পদত্যাগ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। আজ শনিবার বেলা দেড়টার দিকে তিনি প্রথম আলোকে এ কথা বলেছেন। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, ‘আমি উনাকে (আইন উপদেষ্টা) জানিয়েছি নীতিগতভাবে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আজকের মধ্যে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে আশা করি।’
প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি আজ পদত্যাগ করতে পারেন বলে জানা গেছে।
প্রধান বিচারপতি অভিযোগ করে বলেন, 'বিচার বিভাগকে বাঁচানোর জন্য, কারণ সুপ্রিম কোর্ট আক্রমণ করার ঘোষণা দিয়েছে। সহকর্মী বিচারপতিরা আছেন তাঁদের আক্রমণ করার কথা এসেছে। ইতিমধ্যে প্রধান বিচারপতির বাসভবন আক্রমণ করে সব লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁদের (বিচারপতিদের) বাসা-ঘর আক্রান্ত হতে পারে, ইতিমধ্যে কিছু জজ কোর্ট বাইরে আক্রমণ হয়েছে। এসব বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'
আদালত সূত্রগুলো বলছে, প্রধান বিচারপতি এখন হেয়ার রোডে অবস্থিত বাসভবনে অবস্থান করছেন না। আজকে ছুটির দিন। আনুষ্ঠানিকতা সেরে আজই পদত্যাগপত্রটি বঙ্গভবনে পৌঁছাতে পারে।
প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ দাবিতে আজ দুপুর পৌনে ১২টা থেকে রাজধানীতে হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে কয়েক শ আন্দোলনকারী অবস্থান করেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক পোস্টে জানান, প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের সাতজন বিচারপতির পদত্যাগ দাবিতে এই অবস্থান কর্মসূচি চলছে।
ওই পোস্টে আসিফ মাহমুদ জানান, ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনা কর্তৃক নিয়োগকৃত প্রধান বিচারপতিসহ অ্যাপিলেড ডিভিশনের সাতজন বিচারপতির পদত্যাগ চাচ্ছি আমরা। জেলা জজকোর্টের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র অন্দোলনের সবার প্রতি আহ্বান, কোনো জেলায় জজকোর্টের দিকে অবস্থান নেবেন না।’
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবির বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল আজ দুপুরে সচিবালয়ে বলেন, ‘গণ-আন্দোলন থেকে পদত্যাগের দাবি উঠলে সেটিকে কতটুকু সম্মান প্রদর্শন করতে হয়, সেটা প্রধান বিচারপতি বুঝতে পারবেন বলে প্রত্যাশা থাকবে।’
পরে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ করার নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা জানা যায়। বেলা দুইটার দিকে সেনাবাহিনীর অনুরোধে হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে সরে যান আন্দোলনকারীরা।
আজ সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধান বিচারপতির নির্দেশনা অনুসারে, ফুল কোর্ট সভা ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সকাল সোয়া ১০টার ফুল কোর্ট সভা বন্ধ করা হয়েছে বলে জানানো হয়।
ফুল কোর্ট সভা নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া তাঁর ফেসবুক পেজে সকালে স্ট্যাটাস দেন। তিনি বিনা শর্তে প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগ করতে ও ফুল কোর্ট মিটিং বন্ধ করার দাবি জানান স্ট্যাটাসে।
কোটা সংস্কার নিয়ে গত ৪ জুলাই প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, হাইকোর্টের দেওয়া রায় নিয়ে আপিল বিভাগের শুনানিতে বক্তব্য দেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘এত আন্দোলন কিসের রাস্তায় শুরু হয়েছে? আন্দোলনের চাপ দিয়ে কি হাইকোর্টের রায়, সুপ্রিম কোর্টের রায় পরিবর্তন করবেন?’