পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি

বিদেশি অংশীদারদের সঙ্গে সরকার ইতিবাচকভাবে যুক্ত থাকতে আগ্রহী

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাত ও সহিংসতার প্রেক্ষাপটে একটি স্বার্থান্বেষী মহল নজিরবিহীন যে ধ্বংসলীলা চালিয়েছে, তা মোকাবিলায় সরকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করে যাবে। এরই অংশ হিসেবে একটি শান্তিপূর্ণ, ন্যায়সংগত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের প্রয়াসে সরকার আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে যুক্ত থাকতে আগ্রহী। যাতে সমাজে কণ্ঠস্বর প্রতিফলিত হবে এবং নিরাপদ পরিবেশে তাদের সম্ভাবনার বিকাশ ঘটবে।

রোববার রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রচারিত এক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সহিংসতা এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঘটনায় নাগরিক সমাজের সংগঠন এবং গণমাধ্যমসহ কিছু আন্তর্জাতিক অংশীদারদের উদ্বেগ প্রকাশের বিষয়টি সরকার লক্ষ করেছে। বিশেষ করে অপপ্রচার, ভুল তথ্য এবং বিভ্রান্তির ব্যাপক প্রচারের প্রেক্ষাপটে অকুণ্ঠ সমর্থন ও পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্যক ধারণার জন্য সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে কৃতজ্ঞ। সরকার সব আন্তর্জাতিক অংশীদারদের আশ্বস্ত করতে চায় যে সরকার এবং জনগণের সময়োপযোগী এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের কারণে সামগ্রিকভাবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে শুরু করেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, সরকার যখন বিয়োগান্ত প্রাণহানি, হতাহত এবং সরকারি সম্পত্তির ক্ষতির মূল্যায়ন করছে, তখন সাম্প্রতিক সহিংসতা এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে মানবিক ক্ষতি কতটা, সেটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ওই ক্ষয়ক্ষতির বিচার নিশ্চিত করার জন্য স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস নিহতদের পরিবারের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন পর্যবেক্ষণ করছেন এবং নিহতদের পরিবারের সদস্যদের জীবিকার সুযোগেরও আশ্বাস দিয়েছেন। সরকার ভুক্তভোগী এবং তাদের পরিবারের দ্বারা ভুক্তভোগী ট্রমা মোকাবিলার প্রয়োজনীয়তার প্রতি সংবেদনশীল রয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এটি এখন স্পষ্ট যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতৃত্বে একটি মহল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের একটি অংশের পরিচালিত শান্তিপূর্ণ কোটা সংস্কার আন্দোলনে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য এবং মারপিটের রাজত্বের বিস্তার ঘটিয়েছে। তারা কিছু সহিংস চরমপন্থী গোষ্ঠীর সমর্থন নিয়ে জনজীবনকে ব্যাহত করে এবং অর্থনীতিকে স্থবির করে দিয়ে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতের চক্রান্তের পুনরাবৃত্তির স্বার্থে ছাত্রদের আন্দোলনের দখল নিয়েছিল। স্বার্থান্বেষী ওই মহল একইভাবে এখন স্থানীয়ভাবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার আইনানুগ ব্যবস্থা এবং প্রতিক্রিয়াগুলোকে ‘ছাত্র বিক্ষোভের বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউন’ হিসেবে উপস্থাপন করতে তার বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত ছাত্রনেতারা বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখার প্রকাশ্যে ঘোষণা দিলেও এ ধরনের বিকৃত উপস্থাপন ভিত্তি পেয়েছে।

সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ইস্যুভিত্তিক ছাত্র আন্দোলনকে পরবর্তী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে এক না করার অনুরোধ জানায়। কারণ, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় সশস্ত্র বাহিনীকে আইনসংগতভাবে মোতায়েন এবং মানুষের জীবন বাঁচাতে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে কারফিউ আরোপের প্রয়োজন হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুল তথ্য ও অপপ্রচারের ক্রমাগত প্রচারের পটভূমিতে, সরকার নিম্নলিখিত বিষয়গুলোতে

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়:

এক. অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শান্তিপূর্ণ ও ইস্যুভিত্তিক ছাত্র আন্দোলনকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াতের সংঘটিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করার কোনো সুযোগ নেই।

দুই. দায়ীদের সংশ্লিষ্টতা যেটাই হোক না কেন নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে সবগুলো হত্যাকাণ্ড এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিচার করে তাদের বিচারের আওতায় আনার বিষয়টি সরকার পুনর্ব্যক্ত করছে।

তিন. সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পরে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য নিয়োজিত নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক দেখামাত্র গুলির একটিও ঘটনা ঘটেনি।

চার. আইন প্রয়োগের অভিযানের সময় হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেনি। মূলত নজরদারি, নির্দিষ্ট স্থানে আটকে পড়া আইন প্রয়োগকারী কর্মীদের উদ্ধার এবং জরুরি অবস্থার সময় অগ্নিনির্বাপণ যানবাহন চলাচলের সুবিধার জন্য হেলিকপ্টার ব্যবহার হয়েছে।

পাঁচ. একটি সাঁজোয়া যান সাবধানতাবশত মোতায়েন করার পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। সেটিতে জাতিসংঘের লোগো ঢেকে দেওয়ার জন্য রঙের ব্যবহার হলেও তা দৃশ্যমান ছিল। যদিও প্রশ্নবিদ্ধ যানটি দ্রুত সেবা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।

ছয়. ব্রডব্যান্ড এবং মোবাইল ইন্টারনেট–সংযোগ এখন পুরোপুরি চালু হয়েছে। অস্থিরতা ও সহিংসতার পুরো সময়কালে ভূমিভিত্তিক এবং মোবাইল টেলিযোগাযোগসহ যোগাযোগের অন্যান্য মাধ্যমগুলো কার্যকর ছিল।

সাত. কারফিউ চলার সময় অন্যান্য জরুরি পরিষেবা প্রদানকারীদের সঙ্গে প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কর্মীরা ছাড়ের অনুমতিসহ সর্বদা কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। সরকার যেকোনো মূল্যে জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের অধিকারকে সমুন্নত রেখেছে এবং তা অব্যাহত রাখবে।