পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের প্রশ্নবিদ্ধ ডক্টর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ডিবিএ) ডিগ্রির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তথ্য সংগ্রহের পর প্রয়োজন অনুযায়ী তথ্যানুসন্ধান বা তদন্ত কমিটি গঠন করা হতে পারে।
গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা–সংক্রান্ত অন্যতম ফোরাম বোর্ড অব অ্যাডভান্সড স্টাডিজের সভা হয়। সেখানে বেনজীরের ডিবিএ ডিগ্রি নেওয়ার প্রসঙ্গটি ওঠে।
সভার আলোচনার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মুখপাত্র সায়মা হক প্রথম আলোকে বলেন, বোর্ড অব অ্যাডভান্সড স্টাডিজের সভায় জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, পুরো প্রক্রিয়াটি (বেনজীরের ডিগ্রি নেওয়া) কীভাবে করা হয়েছে? একজন সদস্য সভায় প্রশ্ন করলে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করার কথা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ওই সিদ্ধান্ত ও সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো কোন বডি থেকে, কোন সভায়, কীভাবে হয়েছে, কী কী ধরনের বিষয় আছে, সেই তথ্যগুলো বের করে পরে আলোচনা করা হবে।
সায়মা হক আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে (বেনজীরের ডিগ্রি) তাৎক্ষণিকভাবে কোনো তথ্যানুসন্ধান বা তদন্ত কমিটি করা হয়নি। বিষয়গুলো দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নেব, বোর্ড অব অ্যাডভান্সড স্টাডিজের সভাতেই কোনো কমিটি করা হবে, নাকি এটা আলাদাভাবে করা হবে।’
গত ১৪ জুন ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির যোগ্যতাই ছিল না, তবু ডক্টরেট ডিগ্রি পান বেনজীর’ শিরোনামে প্রথম আলোর এক বিশেষ প্রতিবেদনে তাঁর বিতর্কিত ডক্টরেট-কাণ্ড উঠে আসে। বিষয়টি ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। ২৬ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিনেটের বার্ষিক অধিবেশনে শর্ত শিথিল করে দেওয়া বেনজীরের এ ডিগ্রি বাতিল করার দাবি ওঠে। তবে তখন এ বিষয়ে কিছু করা হয়নি।
প্রথম আলোর ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বেনজীর আহমেদ ২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডক্টর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ডিবিএ) প্রোগ্রাম থেকে ডিগ্রি নেন। এর পর থেকে নামের আগে ডক্টর শব্দটির ব্যবহার শুরু করেন তিনি। যদিও এই ডিগ্রিকে ডক্টরেট ডিগ্রি বলা যায় কি না, প্রশ্ন রয়েছে।
ডিবিএ প্রোগ্রামে ভর্তির যোগ্যতাও বেনজীর আহমেদের ছিল না বলে প্রতিবেদনে উঠে আসে। এতে আরও বলা হয়, ২০১৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে বোর্ড অব অ্যাডভান্সড স্টাডিজের সভায় ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে বেনজীর আহমেদের ডিবিএ প্রোগ্রামে নিবন্ধনের অনুমতির সুপারিশ করা হয়। শর্ত শিথিল করে বেনজীরকে ভর্তি হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।
ওই প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হয় এবং শিক্ষাজীবনের সব পাবলিক পরীক্ষায় কমপক্ষে ৫০ শতাংশ নম্বর পেতে হয়। বেনজীরের তা ছিল না। তাঁর ভর্তির ক্ষেত্রে মৌলিক শর্তগুলো শিথিল করা হয়েছিল ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের তৎকালীন ডিন শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সুপারিশে। বেনজীরের ‘ডক্টরেট’ প্রোগ্রামের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন তিনি।