সভার আয়োজন করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট ফর গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট।
সত্য প্রকাশে দ্বিধাহীন ছিলেন আকবর আলি খান। তাঁর লেখা ছিল বস্তুনিষ্ঠ, প্রমাণসাপেক্ষ ও যুক্তিনির্ভর। তিনি অনেকটাই প্রচারবিমুখ ছিলেন, তবে আকবর আলি খানের লেখালেখি তাঁর পক্ষে কথা বলেছে। আমৃত্যু তিনি গণতন্ত্র ও সুশাসনের জন্য কাজ করে গেছেন। নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারের বিষয়টি তাঁর লেখায় বারবার উঠে এসেছে।
আকবর আলি খানের স্মরণসভায় যুক্ত হয়ে তাঁর সাবেক সহকর্মী ও গুণীজনেরা এ মূল্যায়ন করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ‘আকবর আলি খানের উত্তরাধিকার: ডায়নামিকস অব স্টেটক্রাফট, গভর্ন্যান্স রিফর্ম অ্যান্ড পাবলিক ইন্টেলেকচুয়ালিজম ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ ভার্চ্যুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার আয়োজন করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট ফর গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি)।
আচার-ব্যবহারে নম্রভাষী আকবর আলি খানের নিরপেক্ষ লেখা তাঁকে জনবুদ্ধিজীবীর উচ্চ স্থানে নিয়ে গেছেরেহমান সোবহান, চেয়ারম্যান, সিপিডি
সভায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান বলেন, আকবর আলি খান জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে লেখালেখি করেছেন। তাঁর লেখার ভিন্ন রকম গুরুত্ব রয়েছে। সুশাসন ও গণতন্ত্র নিয়ে তিনি কাজ করেছেন। আচার-ব্যবহারে নম্রভাষী আকবর আলি খানের নিরপেক্ষ লেখা তাঁকে জনবুদ্ধিজীবীর উচ্চ স্থানে নিয়ে গেছে।
সরকারি আমলা হিসেবেও আকবর আলি খান ব্যতিক্রম ছিলেন বলে মন্তব্য করেন রেহমান সোবহান। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হয়েছিলেন, কিন্তু দায়িত্ব পালনে প্রতিবন্ধকতার মুখে পদত্যাগ করেন। চেতনার সঙ্গে না যাওয়াতেই তিনি পদত্যাগ করেছিলেন। তিনি সব সময় সমস্যার উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন।
আকবর আলি খান মনেপ্রাণে একজন গবেষক ছিলেন বলে মনে করেন বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সিপিডির সম্মানিত ফেলো রওনক জাহান। তিনি বলেন, তাঁর বইগুলোর প্রতিটি অধ্যায় তথ্য ও পরিসংখ্যানের উপস্থিতি বেশি থাকত। দেশের গণতন্ত্র বিরাট ঝুঁকির মুখে। আকবর আলি খান গণতান্ত্রিকতাকে সবার ওপরে রাখতেন। নির্বাচনী ব্যবস্থায় সবার ঐকমত্য গড়ে তোলাকে গুরুত্ব দিয়েছেন।
আকবর আলি খানের লেখা অবাক বাংলাদেশ: বিচিত্র ছলনাজালে রাজনীতি বইটির বিষয়ে আলোচনা করেন রওনক জাহান। তিনি বলেন, আকবর আলি সব সময় সংস্কারের পক্ষে ছিলেন। নানা ধরনের সমাধানের উপায় বলতেন। তিনি চাইতেন বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা ও বিতর্ক হোক। তৃণমূলের গণতন্ত্রকে আলাদা গুরুত্ব দিতেন।
সভা সঞ্চালনা করেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। তিনি বলেন, আকবর আলি খান বিশ্লেষণধর্মী লেখা লিখেছেন। সহকর্মীদের জন্য তিনি ছিলেন গুরু, শিক্ষক। প্রশাসকের অন্যতম কাজ অন্যের মধ্যে জ্ঞানের সঞ্চার করা, যা আকবর আলি খান সার্থকভাবে করে গেছেন। সরকারের আমলা হয়েও তিনি ছিলেন স্পষ্টবাদী। আগামী দিনে আকবর আলির পরিচয় পেতে গেলে তাঁর বইগুলোর মধ্যেই তাঁকে খুঁজতে হবে।
সভার শুরুতে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন বিআইজিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো মির্জা এম হাসান। তিনি বলেন, নৈতিক সাহসের জোরেই সত্য তুলে ধরতে পেরেছেন আকবর আলি খান। রাষ্ট্র, অর্থনীতি, আইনের শাসন, রাজনীতি ও সমাজ, ইতিহাস, সাহিত্যিক বিশ্লেষণ—আকবর আলি খানের সাহিত্যভান্ডার ছিল বিস্তৃত।
বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সাবেক প্রধান বেসরকারি খাত বিশেষজ্ঞ সৈয়দ আকতার মাহমুদ বলেন, আকবর আলি খানের উপস্থাপনার নিজস্ব ধরন ছিল, লেখায় থাকত সূক্ষ্ম কৌতুকবোধ। তিনি শুধু তিরস্কার ও সমালোচনা করেননি, উত্তরণের পথও বাতলে দিয়েছেন। বর্তমানে দেশে উদ্যোক্তার যে স্ফুরণ দেখা যাচ্ছে, আকবর আলি খান এ বিষয়ে আগেই লিখে গেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আসিফ মোহাম্মদ শাহান বলেন, দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো কতটা সুচারুরূপে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে পারছে, এ বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন আকবর আলি খান। আমলাতন্ত্রের পেশাদারি বাড়াতে কী করা যেতে পারে, সে বিষয়ে নানা পরামর্শ ও সুপারিশ করেছেন। তিনি একাধারে ছিলেন পেশাজীবী ও শিক্ষাবিদ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, লেখক, চিন্তক আকবর আলি খান গত ৮ সেপ্টেম্বর মারা যান।