দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) সর্বাত্মক সহায়তা করতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি অনুরোধ করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এ বিষয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়সহ সরকারি দপ্তরকে কিছু করণীয় পালন করতে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
গতকাল বুধবার এক চিঠিতে এই অনুরোধ করা হয়। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর জ্যেষ্ঠ সচিব ও সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, আনসার ও ভিডিপি এবং র্যাবের মহাপরিচালক, বিভাগীয় কমিশনার, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, সব পুলিশ কমিশনার, সব জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে এই পত্র পাঠানো হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটেও সেটা প্রকাশ করা হয়েছে। পৃথক আরেক চিঠিতে নির্বাচনী দায়িত্ব সততা, নিষ্ঠা ও নিরপেক্ষতা্র সঙ্গে যথাযথ পালনের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
একটি চিঠিতে বলা হয়, আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পাদন করা সবার জাতীয় দায়িত্ব। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সবার সহযোগিতা চেয়েছে।
বিভিন্ন অফিস ও প্রতিষ্ঠান থেকে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, পোলিং কর্মকর্তা নিয়োগের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করা হয় চিঠিতে। এতে বলা হয়, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করার জন্য সংশ্লিষ্ট সব সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নির্বাচন কর্মকর্তাদের শৃঙ্খলা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্বাচনী কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন রয়েছে। এতে কোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারী নির্বাচন সংক্রান্ত কাজে দায়িত্ব পেলে তিনি তার ওই নিয়োগের তারিখ থেকে নির্বাচনী দায়িত্ব অব্যাহতি না পাওয়া পর্যন্ত তাঁর চাকরির অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে প্রেষণে চাকরিরত আছে বলে গণ্য হবে। আর প্রেষণে চাকরিরত থাকাকালে নির্বাচন সংক্রান্ত দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন এবং ক্ষেত্র মতে রিটার্নিং কর্মকর্তার নিয়ন্ত্রণে থাকবেন এবং তিনি তার যাবতীয় আইনানুগ আদেশ বা নির্দেশ পালনে বাধ্য থাকবেন। প্রেষণে চাকরিরত থাকাকালে নির্বাচন সংক্রান্ত দায়িত্ব প্রাধান্য পাবে। এই অবস্থায় সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের যেকোনো নির্দেশ জরুরি ভিত্তিতে পালন করার নিশ্চয়তা বিধান করা প্রয়োজন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আদেশে আরও বলা হয়, দেশের সংবিধান এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুসারে নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করা সরকারের নির্বাহী কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট সবার আবশ্যিক পালনীয় দায়িত্ব। এ ছাড়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী নির্বাচনী সময়সূচি জারি হওয়ার পর থেকে ফলাফল ঘোষণার ১৫ দিন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের অনুমতি ছাড়া সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে ( বিভাগীয় কমিশনার, মহানগর পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার বা বিভাগ, জেলা ও মহানগর এলাকায় কর্মরত তাদের অধস্তন) অন্যত্র বদলি করা যাবে না।
এ অবস্থায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করার লক্ষ্যে তিন ধরনের ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এগুলো হলো এক. আসন্ন নির্বাচন অনুষ্ঠানের কাজে অর্পিত দায়িত্ব আইন ও বিধি অনুযায়ী নিরপেক্ষভাবে পালন করে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা ও সহযোগিতা করতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং অধিদপ্তর ও সংস্থা থেকে অধীনস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবিলম্বে নির্দেশ দিতে হবে। দুই. শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি, সরকারি অনুদান পাওয়া ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকদের প্রতি একই ধরনের নির্দেশ জারি করতে হবে। তিন. নির্বাচন পরিচালনার কাজ অব্যাহত রাখার নিশ্চয়তা বিধানের জন্য সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ তথা সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অফিস বা প্রতিষ্ঠানকে তাদের যেসব কর্মকর্তা ও কর্মচারী নির্বাচনের কাজে জড়িত আছেন, নির্বাচনের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের ছুটি বা অন্যত্র বদলি করা অথবা নির্বাচনী দায়িত্ব ব্যাহত হতে পারে এমন কোনো দায়িত্ব দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
এদিকে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরেপক্ষভাবে করার জন্য নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন,১৯৯১ এর বিধান অনুসরণের বিষয়ে আরেকটি চিঠি দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এতে বলা হয়, নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো দায়িত্ব পালনে অনীহা, অসহযোগিতা, শৈথিল্য, ভুল তথ্য প্রদান ইত্যাতির জন্য অসদাচরণের অভিযোগে সংশ্লিষ্ট নি্র্বাচন কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করা যাবে এবং শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট আইনের বিধান সম্পর্কে সজাগ থেকে অর্পিত নির্বাচনী দায়িত্ব সততা, নিষ্ঠা ও নিরপেক্ষতা্র সঙ্গে যথাযথ পালনের জন্য অনুরোধ করা হয়।