জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ শেষে প্রতিবাদ মিছিল বের করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতাকর্মীরা। ঢাকা, ২১ সেপ্টেম্বর
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ শেষে প্রতিবাদ মিছিল বের করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতাকর্মীরা। ঢাকা, ২১ সেপ্টেম্বর

প্রতিকার পেতে সংখ্যালঘুরা কোথায় যাবে, প্রশ্ন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া সাম্প্রদায়িক সহিংসতা এখনো চলমান বলে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। সংগঠনটি বলছে, সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। সংখ্যালঘুদের ওপর যেভাবে অত্যাচার–নির্যাতন হচ্ছে, তার প্রতিকারের জন্য তারা কোথায় যাবে, সেই প্রশ্ন তুলেছে ঐক্য পরিষদ।

আজ শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সমাবেশে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা এসব কথা বলেন। সারা দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনাবলি জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত এবং ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ওপর হামলার প্রতিবাদে তারা এই সমাবেশ করে। এ সময় ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্তের বিরুদ্ধে ‘হয়রানিমূলক মিথ্যা’ মামলা ও বিভিন্ন জেলার সংখ্যালঘু নেতাদের বিরুদ্ধে হওয়া ‘গায়েবি’ মামলা প্রত্যাহারের দাবিও জানানো হয়।

এই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি অধ্যাপক নিমচন্দ্র ভৌমিক। সারা দেশে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর ব্যাপক হামলা হচ্ছে উল্লেখ করে নিমচন্দ্র ভৌমিক বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে। তাহলে আজ পর্যন্ত কেন এর প্রতিকারে পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

সরকার আসে সরকার যায়; কিন্তু ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন–নিষ্পেষণ অব্যাহত থাকে বলে মন্তব্য করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি নির্মল রোজারিও। তিনি বলেন, ৪ আগস্ট থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত দেশে ২ হাজার ১০টি সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে।

এ ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানিয়ে নির্মল রোজারিও বলেন, যত দিন পর্যন্ত এই নির্যাতন–নিষ্পেষণ বন্ধ না হবে, তত দিন আন্দোলন চলবে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের সহিংসতা প্রসঙ্গে নির্মল রোজারিও বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর যদি এই নির্যাতন–নিষ্পেষণ অব্যাহত থাকে, তার জবাব দেওয়ার জন্য তাঁরা প্রস্তুত রয়েছেন। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যা যা করণীয়, তা এই সরকারকে নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

পটপরিবর্তনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে যে নির্মমতা নেমে এসেছে, যা কোনো দিন ভাবতেও পারেননি বলে মন্তব্য করেন ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ। তিনি বলেন, সরকার বিচারের জন্য অদ্যাবধি কোনোরকম নির্দেশনা দেয়নি।

মনীন্দ্র কুমার নাথের প্রশ্ন, যেভাবে অত্যাচার–নির্যাতন হচ্ছে, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুরা প্রতিকারের জন্য কোথায় যাবে?

সাম্প্রদায়িক সহিংসতা চালানো দুষ্কৃতকারীদের অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রঞ্জন কর্মকার বলেন, আজ পর্যন্ত এই সহিংসতা যারা চালিয়েছে, তাদের কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।

সমাবেশে ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ বসু ও যুববিষয়ক সহসম্পাদক বলরাম বাহাদুরের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয়, সাংগঠনিক সম্পাদক দীপংকর ঘোষ ও পদ্মাবতী দেবী, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি অতুল চন্দ্র মণ্ডল প্রমুখ। সমাবেশ শেষে ঐক্য পরিষদের একটি প্রতিবাদ মিছিল প্রেসক্লাবের সামনে থেকে শুরু হয়ে পুরানা পল্টন মোড় হয়ে প্রেসক্লাবে এসে শেষ হয়।