নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম
নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম

নোয়াখালী জেলা আ.লীগের আহ্বায়কের সাক্ষাৎকার

আমি দিয়ে রাজনীতি হয় না, রাজনীতি হয় আমরা দিয়ে

নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছিল ২০১৯ সালের ২০ নভেম্বর। ওই সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হলেও পরবর্তীকালে কেন্দ্রে জমা দেওয়া প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে নানা বিতর্ক ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর কেন্দ্র থেকে একটি আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। ওই কমিটির নেতৃত্বেই আগামীকাল ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। সম্মেলনের নানা বিষয় নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: ২০১০ সালের এপ্রিল থেকে প্রথমে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, পরে সভাপতি এবং সবশেষ গেল ১৪ মাস ধরে আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। আপনার নেতৃত্বে এবারের সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে। এবারের সম্মেলনের বিশেষ দিক কী?

এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী: আওয়ামী লীগ ১৪ বছর ক্ষমতায়। এই সময় জেলার কোনো উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সম্মেলন হয়নি। জেলায় একবার সম্মেলন হলেও কমিটি অনুমোদিত হয়নি। যার কারণে আমাকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করে দেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। ওই কমিটি গঠনের পর সবার ধারণা ছিল একরামুল করিম চৌধুরীকে বাদ দেওয়ার কারণে এই কমিটি কিছুই করতে পারবে না। এ কারণে প্রথম তিন-চার মাস আমরা খুবই অসুবিধার মধ্যে ছিলাম। আমাদের কেউ বিশ্বাস করতে পারেননি। এই অবিশ্বাস কাটিয়ে উঠে আমরা যে অসাধ্য সাধন করেছি, সব উপজেলা ও ইউনিয়নে সম্মেলন করেছি, এটি সবচেয়ে বড় সফলতা এবং বিশেষ দিক।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: ২০১৯ সালের সম্মেলনে আপনি সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু ওই সম্মেলনের পর প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন নিয়ে নানা অভিযোগ ওঠে। শেষে ওই কমিটি বাতিল করে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী: আমাদের হাইকমান্ড হলেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা যে কমিটি গ্রহণ করেন না, সেটা কমিটি হতে পারে না। আমরা একটি কমিটি করেছিলাম। ওই কমিটি একক কর্তৃত্বে হয়েছে। আমাদের কারও কোনো মতামত নেওয়া হয়নি। এ জন্য আমাদের দুঃখ নেই। শেখ হাসিনা বুঝতে পেরেছেন আমাদের সমস্যা।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: গত ১৪ বছর দল ক্ষমতায় থাকার পরও জেলার প্রতিটি উপজেলায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা দুর্বল ছিল। উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটিগুলো হয়নি ঠিকমতো। সেটি এখন কোন পর্যায়ে রয়েছে বলে আপনি মনে করেন?

এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী: এখন আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্বে প্রতিটি উপজেলায় ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। নিজ দলে নৌকার প্রার্থীর বিরোধিতা, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দাঁড় করানোসহ নানা প্রতিকূলতার মধ্যে আমরা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ও পৌরসভা নির্বাচন এবং সর্বশেষ জেলা পরিষদ নির্বাচন করেছি। নির্বাচন নিয়ে অনেক দলাদলি হয়েছে। আমরা সামাল দিতে পেরেছি।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: আপনাদের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর জেলায় দলের রাজনীতিতে নতুন গতির সঞ্চার হয়েছে। সম্মেলনের পর এই গতি কতটুকু থাকবে বলে আপনি মনে করেন?

এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী: আগামী দিনে দলের গতি আরও বাড়বে। আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর যে অবিশ্বাস তৈরি হয়েছিল, সেটি আমাদের দুই যুগ্ম আহ্বায়কসহ অন্যদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় আমরা উতরে যেতে পেরেছি। দলকে ১৪ মাসে সুসংগঠিত করেছি। সুতরাং এখন আর দলকে পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: ইতিপূর্বে জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এক নেতার কর্তৃত্ব ছিল বলে অনেকে বলে থাকেন। নতুন কমিটি গঠনের পর আবার সেই কর্তৃত্ব ফিরবে বলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন। বিষয়টিকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী: সেটা আমি বলতে পারব না। এককভাবে কর্তৃত্ব দিয়ে রাজনীতি হয় না। রাজনীতি হয় আমরা দিয়ে। একক বা আমি দিয়ে রাজনীতি হয় না। রাজনীতিতে দশ মায়ের দশজন ছেলে এসে রাজনীতি করবে। কেউ যদি বলে আমার পোলাপান দিয়ে রাজনীতি করব, তাহলে সেটা কখনো সফল হতে পারে না।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: বছরখানেক পর পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ওই নির্বাচন সামনে রেখে জেলা আওয়ামী লীগের লক্ষ্য কী হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?

এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী: আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে, নেত্রী যেখানে যাকে মনোনয়ন দেন তাঁর পক্ষে আমরা কাজ করব। আমরা যেকোনো মূল্যে নোয়াখালীর ছয়টি আসন নেত্রীকে উপহার দিতে চাই।