কখনো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব, কখনো দুদকের উপপরিচালক, আবার কখনো রাজউকের অথরাইজড অফিসার পরিচয় দিয়ে করতেন প্রতারণা। সেসব প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিকও হয়েছেন। থাকেন তিন কোটি টাকা মূল্যমানের বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে।
এসব প্রতারণার অভিযোগে করা দুটি মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত এই ব্যক্তির নাম মজিবুর রহমান। দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর গত শুক্রবার রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একজন ভুক্তভোগী প্রথমে মজিবুরকে আটকে রেখে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে ধানমন্ডি থানায় নিয়ে যায়।
ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পারভেজ ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মজিবুরের বিরুদ্ধে পল্টন ও চাঁদপুর থানার দুটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল। গ্রেপ্তারের পর তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে প্রতারণার অভিযোগে ২০২২ সালের ৩ মার্চ মজিবুরের বিরুদ্ধে ঢাকার ধানমন্ডি থানায় মামলা করেন মোস্তাফিজুর রহমান। সেই মামলায় গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর মজিবুরের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পিবিআই। তখন পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে, মজিবুর রহমান একজন পেশাদার অপরাধী। উপসচিব পরিচয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে ফ্ল্যাট বিক্রির নাম করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।
পিবিআইয়ের সেই তদন্তে জানা যায়, ছয় বছর আগে ঢাকার ধানমন্ডিতে তিন কোটি টাকা দামের একটি ফ্ল্যাট কেনেন মজিবুর রহমান। তখন তিনি নিজের পরিচয় দেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব। এই পরিচয়ে ফ্ল্যাট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকও হন তিনি। কিছুদিন পর মজিবুর জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তিনি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অথরাইজড অফিসার হিসেবে বদলি হয়েছেন। তখন মজিবুরের কাছে একটি প্লট কেনার বিষয়ে সহায়তা চান মোস্তাফিজুর রহমান নামের এক প্রতিবেশী। একপর্যায়ে প্লট বিক্রির নাম করে মোস্তাফিজুরের কাছ থেকে তিন কোটি সাত লাখ টাকা নেন মজিবুর। কিন্তু সেই প্লট নিবন্ধন করে দেননি। বিষয়টি নিয়ে চাপ দেওয়ায় উল্টো মোস্তাফিজুরের বিরুদ্ধে তিন কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে মামলা করেন তিনি।
পুলিশ জানায়, মজিবুর রহমান ১৯৯৮ সালে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেইনম্যান হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। সেখানে তিনি ১০ বছর কর্মরত ছিলেন। ২০০৮ সালে তাঁকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অফিস সহায়ক হিসেবে বদলি করা হয়। কিছুদিন পর সেখান থেকে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে বদলি করা হয়। ২০১৯ সালে তাঁকে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে বদলি করা হয়। তবে সেখানে তিনি যোগ না দিয়ে বদলির আদেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন। পরে তাঁকে বরিশাল উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে বদলি করা হয়। সেখানে যোগ দেওয়ার এক মাস পর থেকে তিনি কর্মস্থলে আর যাননি। পরে ২০২০ সালে কর্মস্থলে অনুপস্থিত, অসদাচরণ, অবহেলার কারণে তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়। তখন তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও হয়।