ডেঙ্গুতে ঢাকার পর বরিশাল ও চট্টগ্রামে মৃত্যু বেশি 

চলতি বছর দেশে ডেঙ্গুতে ৭৯০ জনের মৃত্যু। এর মধ্যে বরিশাল বিভাগে মারা গেছেন ৭১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে মারা গেছেন ৬৯ জন।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী

ঢাকার পর ডেঙ্গুতে মৃত্যু বেশি হচ্ছে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে। গত সাড়ে আট মাসে ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ২৪৩ জন। এর মধ্যে বরিশাল বিভাগে মারা গেছেন ৭১ জন এবং চট্টগ্রাম বিভাগে মারা গেছেন ৬৯ জন। আর ঢাকা শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৫৪৭ জন।

ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ঢাকার বাইরে বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গুতে মৃত্যু বেশি হলেও এই বিভাগের ছয়টি জেলার মধ্যে শুধু ঝালকাঠিতে কোনো মৃত্যু হয়নি। অন্য পাঁচ জেলায় এখন পর্যন্ত ৭১ জনের মৃত্যু হয়েছে। বরিশাল বিভাগে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৮ হাজার ৭৭৮ জন।

এই বিভাগে সবচেয়ে বেশি রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এই হাসপাতালে এখন পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়েছেন ৪ হাজার ৩৪৫ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৪৬ জন।

বরিশাল বিভাগের পর সবচেয়ে বেশি রোগী মারা গেছেন চট্টগ্রাম বিভাগে। এই বিভাগের ১১ জেলায় এখন পর্যন্ত ২৩ হাজার ১১৩ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে মারা গেছেন ৬৯ জন। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এই হাসপাতালে এ পর্যন্ত ২ হাজার ২৯৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন আর মারা গেছেন ৪০ জন।

আট বিভাগের মধ্যে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগে। এই বিভাগের চার জেলায় এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৭৫। এর মধ্যে মারা গেছেন একজন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন আরও ১২ জন। একই সময়ে আরও ২ হাজার ১২৯ জন ডেঙ্গু রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুম ঢাকা শহরের এবং ঢাকা শহরের বাইরে ঢাকা বিভাগসহ আট বিভাগের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর তথ্য পৃথকভাবে দেয়। তাতে দেখা যাচ্ছে, এ পর্যন্ত ঢাকা শহরে আক্রান্ত হয়ে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭১ হাজার ৫০৩ জন। আর ঢাকার বাইরে দেশের বিভিন্ন জেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৯০ হাজার ৪৬১ জন। সব মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৬১ হাজার ৯৬৪।

ঢাকার বাইরে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হলেও মৃত্যু বেশি ঢাকার হাসপাতালগুলোতে। এ পর্যন্ত ঢাকায় মারা গেছেন ৫৪৭ জন, ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে মারা গেছেন ২৪৩ জন। সব মিলিয়ে চলতি বছর দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৭৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এ বছর ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হওয়ার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তা ৬৪ জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এখনো মৃত্যু হয়নি এমন জেলা ৩৬টি। এর মধ্যে রয়েছে গাজীপুর, গোপালগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, রাজবাড়ী, নেত্রকোনা, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বাগেরহাট, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর, জয়পুরহাট, পাবনা, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, ঝালকাঠি, সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার। অবশ্য এক জেলার ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিতে অন্য জেলায় গিয়ে মারা গেছেন, এমন নজিরও অনেক রয়েছে।