প্রথম আলোর অনলাইনের একটি প্রতিবেদন ফেসবুকে শেয়ারের সময় ‘গ্রাফিক কার্ডে’ উদ্ধৃতি ও ছবির অমিল ভুল-বোঝাবুঝি সৃষ্টি করতে পারত। প্রথম আলোর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা বুঝতে পেরে দ্রুত সেই কার্ড প্রত্যাহার এবং এ বিষয়ে অনলাইনের প্রতিবেদনে সংশোধনী প্রকাশ করেছিল। বলা বাহুল্য, ছবি প্রকাশের আগে প্রথম আলোর আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।
তবে পরের সম্পূর্ণ ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিলকে তাল করার একটা অভাবনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রথম আলোর প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকে সাভারের বাসা থেকে তুলে নেয়। মন্ত্রীরা একের পর এক বিবৃতি দিলেন। প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান ও প্রতিবেদক শামসুজ্জামানের নামে মামলাও হয়েছে। এসব ঘটনা ঘটল ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিযোগ তুলে।
ফৌজদারি আইন প্রয়োগ করে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার এমন কথিত অপরাধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগ করে শাস্তি দেওয়াটা সম্পূর্ণভাবে মধ্যযুগীয় আইন ও বিচারব্যবস্থার প্রতিফলন। বিশ্বের গণতান্ত্রিক কোনো দেশে ‘ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন’ নামীয় কোনো অপরাধ নেই। আফগানিস্তান, ইরান, সৌদি আরব, রুয়ান্ডাসহ ভীষণভাবে গণতন্ত্রহীন এবং প্রচণ্ডভাবে কর্তৃত্ববাদী সরকার আছে—এমন দেশে এ ধরনের অভিযোগ এনে নাগরিকদের ওপর নিপীড়ন চালানো হয়।
এসব ঘটনাপ্রবাহ আন্তর্জাতিক মহলে প্রচণ্ড নিন্দা ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক সংগঠন একে নিপীড়ন বলে উল্লেখ করে বিবৃতিও দিচ্ছে। এ ঘটনার মাধ্যমে সরকার আবার সার্থকভাবে প্রমাণ করল, দেশে বাক্স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং জবাবদিহি কতটা সংকুচিত! এ ঘটনার মধ্য দিয়ে সরকারের কর্তৃত্ববাদী মনোভাবের প্রতিফলন ঘটেছে।
আশা করছি, এ ধরনের নিপীড়নমূলক পরিস্থিতি থেকে দেশ শিগগিরই মুক্তি পাবে। তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন যত দিন থাকবে, তত দিন এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে না; গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও বাক্স্বাধীনতার পরিস্থিতিও থাকবে না। কারণ, এই আইনে মধ্যযুগীয় বিচারব্যবস্থার একটা প্রতিফলন আছে। এ কারণেই উদ্ভট ও অযৌক্তিক এই আইন বাতিল করা উচিত।
শাহদীন মালিক: সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী