পুলিশ সদর দপ্তরসহ রাজধানী ঢাকার ১৩টি ও ঢাকার বাইরে ৭টি থানায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া সাতক্ষীরা ও শেরপুর জেলা কারাগারে হামলা হয়েছে। গতকাল সোমবার দিনভর এসব হামলার ঘটনা ঘটে। তবে এসব ঘটনায় কতজন হতাহত হয়েছেন ও কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
পুলিশ সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে আন্দোলনকারীরা পুলিশ সদর দপ্তরের প্রধান ফটক ভেঙে ঢুকে ভাঙচুর চালান। পুলিশ সদর দপ্তরের অনেক কর্মকর্তা এ সময় কার্যালয়ে আটকা পড়েন। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাঁরা পূর্ব দিকের দেয়াল টপকে নগর ভবনের ভেতরে চলে যান। পরে সেখান থেকে বের হয়ে যে যাঁর গন্তব্যে চলে যান।
পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, গতকাল রাতে রাজধানীর মিরপুর ও মোহাম্মদপুর থানায় আগুন দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। পল্লবী থানায় হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে। রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত উত্তরা পূর্ব থানা এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলেছে। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ভাটারা থানা ভবনে আগুন দেওয়া হয়েছে। বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, ওয়ারী ও রূপনগর থানায় হামলার খবর পাওয়া গেছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, গতকাল বিকেলের দিকে মিরপুর মডেল থানা ঘেরাও করেন বিক্ষোভকারীরা। থানা থেকে রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। রাতে মোহাম্মদপুর থানায় আগুন দেওয়া হয়েছে।
বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ভাটারা থানা ভবনে আগুন দেওয়া হয়েছে বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস।
পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল দুপুরের পর বিক্ষোভকারীরা যাত্রাবাড়ী থানায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন। একপর্যায়ে তাঁরা থানার ভেতরে ঢুকে পুলিশ সদস্যদের মারধর করেন। এতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য হতাহত হন। তবে যাত্রাবাড়ী থানায় হতাহতের সংখ্যা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি এডিসি।
পুলিশের একটি সূত্র বলছে, বাাড্ডা থানা ঘিরে রেখেছেন কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সেখানে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলছিল। বাড্ডা থানায় আটকা পড়েছেন পুলিশের অন্তত ৭০ সদস্য।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল বেলা ১১টার দিকে মেরুল বাড্ডা এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। তখন বাড্ডা থানা থেকে একদল পুলিশ সদস্য রাস্তায় এসে রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা দুইটার পর হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। মিছিলটি মেরুল বাড্ডা এলাকায় এলে পুলিশ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। শুরু হয় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটের আঘাতে অন্তত ১০ জন আহত হন। একপর্যায়ে বিকেল চারটার দিকে চারদিক থেকে বাড্ডা থানা ঘেরাও করেন বিক্ষোভকারীরা। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত থানা ঘেরাও করে রাখেন বিক্ষোভকারীরা। একপর্যায়ে মসজিদের মাইক থেকে পুলিশ সদস্যদের আত্মসমর্পণ করার অনুরোধ করেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। পুলিশ আত্মসমর্পণ করে গুলি করা বন্ধ করলে ছাত্র-জনতা রাস্তা থেকে সরে যাবেন। এরপরও গুলির শব্দ শোনা যায়। পরে রাত পৌনে আটটার দিকে সেনাবাহিনী বাড্ডা থানায় গিয়ে পুলিশ সদস্যদের উদ্ধারের চেষ্টা করেন। তবে উদ্ধার না করে তাঁরা ফিরে যান।
সন্ধ্যার দিকে বিক্ষোভকারীদের হামলার মুখে পল্টন থানার পুলিশ সদস্যরা পালিয়ে যান। পরে আন্দোলনকারীরা থানায় লুটপাট করে বলে পুলিশ জানায়। থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সেন্টু মিয়া প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। রাত সাড়ে নয়টার দিকে বিক্ষোভকারীরা মিরপুরের শাহ আলী থানায় ঢুকে আগুন দেন। সেখানে তাঁরা অস্ত্র লুটপাট করেন বলে পুলিশ দাবি করেছে।
খিলগাঁও থানায় সন্ধ্যার দিকে আন্দোলনকারীরা হামলা চালান। দুর্বৃত্তরা থানায় লুটপাট চালায়।
বিকেল পাঁচটার দিকে বিক্ষোভকারীরা আদাবর থানায় ভাঙচুর চালান। এ সময় পুলিশ অন্য একটি ভবনের ছাদে গিয়ে আশ্রয় নেয়।
প্রথম আলোর সংবাদদাতা, গাজীপুর জানান, উত্তরা পূর্ব থানার পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলছে। এ ছাড়া টঙ্গী পূর্ব থানা বিক্ষোভকারীরা ঘিরে রেখেছেন।
কুমিল্লার দাউদকান্দি মডেল থানা ও তিতাস থানা, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী ও চাটখিল থানা, বগুড়া সদর থানা, কিশোরগঞ্জের ভৈরব থানা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া রাজশাহী মহানগর পুলিশ সদর দপ্তরে ও নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইনসেও হামলা হয়েছে।
প্রথম আলোর সাতক্ষীরার নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে বিক্ষুব্ধ জনতা সাতক্ষীরা জেলা কারাগারে হামলা চালান। হামলাকারীরা জেলে গেট ও ভেতরের তালা ভেঙে অধিকাংশ আসামি ও কয়েদি বের করে নিয়ে যান। পাশাপাশি জিনিসপত্র লুটপাট করেন। তবে কতজন আসামি ও কয়েদি বের করে নিয়ে গেছেন, তা জানা যায়নি।
প্রতিনিধি, শেরপুর জানান, গতকাল বিকেলে জেলা কারাগারে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ভাঙচুর করে আগুন দিয়েছেন। কারাগারে থাকা সব বন্দী পালিয়ে গেছেন। কারাগারে থাকা অস্ত্র ও সামগ্রী লুটপাট করা হয়।