ভোটে অনিয়ম তদন্তে ৬৮৫ জনের বক্তব্য নেবে তদন্ত কমিটি

ঢাকার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবন থেকে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে ভোটকেন্দ্র সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা হয়। এতে বুথকক্ষে বিশৃঙ্খলার চিত্র ধরা পড়ে
ছবি: সংগৃহীত

বন্ধ হয়ে যাওয়া গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে অনিয়মের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটি নির্বাচনসংশ্লিষ্ট অন্তত ৬৮৫ জনের বক্তব্য নেবে। এসব ব্যক্তির মধ্যে রয়েছেন নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, পোলিং এজেন্ট ও গণমাধ্যমকর্মী। আজ মঙ্গলবার থেকে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে তাঁদের বক্তব্য নেবে কমিটি।

১২ অক্টোবর গাইবান্ধা–৫ আসনে উপনির্বাচনে অনিয়মের কারণে ভোট গ্রহণের মাঝপথে পুরো নির্বাচন বন্ধ করে দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ওই নির্বাচনের সব কটি ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছিল। কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচন ভবন থেকে ভোটকেন্দ্রগুলো পর্যবেক্ষণ করেছিল ইসি। ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের কারণে ৫১টি কেন্দ্র বন্ধ করার পর একপর্যায়ে পুরো নির্বাচনই বাতিল করে দেয় ইসি।

অনিয়মের ঘটনা খতিয়ে দেখতে ইসি সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ইসি। কমিটিকে অনেকগুলো বিষয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে। সেগুলো হলো পোলিং এজেন্ট বা ভোটার ছাড়া অন্যান্য ব্যক্তিদের গোপন কক্ষে প্রবেশ, গোপন কক্ষে ভোটদান দেখা, ভোটারদের কোনো প্রার্থীকে ভোটদানে বাধ্য করা বা প্রভাবিত করা, মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে গোপন কক্ষের ছবি ধারণ ইত্যাদির বিষয়ে প্রকৃত ঘটনা উদ্‌ঘাটন ও দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা।

দলীয় প্রতীক বা একই রঙের পোশাক পরে পোলিং এজেন্টদের দায়িত্ব পালন, কোনো ক্ষেত্রে গোপন কক্ষে প্রবেশ, উল্লিখিত পোশাক উপঢৌকন বা অর্থের বিনিময়ে নেওয়া কি না—এসবের রহস্য উদ্ঘাটন ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা।

পোলিং এজেন্ট বা অবৈধ কোনো ব্যক্তি গোপন কক্ষে প্রবেশ করে ভোট দেওয়া, ভোটার কোন প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছেন, তা গোপন কক্ষে উঁকি দিয়ে বা ঢুকে দেখা, ভোট প্রদানে বাধা, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা ভোটকক্ষে ঢুকে নিজেই ভোট দেওয়া বা ভোটারকে প্রভাবিত করা অথবা পোলিং এজেন্ট নয়, এ ধরনের ব্যক্তি ভোটদানে ভোটারকে প্রভাবিত করার বিষয়ে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা।

নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের বিষয়ে সব পদক্ষেপ নেওয়ার পরেও এ ধরনের ঘটনা কেন ঘটল, কারা দায়ী, তা চিহ্নিত করা। এসব বিষয়সহ প্রাসঙ্গিক অন্য কোনো বিষয় থাকলে তা পর্যালোচনা করে সুপারিশ করবে কমিটি। প্রতিবেদন দিতে কমিটিকে সাত দিনের সময় দেওয়া হয়।

ইসি সূত্র জানায়, আগামীকাল মঙ্গলবার গাইবান্ধা সার্কিট হাউসে ১১ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ৬৬ জন সহাকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ৫৫ জন পোলিং এজেন্ট, ফুলছড়ি প্রেসক্লাবের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, গাইবান্ধা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ ১৩৬ জনের বক্তব্য নেবে তদন্ত কমিটি।

পরদিন বুধবার সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সভাকক্ষে বক্তব্য দেওয়ার জন্য বিভিন্ন পর্যায়ের ৫২২ জন কর্মকর্তাকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার প্রতিদ্বন্দ্বী পাঁচ প্রার্থী, রিটার্নিং কর্মকর্তা, পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসকসহ ২৭ জনের বক্তব্য নেবে তদন্ত কমিটি। তাঁদের লিখিত বক্তব্যসহ উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আবারও সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিবালয়ের সাবেক সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন ইসি। আগামী বুধবার বেলা ১১টায় নির্বাচন ভবনে এই মতবিনিময়ের আয়োজন করা হয়েছে। ইসি সূত্র জানায়, মূলত সাবেকদের পরামর্শ নিতে এই মতবিনিময়ের আয়োজন করা হয়েছে। এখানে সুনির্দিষ্ট আলোচ্যসূচি রাখা হয়নি।

এর আগে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অংশীজনদের সঙ্গে এক দফা সংলাপ করে ইসি। এরই অংশ হিসেবে গত জুনে সাবেক সিইসি ও নির্বাচন কশিমনাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিল বর্তমান কমিশন।