স্টলে বই নেড়েচেড়ে দেখছেন মেলায় আসা পাঠকেরা। গতকাল বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে
স্টলে বই নেড়েচেড়ে দেখছেন মেলায় আসা পাঠকেরা। গতকাল বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে

বাড়তি দিনে বইমেলায় বই কেনার সুযোগ

গতকাল মেলায় পরিবেশ ছিল বেশ ছিমছাম। কাজেই স্টলে-প্যাভিলিয়নে সাজানো বইয়ের সম্ভার থেকে পছন্দের বা দরকারি বইটি খুঁজে নেওয়ার সুবিধাজনক পরিবেশ ছিল।

ফেব্রুয়ারির বাড়তি দিনটি আজ বৃহস্পতিবার। চার বছর অন্তর পাওয়া যায় দিনটিকে। অমর একুশের বইমেলা আজ পেয়েছে তাকে। মেলায় শেষ দিনের যবনিকাপাত হয়ে যেত আজই। তবে অধিবর্ষের বাড়তি দিনের সঙ্গে আরও দুই দিন মেয়াদ বৃদ্ধির ফলে আজ নিয়ে বাড়তি তিন দিন বিচিত্র বইয়ের ব্যাপক সমারোহের এই মেলায় ঘটবে বিপুল জনসমাগম।

দৃষ্টিজয়ীর স্পর্শের বই

মেলায় প্রতিদিনই হরেক রকমের নতুন বই প্রকাশিত হচ্ছে। তবে সেসব থেকে ভিন্ন একধরনের বই নিয়ে এসেছে স্পর্শ ফাউন্ডেশন। শিশু থেকে পরিণত বয়স অবধি সব ধরনের পাঠকের জন্য তারা নিয়ে এসেছে স্পর্শ করে পড়ার বিশেষ ধরনের ব্রেইল বই। এসব বই ‘দৃষ্টিজয়ী’ পাঠকের জন্য। স্পর্শ ফাউন্ডেশন ‘দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী’ শব্দটি প্রয়োগ না করে ‘দৃষ্টিজয়ী’ শব্দটি ব্যবহার প্রচলন করতে চেষ্টা করছে। এ জন্য স্পর্শ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বাংলা একাডেমিকে আনুষ্ঠানিকভাবে লিখিত অনুরোধ করা হয়েছে বাংলা একাডেমির অভিধানে ‘দৃষ্টিজয়ী’ শব্দটি যোগ করার জন্য।

অন্ধযুগ ধর্মবীর ভারতী

গতকাল বুধবার বইমেলায় একাডেমি প্রাঙ্গণে স্পর্শ ফাউন্ডেশনের স্টলে কথা হলো ফাউন্ডেশনের সদস্য আরিফুর রহমান ও স্টলের তত্ত্বাবধায়ক নন্দিতা সাহার সঙ্গে। তাঁরাই এসব তথ্য জানালেন। তাঁরা আরও জানালেন, ২০১১ সাল থেকে স্পর্শ ফাউন্ডেশন নিয়মিতভাবে বইমেলায় অংশ নিচ্ছে এবং প্রতিবছরই দৃষ্টিজয়ীদের জন্য ব্রেইল বই প্রকাশ করছে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থী ও পাঠকদের উপযোগী তিন স্তরের বই প্রকাশ করে। এতে থাকে শিশুসাহিত্য, কালজয়ী সাহিত্য, ইতিহাস, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ভ্রমণকাহিনি থেকে রান্নার বই পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের বই। এবার মেলায় তারা নতুন ব্রেইল বই এনেছে ১৯টি। এই বইগুলো নিয়ে তাদের প্রকাশিত মোট ব্রেইল বইয়ের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫০। তাঁরা জানালেন, ব্রেইল বইগুলো বিক্রি করা হয় না। মেলায় দৃষ্টিজয়ী পাঠক বা তাঁদের অভিভাবকেরা এসে তাঁদের স্টলে নাম নিবন্ধন করেন। সেখানে তাঁদের ঠিকানা ও বিভিন্ন তথ্য থাকে। সেই তথ্য অনুসারে তাঁরা বয়সভিত্তিতে ছয় ও সাতটি বইয়ের একটি সেট করে দৃষ্টিজয়ীর ঠিকানায় বিনা মূল্যে পাঠিয়ে দেন।

