জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শামীম আহমেদ নামের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের অতিথিকক্ষে তোফাজ্জল নামের এক যুবককে চোর সন্দেহে আটকে রেখে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ক্ষোভ ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। মানবাধিকার সংগঠনটি আজ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এ প্রতিক্রিয়া জানায়। এমএসএফ বলেছে, এই দুই ঘটনা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের উদাহরণ।
বিবৃতিতে এমএসএফ জানায়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এ ধরনের ঘটনা আমাদের উদ্বিগ্ন করছে। এমএসএফ যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে ঘটনা দুটির বিষয়ে দ্রুততম সময়ের সঙ্গে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছে।’
সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে একদল শিক্ষার্থী শামীম মোল্লা নামের প্রাক্তন এক শিক্ষার্থীকে গত ১৫ জুলাই রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে আশুলিয়া থানা-পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। আহত শামীম মোল্লাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
অপর দিকে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল নামের এক ব্যক্তিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের অতিথিকক্ষে আটকে রেখে একদল শিক্ষার্থীর দ্বারা দফায় দফায় পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। ১৮ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ১২টার দিকে কয়েকজন শিক্ষার্থী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অনেকেই বিচারবহির্ভূত এই হত্যাকাণ্ডের বিচার ও দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের বিবৃতিতে বলা হয়, আইন অবজ্ঞা করে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা অবশ্যই ফৌজদারি অপরাধ, যা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হিসেবেই গণ্য করা হয়ে থাকে। গণপিটুনির ঘটনা সমাজের সাধারণ মানুষের মধ্যে একধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। যাঁরা নিজেকে ক্ষমতাবান মনে করছেন, তাঁরা তৎক্ষণাৎ তাঁদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে দেশের প্রচলিত আইন ও বিচারব্যবস্থার প্রতি কোনো আস্থা না রেখে এসব ঘটনা ঘটিয়ে চলেছেন।
এমএসএফ বলেছে, বর্তমানে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অনেকাংশে উন্নতি সাধিত হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথেষ্ট তৎপর রয়েছে। এর ফলে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সোপর্দ না করে হত্যার মতো ঘটনা ঘটিয়ে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
এমএসএফ বলেছে, বিচারে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগপর্যন্ত প্রতিটি ব্যক্তি নির্দোষ বলে প্রতীয়মান হওয়ার অধিকার রাখেন। তা ছাড়া প্রতিটি মানুষের আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার সংবিধানে স্পষ্টভাবে স্বীকৃত রয়েছে।