চট্টগ্রামে ‘গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ দেখিয়ে আ. লীগের সাবেক মন্ত্রী, এমপিদের প্লট বরাদ্দ

প্লট বরাদ্দ প্রবিধানমালা লঙ্ঘন

  • কারও প্লট থাকলে নতুন প্লট বরাদ্দ দেওয়ার নিয়ম নেই।

  • সংরক্ষিত প্লটের চেয়ে বেশি প্লট দেওয়া হয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।

আওয়ামী লীগ আমলে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের জন্য বিতর্কিত ছিলেন চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী। বিরুদ্ধ মত দমন, ‘রাউজান স্টাইল’ নির্বাচনে পছন্দের বাইরে অন্য কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না দেওয়াসহ নানা কাজে সমালোচিত ছিলেন তিনি। তারপরও তাঁকে ‘গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ দেখিয়ে বিশেষ বিবেচনায় প্লট বরাদ্দ দিয়েছিল চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।

চট্টগ্রাম শহরে পারিবারিক জায়গাজমি থাকলে প্লট বরাদ্দ দেওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু শহরের পাথরঘাটায় পৈতৃক বাড়ি থাকা সত্ত্বেও ২০১৩ সালে ফজলে করিম চৌধুরীকে অনন্যা আবাসিক এলাকায় প্লট দেওয়া হয়। তখন তিনি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন। সিডিএ এই মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি প্রতিষ্ঠান।

শুধু ফজলে করিম চৌধুরী নন, আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী–সংসদ সদস্য, দলীয় নেতা, আওয়ামীপন্থী পেশাজীবী, সাংবাদিকসহ আরও ৫৮ জনকে ‘গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ দেখিয়ে বিশেষ বিবেচনায় ২০১৩ সালে প্লট দিয়েছিল সিডিএ।

শহরে বাড়ি-জায়গা থাকার পরও প্লট পেয়েছেন সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সিডিএর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

সিডিএর প্লট বরাদ্দ প্রবিধানমালা অনুযায়ী, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় বা সিডিএর আবাসিক প্রকল্পে কোনো আবেদনকারী বা তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে আবাসিক প্লট থাকলে বা অতীতে সিডিএ থেকে প্লটের কোনো ইজারা দেওয়া হলে তাঁকে প্লট বরাদ্দ দেওয়ার নিয়ম নেই। এ ক্ষেত্রে এটা মানা হয়নি।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে নিয়ম ভেঙে বিজ্ঞপ্তি ছাড়া মোট ১৫৫টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, দলীয় নেতা, সিডিএর বোর্ড সদস্য, আওয়ামীপন্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা, ব্যবসায়ীসহ পেশাজীবীদের বিশেষ বিবেচনায় প্লট দেওয়া হয়। আবার নিয়ম লঙ্ঘন করে সংরক্ষিত প্লটের চেয়ে বেশি প্লট দেওয়া হয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।

চট্টগ্রাম নগরের অনন্যা আবাসিক ও কল্পলোক আবাসিক এলাকায় ২০০৯, ২০১৩ ও ২০১৮ সালে তিন দফায় প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাবেক সাত মন্ত্রী ও আট সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের অন্তত ১৫ নেতা, ১১ সাংবাদিক, সিডিএর বোর্ড সদস্য ১০ এবং সিডিএর ৬২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী প্লট পেয়েছেন। ৪৩টি প্লট পান আওয়ামীপন্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাবিদ ও ব্যবসায়ীরা।

প্লট বরাদ্দের আগে চারটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে বলে সিডিএর প্রবিধানমালায় উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। শুধু তা–ই নয়, বাজারদরের চেয়ে তিন থেকে ছয় গুণ কম দামে আবাসিক এলাকার মূল্যবান জায়গা পান প্রভাবশালীরা। আবাসিক এলাকায় কাঠাপ্রতি জায়গার দাম ছিল ২৫-৩০ লাখ টাকা। আর ‘গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’দের প্লট দেওয়া হয় মাত্র ছয় লাখ টাকা করে।

গত ১৫ বছরে সিডিএতে চারজন চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করেন। তাঁদের তিনজনকে নিয়োগ দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। টানা ১০ বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালামের আমলে ১৫৫টি প্লটের মধ্যে ১২৮টি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। গত বছরের ৭ জানুয়ারির পাতানো নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ছালাম। সরকার পতনের পর আত্মগোপনে চলে যান। মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

