‘কোথায় সে আয়নাঘর, দেখতে চাই’

ছাত্রদল নেতা মাহবুবুর রহমান ওরফে বাপ্পীর বোন ঝুমুর আক্তার
ছবি: প্রথম আলো

গুম হওয়া ব্যক্তিদের তুলে নিয়ে আটকে রাখার গোপন স্থান ‘আয়নাঘর’ দেখতে চান রাজধানীর লালবাগের ছাত্রদলের সাবেক নেতা মাহবুবুর রহমান ওরফে বাপ্পীর বোন ঝুমুর আক্তার। তিনি বলেছেন, ‘কোথায় সে আয়নাঘর? যেখানে মানুষকে ধরে আটকে রাখা হয়, নির্যাতন করা হয়। আমরা সে আয়নাঘর দেখতে চাই।’

আজ মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ‘গুম, খুন ও ক্রসফায়ারের শিকার’ পরিবারের সদস্যদের এক অনুষ্ঠানে ঝুমুর আক্তার এ কথা বলেন।

ঝুমুর আক্তার জানান, ২০১৫ সালে রুম হিটার বিস্ফোরণে তাঁর মেয়ে হ্যাপি, ভাই বাপ্পী, বোনের ছেলে লিপন আহত হয়। সবাইকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে পুলিশ তাঁকে থানায় নিয়ে যায়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয় তাঁকে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভাই বাপ্পীর যখন মৃত্যু হয়, তখনো তিনি পুলিশের হেফাজতে ছিলেন। পরে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। সেখানে প্রায় ছয় মাস ছিলেন তিনি।

প্রয়াত ভাই বাপ্পীর স্মৃতিচারণা করে ভবিষ্যতে বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রামে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন ঝুমুর আক্তার। তাঁর ভাই মাহবুবুর রহমান বাপ্পী নিউমার্কেট থানা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে লালবাগের ঢাকেশ্বরী সড়কের একটি বাড়িতে থাকতেন। সেখানে এক বিস্ফোরণে বাপ্পীর ডান হাত পুড়ে যায়।
পুলিশের দাবি, বোমা বানানোর সময় এ বিস্ফোরণ ঘটে। তবে ঝুমুর এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বোমার বিস্ফোরণে নয়, রুমের হিটার বিস্ফোরণে সবাই আহত হয়েছিলেন সেদিন।

অনুষ্ঠানে গত ৩১ জুলাই ভোলায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী আবদুর রহিমের স্ত্রী খাদিজা বেগম, ছাত্রদলের নুরে আলমের বড় ভাই আবুল কাশেম, গুলিতে আহত ইলিশা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম (সুমন), লিখন, সানাউল্লাহ ও মঞ্জুরুল আলম তাঁদের ওপরে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা–কর্মীদের নিপীড়ন-নির্যাতনের বর্ণনা দেন।

গুলিতে এক চোখের দৃষ্টি হারান ছাত্রদল নেতা নজরুল ইসলাম

বিদ্যুৎ ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে আনার দাবিতে ভোলা জেলা বিএনপির ডাকা বিক্ষোভ সমাবেশে সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে এক চোখের দৃষ্টি হারান ছাত্রদল নেতা নজরুল ইসলাম। দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেতে সবার কাছে দোয়া চান তিনি।

বাবা মো. সেলিমসহ গুলশানের কার্যালয়ে আসেন নজরুল ইসলাম। তাঁর বাবা ইলিশা ইউনিয়ন কৃষক দলের সভাপতি। তাঁর বিরুদ্ধে ৪০টি মামলা আছে। অপর দিকে নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা আছে ২০টি।

নজরুল জানান, ২০১৩ সালেও পুলিশ তাঁকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। এরপর দীর্ঘদিন পুলিশের হেফাজতে ছিলেন তিনি।

নিহত আবদুর রহিমের স্ত্রী খাদিজা বেগম জানান, মামলা চালাতে তাঁর স্বামী কিছুদিন আগে জমি বিক্রি করেন। কান্নাভেজা কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘চারটা মামলা দিছে, শেষে মাইরাই ফালাইছে।’ এখন চার সন্তান নিয়ে কীভাবে চলবেন, বিএনপির নেতাদের কাছে সে আকুতি জানান খাদিজা।

ভোলায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিতে ‘নিহত’ নুরে আলমের বড় ভাই আবুল কাশেম দলের জন্য ভাইয়ের আত্মত্যাগের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘নুরে আলম পিছপা হতে জানতেন না।’

অনুষ্ঠানে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ গণতন্ত্রের জন্য সংগঠনের নেতা-কর্মীদের জীবনদানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকে নুরে আলম হতে চাই। তবু আমরা বাংলাদেশকে মুক্ত করতে চাই।’

জাতীয়তাবাদী হেল্প সেল নামের একটি সংগঠন ‘পুলিশ ও র‍্যাব কর্তৃক গুম, খুন ও ক্রসফায়ারের শিকার’ পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহায়তা দিতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। যুবদলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মামুন হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভূঁইয়া, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের পারভেজ রেজা, হেল্প লাইনের প্রতিষ্ঠাতা সুমন আহসান, সদস্য মামুন খান বক্তব্য দেন।