নতুন বই

গতকাল মেলায় পরিবেশ ছিল বেশ ছিমছাম। যে বইটি পড়া হয়নি, পাঠকের জন্য সেই বইটিই নতুন। কাজেই স্টলে-প্যাভিলিয়নে সাজানো বইয়ের সম্ভার থেকে পছন্দের বা দরকারি বইটি খুঁজে নেওয়ার সুবিধাজনক পরিবেশ ছিল মেলায়। অনেকেই আসছেন তালিকা নিয়ে। প্রথমার স্টলে কথা হলো কমলাপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী অধ্যাপক বি এম ইউসুফ আলীর সঙ্গে। বললেন, পরপর দুই দিন তিনি মেলায় এলেন। গতকাল এসেছিলেন সস্ত্রীক। আর আগের দিনে সন্তানদের নিয়ে। ছড়া, রূপকথা, কমিকের বই কিনেছে ওরা। আর গতকাল তিনি প্রথমা থেকে কিনলেন সৈয়দ আবুল মকসুদের গবেষণাভিত্তিক বই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা এবং এবার মেলায় আসা আসিফ নজরুলের উপন্যাস আমি আবু বকর। প্রথমার তিনি নিয়মিত ক্রেতা বলে উল্লেখ করে জানালেন, এর একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো বইগুলো নির্ভুল থাকে। নিশ্চিন্তে কেনা যায়।

জীবনানন্দ জসীমউদ্‌দীন এবং বিশ্বজিৎ ঘোষ অনন্যা

প্রথমায় গতকাল বিরূপাক্ষ পালের বাংলাদেশের অর্থ খাত ও নীতি-অনীতির দ্বন্দ্ব, আলী রীয়াজ সম্পাদিত লুণ্ঠিত ভবিষ্যৎ: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকটের চালচিত্র, মুহাম্মদ লুৎফুল হকের বাঙালি পল্টন, বিশ্বজিৎ চৌধুরীর উপন্যাস অভিযুক্ত, জাভেদ হুসেনের উপন্যাস মির্জা গালিবের সঙ্গে দেখা বইগুলো ভালো চলেছে।

মেলার অন্য নতুন বইয়ের মধ্যে অনন্যা এনেছে বিশ্বজিৎ ঘোষের প্রবন্ধ জীবনানন্দ জসীমউদ্‌দীন এবং, ঐতিহ্য এনেছে সফিকুন্নবী সামাদী অনূদিত ধর্মবীর ভারতীর নাটক অন্ধযুগ, মাওলা ব্রাদার্স এনেছে সৌরভ সিকদারের ভ্রমণগল্প দেশের বন্ধু বৈদেশ গেলে, দিব্য এনেছে মো. মাহমুদ আলীর প্রত্নতত্ত্ববিষয়ক গবেষণা পূর্ববঙ্গের জমিদার বাড়ি, জার্নিম্যান এনেছে আবুল কাশেমের উপন্যাস শিকিবু, সময় এনেছে সুমী শারমীনের গবেষণামূলক পুত্রঅনার্য, এবং মানুষ এনেছে মনজু রহমানের কবিতাসমগ্র, পঙ্খীরাজ এনেছে ফারুক নওয়াজের ছড়ার বই ছড়ার বাড়ি তেপান্তর

তুলনামূলক সাহিত্য, মৃত্যুর মিথ বনাম বাস্তবতা

বইমেলায় মাওলা ব্রাদার্স এনেছে সুমন সাজ্জাদের তুলনামূলক সাহিত্য, মৃত্যুর মিথ বনাম বাস্তবতা। লেখক এই বইতে তুলনামূলক সাহিত্যের তত্ত্ব, ইতিহাস, পদ্ধতি ও প্রয়োগ–সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করেছেন। তুলে এনেছেন এর বেশ কিছু উদাহরণও। অনেক বিরল বই, পত্রিকা ও সাময়িকী থেকে সংগ্রহ করা অনেক তথ্য-উপাত্তের আলোকে বাংলা অঞ্চল ও উপমহাদেশের তুলনামূলক বিদ্যা ও সাহিত্যের ইতিহাস পুনর্গঠনের চেষ্টা করেছেন লেখক।

চাঁদের পাহাড় বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ব্রেইল প্রকাশনায় স্পর্শ ফাউন্ডেশন

সুমন সাজ্জাদ কবি, গদ্যকার ও অনুবাদক। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে শিক্ষা গ্রহণ শেষে এখানেই শিক্ষকতা করছেন। এইচএসবিসি-কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার পেয়েছেন ২০১১ সালে।

  • ঘরে বসে বইমেলার যেকোনো বই পেতে: ০১৭৩০০০০৬১৯