১৫২ প্লটই অনন্যা প্রকল্পের

সিডিএ সূত্র জানায়, নিয়ম ভেঙে দেওয়া ১৫২টি প্লটই অনন্যা আবাসিক প্রকল্পের। ২০০৫ সালে তৎকালীন বিএনপি–জামায়াত জোট সরকার নগরের চান্দগাঁও ও কুয়াইশের ১৬৯ একর জায়গার ওপর ৩৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প নিয়েছিল। এ প্রকল্পে মোট প্লট ছিল ১ হাজার ৭২৫টি। এর মধ্যে ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় লটারির মাধ্যমে ১ হাজার ৪৬০টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। বাকি ২৬৫টি প্লটের মধ্যে ১৫২টি বরাদ্দ দেওয়া হয় লটারি বা কোনো ধরনের বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই। বাকি প্লটগুলো ক্ষতিগ্রস্ত ভূমিমালিকদের বরাদ্দ দেওয়া হয়।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে সিডিএর তৎকালীন চেয়ারম্যান শাহ মুহাম্মদ আখতার উদ্দিন বিজ্ঞপ্তি ছাড়া ২৭টি প্লট বরাদ্দ দেন। এসব প্লট পান আওয়ামী লীগ নেতা, আওয়ামী ঘরানার শিক্ষাবিদ, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক ও ব্যবসায়ীরা। নীতিমালা পরিপন্থী হওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২০১৪ সালে প্লটগুলো বাতিল করে সিডিএ। তবে আদালতের রায়ের ভিত্তিতে ১৪ জন প্লট ফিরে পেয়েছিলেন। বাকিদের মামলা বিচারাধীন।

এরপর আবদুচ ছালাম চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় অনন্যা আবাসিকের সড়ক ও জলাধারের নকশা পরিবর্তন করে ২০১৩ সালে একসঙ্গে ১২১টি প্লট বরাদ্দ দেন বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই। এসব প্লট পেয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, দলীয় নেতা, আওয়ামী ঘরানার পেশাজীবী এবং সিডিএর বোর্ড সদস্য ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

এরপর আবদুচ ছালাম ২০১৮ সালে অনন্যায় আরও চারটি এবং আরেক আবাসিক প্রকল্প কল্পলোকে তিনটি প্লট বরাদ্দ দেন বিজ্ঞপ্তি ছাড়া।

২০০৬ সালে বিএনপি–জামায়াত জোট সরকারের সময় নগরের শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়কের পাশে বাকলিয়া এলাকায় ৯০ একর জায়গার ওপর ২৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে কল্পলোক আবাসিক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। ২০০৭ সালে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ১ হাজার ৩৫৬টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। পরে সিডিএ চেয়ারম্যানের থাকার সময় আবদুচ ছালাম নকশা পরিবর্তন করে তিনটি প্লট দিয়েছিলেন।

প্লট বরাদ্দে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে অন্তর্বর্তী সরকারের সময় সিডিএ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়া প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, সিডিএতে আগে অনেক ধরনের অনিয়ম হয়েছে। বিনা বিজ্ঞপ্তিতে এবং বিধি ভেঙে দেড় শ প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে তাঁর কাছে অভিযোগ এসেছে। এগুলো নিয়ে কী ধরনের আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

শহরে জমি থাকা সত্ত্বেও প্লট বরাদ্দ

২০১৩ সালের ৯ অক্টোবর সিডিএর ৪০৫তম বোর্ড সভায় অনন্যা আবাসিক এলাকায় ১২১টি প্লট বরাদ্দের সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে ৫৯ জন ছিলেন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগ নেতা, বোর্ড সদস্য, সাংবাদিক, সরকারি কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ লোকজন। বাকি ৬২ জন ছিলেন সিডিএর কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাঁদের ৩ থেকে ৫ কাঠা করে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়।

২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬ আসনের ১১টিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থীরা জয় পান। তাঁদের সবাইকে ৪০৫তম বোর্ড সভায় প্লট দেওয়া হয়েছিল। চট্টগ্রাম শহরে পৈতৃক ও নিজের নামে জায়গা–বাড়ি থাকার পরও আবেদন করেই প্লট পেয়েছিলেন হাছান মাহমুদ, মোশাররফ হোসেন, এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, আফছারুল আমীন, সামশুল হক চৌধুরী, এম এ লতিফ, নুরুল ইসলাম ও সাইফুজ্জামান চৌধুরী। একই সময়ে প্লট পান এ বি এম আবুল কাশেম, দিলীপ বড়ুয়া, মইনউদ্দীন খান বাদল, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, চেমন আরা তৈয়ব, বীর বাহাদুর উশৈসিং ও দীপংকর তালুকদার।

সরকার পতনের পর মোশাররফ হোসেন, এম এ লতিফ ও এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী গ্রেপ্তার হয়েছেন। মারা গেছেন আফছারুল আমীন। অন্যরা আত্মগোপনে থাকায় পৈতৃক ও নিজের সম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও প্লট নেওয়ার বিষয়ে তাঁদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

‘গুরুত্বপূর্ণ’ বিবেচনায় বিশেষ বরাদ্দ

২০১৩ সালে অনন্যা আবাসিক প্লট পাওয়া ১০ জন ছাড়া বাকি ৪৯ জনের চট্টগ্রাম শহরে জায়গা কিংবা জমি ছিল না। তাঁদের বরাদ্দ দেওয়া হয় বিশেষ কোটায়। অথচ ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অনুমোদিত অনন্যা আবাসিক প্রকল্পের প্লট বরাদ্দ নীতিমালায় এ ধরনের ক্যাটাগরি বা কোটা রাখা হয়নি।

মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ছাড়াও বিশেষ বিবেচনায় প্লট পান তৎকালীন বোর্ড সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও এ এইচ এম বাহাউদ্দিন খালেক শাহজী, বোর্ড সদস্য রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম মাহবুব-উল-আলম, সিডিএর তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন মাহমুদ চৌধুরী ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন।

বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত মোহাম্মদ হাসান ওয়ার্ড কাউন্সিলর থাকার সময় সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধি হিসেবে বোর্ড সদস্য ছিলেন। ২০১৩ সালে তিনিও প্লট পান।

২০১৮ সালেও সিডিএর পাঁচ সদস্য বিশেষ বিবেচনায় প্লট বরাদ্দ পান। তাঁরা হলেন সিডিএর ওই সময়ের বোর্ড সদস্য ও চট্টগ্রাম নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কে বি এম শাহজাহান, জসীম উদ্দীন শাহ, আ ম ম টিপু সুলতান চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান মুরাদের স্ত্রী জাহেদা বেগম, মো. জসিম উদ্দিন ও সোহেল মোহাম্মদ শাকুর। ২০১৮ সালের আগস্টে তাঁদের ৫ কাঠা করে প্লট বরাদ্দের সিদ্ধান্ত হয়।

তিন দফায় সাংবাদিকদের ১১ জনকে ১০টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ২০০৯ সালে প্লট পান জিয়াউদ্দিন এম এনায়েতউল্লাহ ও মোয়াজ্জেমুল হকের ছেলে হাসান জিয়াদ। ২০১৩ সালে প্লট দেওয়া হয়েছিল আবু সুফিয়ান, একরামুল হক, আলী আব্বাস ও মহসীন কাজী (যৌথভাবে), এস এম ইফতেখারুল ইসলাম, সন্তোষ শর্মা ও অঞ্জন রায়কে। আর ২০১৮ সালে প্লট পেয়েছিলেন হামিদ উল্লাহ ও সেতু বড়ুয়া।

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে প্লট পেয়েছিলেন এম আবদুল ওহাব ও এ এইচ এম বাহাউদ্দিন খালেক শাহজী। ২০০৯ সালে শিক্ষাবিদ হিসেবে প্লট দেওয়া হয়েছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য প্রয়াত আবু ইউসুফকে।

হাসিনার সেই পিয়নের স্ত্রীও প্লট পান

গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে বিশেষ বিবেচনায় ২০১৩ সালে প্লট পেয়েছেন শেখ হাসিনার পিয়ন জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী কামরুন নাহারও। গত জুলাই মাসে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের বাসার সাবেক এক কর্মীর অর্থসম্পদের বিষয়টি সামনে এনেছিলেন। সেই ব্যক্তিটি ছিলেন জাহাঙ্গীর। সেদিন শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘আমার বাসায় কাজ করেছে, পিয়ন ছিল সে, এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না। বাস্তব কথা। কী করে বানাল এত টাকা? জানতে পেরেছি, পরেই ব্যবস্থা নিয়েছি।’

প্লট পেয়েছিলেন শেখ হাসিনার আত্মীয় ও যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর ছেলে ইশতিয়াক আহমেদ চৌধুরীও।

কর্মকর্তা-কর্মচারীর ক্ষেত্রেও মানা হয়নি নীতিমালা

সিডিএর অনন্যা আবাসিক প্রকল্পের প্লট বরাদ্দ নীতিমালা অনুযায়ী, ২ শতাংশ প্লট বরাদ্দ রাখা হয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য। অনন্যা আবাসিকে মোট প্লট ১ হাজার ৭২৫টি। সেই হিসাবে অনন্যায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্লট হয় ৩৫টি। কিন্তু বরাদ্দ দেওয়া হয় ৬২টি। এর মধ্যে তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম তাঁর ‘পছন্দের’ পাঁচ কর্মচারীকে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে প্লট দেন। তাঁরা শ্রমিক লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

কাঠা কোটি টাকা, দেওয়া হয় ১৫ লাখ টাকায়

নগরের কল্পলোক আবাসিক এলাকায় কাঠাপ্রতি জায়গার দাম প্রায় কোটি টাকা। সিডিএর বোর্ড সদস্য স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কে বি এম শাহজাহানের প্লটের দাম রাখা হয়েছিল কাঠাপ্রতি ১৫ লাখ টাকা।

অনন্যা আবাসিক এলাকায় ক্ষমতাসীনদের প্লট দেওয়া হয়েছিল কাঠাপ্রতি ৬ লাখ টাকা করে। তখন বাজারদর ছিল ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী প্রথম আলোকে জানান, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বিবেচনায় প্লট নিয়ে মূলত নিয়ম ভেঙে সবাই মিলেমিশে রাষ্ট্র ও জনগণের সম্পদ লুটপাট করেছেন। এটি অনেক বড় অন্যায়। সিডিএর তৎকালীন চেয়ারম্যানসহ প্লট বরাদ্দের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা ও বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা উচিত।