘আরবান রেজিলিয়েন্স’ প্রকল্পেরও পরিচালক। তাঁর গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়, মধুপুর ও সিলেট ফাটল রেখায় ভূমিকম্প হলে ঢাকা ঝুঁকিতে পড়বে। তবে সিলেটের চেয়ে মধুপুর ফাটল রেখায় ভূমিকম্প হলে ঢাকায় ক্ষয়ক্ষতি বেশি হবে। এর মধ্যে মধুপুর ফাটল রেখায় ৬ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে ঢাকার ৪০ থেকে ৬৪ শতাংশ ভবন ধসে পড়বে। রাস্তাঘাট, সেতু, বিদ্যুৎ–লাইনসহ সব ধরনের অবকাঠামোগত ক্ষতি হবে।

অন্যদিকে সিলেট ফাটল রেখায় ৭ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকায় কমপক্ষে ১ দশমিক ৯১ শতাংশ (প্রায় ৪০ হাজার ভবন) ভবন ধসে পড়বে। দিনের বেলায় সিলেট ফাটল রেখায় ওই মাত্রার ভূমিকম্পে ঢাকায় কমপক্ষে ১৬ হাজার মানুষের মৃত্যু হবে। আর রাতে ওই মাত্রার ভূমিকম্প হলে কমপক্ষে ২৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হবে।

গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় ২১ লাখ ৪৭ হাজার ২১৯টি ভবন রয়েছে।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী। তিনি বলেন, ১২৫ থেকে ১৭৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়ে থাকে। সেই হিসাবে বাংলাদেশে বড় ভূমিকম্প হওয়ার সময় এসেছে। প্রতি মাসেই কয়েকটি মৃদু আকারের ভূমিকম্প হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

ভূমিকম্প সহনশীল নগরায়ণ

গতকাল সকালে অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। তিনি বলেন, ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলায় সমন্বিত কোনো জাতীয় নীতি নেই। যদিও একটি ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ শহর নির্মাণে এ ধরনের একটি সমন্বিত জাতীয় নীতি প্রণয়ন আবশ্যক। ভূমিকম্প সহনীয় স্থাপনা নির্মাণ এবং ভূমিকম্প সহনশীল নগরায়ণে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, রাজউকের কাছে অনেক আধুনিক যন্ত্রপাতি আছে। যার মাধ্যমে ভবন ঝুঁকিপূর্ণ কি না, তা নির্ণয় করা যায়। এই কাজগুলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব করতে হবে।

‘আরবান রেজিলিয়েন্স প্রজেক্ট’ প্রকল্পের দলনেতা অধ্যাপক মহসেন গাফরি অশতিয়ানি বলেন, বড় আকারের ভূমিকম্প হলে ঢাকার যে পরিস্থিতি তৈরি হবে, তা ভয়াবহ। সড়ক, সেতু, বিদ্যুৎ–লাইনসহ সব ধরনের অবকাঠামোর ক্ষতি হবে। তখন উদ্ধারকাজ করাই কঠিন হয়ে যাবে। তাই এখন থেকেই ক্ষয়ক্ষতি কমাতে কাজ করতে হবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নবীরুল ইসলাম, জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কিমিরো মেগুরো প্রমুখ। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন রাজউকের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. ছিদ্দিকুর রহমান সরকার।