জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ৭ দিনের আদালত বর্জন কর্মসূচির পক্ষে সভা ও বিপক্ষে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। সভায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে আদালত বর্জন করতে আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। আর সংবাদ সম্মেলনে আদালত বর্জনের কর্মসূচিকে অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত বলে উল্লেখ করা হয়।
বিএনপি ও সমমনা আইনজীবীরা রোববার সমিতির দক্ষিণ হলে ‘গণতন্ত্র ও আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বিচারের নামে অবিচার বন্ধের দাবিতে ১-৭ জানুয়ারি পর্যন্ত সকল আদালত বর্জন: আইনজীবীবৃন্দ-সুপ্রিম কোর্ট বার’ ব্যানার নিয়ে সভা করে। আর ‘আইন অঙ্গনে নৈরাজ্য সৃষ্টির অপপ্রয়াসের বিরুদ্ধে’ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি এবং ‘বিএনপি-জামায়াত কর্তৃক আদালত বর্জনের ঘোষণার প্রতিবাদে’ বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ রোববার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সমিতির সম্পাদক মো. আবদুন নূর বলেন, নির্বাচন প্রতিহত করার নামে একটি রাজনৈতিক দলের আইনজীবী ফোরাম ১ থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত আদালত বর্জনের যে ডাক দিয়েছে, তা অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত। এমন কর্মসূচি দেওয়ার কোনো এখতিয়ার আইনজীবী ফোরামের নেই। এমন আহ্বান গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের পরিপন্থী এবং বিচার কার্যক্রমে সরাসরি হস্তক্ষেপ।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি এ অপপ্রয়াসের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। পাশাপাশি দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করছে যে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ, হাইকোর্ট বিভাগ ও অধস্তন আদালতগুলো ১ থেকে জানুয়ারি ৭ এবং তৎপরবর্তী সময়ে যথারীতি খোলা থাকবে।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির ছাড়াও সমিতির সাবেক সভাপতি ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন, সাবেক সম্পাদক এস এম মুনীর ও বশির আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
আইনজীবী সমিতির সংবাদ সম্মেলনের পরপরই বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এ সময় পরিষদের আহ্বায়ক ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন বলেন, ‘এটি বিচারাঙ্গন, মনে রাখতে হবে। এই অঙ্গনের পবিত্রতা রক্ষা করতে হবে। তাই কোনো অবস্থায় আইনজীবীদের কোনো সংগঠনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে এবং কোনো অবস্থাতেই এখানে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে দেব না।’
এর আগে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দক্ষিণ হলে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য দেন বিএনপিপন্থী ও সমমনা আইনজীবীদের মোর্চা ইউনাইটেড ল ইয়ার্স ফ্রন্টের (ইউএলএফ) আহ্বায়ক জয়নুল আবেদীন। তিনি আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের অনুরোধ করব, আগামী ১ থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবেন। এই কর্মসূচি স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন করবেন, এই আহ্বান রাখছি। কোনো অবস্থাতেই আদালতে আমরা কেউ যাব না, আজকের দিনে এই শপথ নিয়ে বক্তব্য শেষ করছি।’
সভায় ইউএলএফের প্রধান সমন্বয়ক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব কায়সার কামাল বলেন, ‘জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের পরামর্শক্রমে ১ থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত আদালত বর্জনের যে কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে, সেই কর্মসূচিতে আমরা দলমত-নির্বিশেষে সবাই সক্রিয় অংশগ্রহণ করব।’
ইউএলএফের সুপ্রিম কোর্ট শাখার সভাপতি শাহ আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে ফ্রন্টের সহ-আহ্বায়ক সুব্রত চৌধুরী, সমন্বয়ক সৈয়দ মামুন মাহবুব ও গাজী কামরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
১ থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশব্যাপী আদালত বর্জনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন জামায়াতপন্থী আইনজীবীরাও। রোববার বেলা দুইটার দিকে সমিতির দক্ষিণ হলে এক সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামী-সমর্থিত বাংলাদেশ ল ইয়ার্স কাউন্সিল এ ঘোষণা দেয়।
অন্যান্যের মধ্যে এ সময় ল ইয়ার্স কাউন্সিলের সভাপতি জসিম উদ্দিন সরকার, সহসভাপতি গোলাম রহমান ভূঁইয়া, যুগ্ম সম্পাদক এস এম কামাল উদ্দিন ও আবদুর রাজ্জাক উপস্থিত ছিলেন।