গুলিবিদ্ধ আরেক শিক্ষার্থীর মৃত্যু, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬২৬ জন

মো. ইমন
মো. ইমন

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হওয়া আরও একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। তাঁর নাম মো. ইমন। গতকাল রোববার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।

এ নিয়ে গত ১৬ জুলাই থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত গুলি, সংঘর্ষ ও সহিংসতায় কমপক্ষে ৬২৬ জনের মৃত্যু হলো। এর মধ্যে ১৬ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত নিহত হন কমপক্ষে ৩৫৪ জন। আর ৫ থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত নিহত হন কমপক্ষে ২৭২ জন।

ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতাল ও নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মৃত্যুর এই হিসাব পেয়েছে প্রথম আলো। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবি ও আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের এক দফার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিসহ বিভিন্ন ধরনের সহিংসতায় মৃত্যুর এসব ঘটনা ঘটেছে।

তবে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ১৬ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত বিক্ষোভ ও পরবর্তী সহিংসতায় কমপক্ষে ৬৫০ জন বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছেন। ‘বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বিক্ষোভ ও অস্থিরতা বিষয়ে প্রাথমিক বিশ্লেষণ’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদন ১৬ আগস্ট জেনেভা থেকে প্রকাশিত হয়।

শিক্ষার্থীর মৃত্যু

টাঙ্গাইলের কলেজছাত্র ইমন গুলিবিদ্ধ হন ৪ আগস্ট বিকেলে। সেদিন ঢাকা–টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুরের গোড়াই এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। তখন পেটে গুলিবিদ্ধ হন ইমন।

পরিবার জানায়, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ইমনকে প্রথমে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে ও পরে মির্জাপুরের কুমুদিনী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এই হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল ইমনকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁকে বাঁচানো যায়নি।

ইমনের বাড়ি টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার হেমনগর ইউনিয়নের নলিন উত্তর পাড়ায়। তাঁর বাবা প্রয়াত জুলহাস উদ্দিন।

ইমন টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার মনিরুজ্জামান খান বিএম কলেজ থেকে ২০২৩ সালে এইচএসসি পাস করেন। এরপর টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার হেমনগর ডিগ্রি কলেজে স্নাতকে (পাস কোর্স) ভর্তি হন।

ইমনের চাচাতো ভাই মো. নয়ন গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় ইমন তাঁর বাবাকে হারান। চার ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় ইমন। টিউশনি করে নিজের পড়ার খরচ চালাতেন তিনি।

ইমনের মতোই গুরুতর আহত আরেক শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রিয়াজ গত শনিবার বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। রিয়াজ বরিশালের মুলাদী সরকারি কলেজের স্নাতক (সম্মান) শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন।

গতকাল দুপুরে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ইমন ও রিয়াজের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অন্যদের মধ্যে অংশ নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ। এ ছাড়া গণ অধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হকসহ বিভিন্ন দলের নেতা–কর্মীরা জানাজায় অংশ নেন।