ঈদযাত্রায় দুর্ঘটনা নিয়ে আজ রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে যাত্রী কল্যাণ সমিতি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে
ঈদযাত্রায় দুর্ঘটনা নিয়ে আজ রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে যাত্রী কল্যাণ সমিতি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে

ঈদযাত্রায় ৩৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন প্রাণ হারিয়েছে: যাত্রী কল্যাণ সমিতি

এবারের ঈদযাত্রায় ৩৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এই যাত্রায় ১ হাজার ৩৯৮ জন আহত হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে মোটরসাইকেলে। ঈদে ১৯৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৬৫ জন নিহত, ২৪০ জন আহত হয়েছেন। যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার প্রায় অর্ধেক এবং নিহতের ৪০ শতাংশের বেশি।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। আজ শনিবার সকালে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক এক সংবাদ সম্মেলনে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। প্রতিবেদনটিতে ঈদযাত্রা শুরুর দিন ৪ এপ্রিল থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত ১৫ দিনের দুর্ঘটনার তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের সদস্যরা জাতীয় ও আঞ্চলিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের পাশাপাশি জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের (পঙ্গু হাসপাতাল) দেওয়া সড়ক দুঘটনার তথ্য বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সড়কের পাশাপাশি রেলপথে ১৮টি দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত, ২১ জন আহত হয়েছেন। নৌপথে দুটি দুর্ঘটনায় ৭ জন নিহত, ৫ জন আহত। সড়ক, রেল ও নৌপথে সর্বমোট ৪১৯টি দুর্ঘটনায় জন ৪৩৮ নিহত ও ১ হাজার ৪২৪ জন আহত হয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিগত ২০২৩ সালের ঈদুল ফিতরে ৩০৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৮ জন নিহত ও ৫৬৫ জন আহত হয়েছিলেন। বিগত বছরের সঙ্গে তুলনা করলে এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা ৩১ শতাংশ, প্রাণহানি ২৪ এবং আহত প্রায় দেড়শ গুণ বেড়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ঈদে লম্বা ছুটি থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০ শতাংশ মানুষের বেশি যাতায়াত হয়েছে। তবে সরকারের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে থাকলেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও পথে পথে যাত্রী হয়রানি চরমে উঠেছিল। গণপরিবহনগুলোতে ঈদকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যর কারণে বাসের ছাদে, ট্রেনের ছাদে, খোলা ট্রাকে, পণ্যবাহী পরিবহনে যাত্রী হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দরিদ্র লোকজনকে ঈদে বাড়ি যেতে হয়েছে।

দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণ করতে গিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৩২ শতাংশের বেশি হয় জাতীয় মহাসড়কে। এর পাশাপাশি ১০ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ৫০ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়।

প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেলের অবাধ চলাচল। জাতীয় মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কবাতি না থাকায় হঠাৎ ঈদে যাতায়াতকারী ব্যক্তিগত যানের চালকদের রাতে এসব জাতীয় সড়কে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চালানোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। জাতীয়, আঞ্চলিক ও ফিডার রোডে টার্নিং চিহ্ন না থাকার ফলে নতুন চালকেরা এসব সড়কে দুর্ঘটনায় শিকার হয়েছেন।

দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সমিতি এক গুচ্ছ সুপারিশ করে। এর মধ্যে আছে, জরুরি ভিত্তিতে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধ করা, জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে রাতের বেলায় অবাধে চলাচলের জন্য আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা। এ ছাড়া দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ, যানবাহনের ডিজিটাল পদ্ধতিতে ফিটনেস দেওয়ারও পরামর্শ দেয় তারা। ধীরগতির যান ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করার সুপারিশ আসে আজকের প্রতিবেদনে। এর পাশাপাশি সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা সুনিশ্চিত করারও সুপারিশ করা হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুন্নেছা খান, গণপরিবহনবিশেষজ্ঞ আবদুল হক, সংগঠনের সহসভাপতি তাওহীদুল হক, যুগ্ম মহাসচিব মনিরুল হক, প্রচার সম্পাদক মাহমুদুল হাসান, মো. মহসিন প্রমুখ।