চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে তাবাসসুমকে নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে ওই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রাব্বুল হোসেনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে বিসিএস নারী কর্মকর্তাদের সংগঠন বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্ক।
সংগঠনের সভাপতি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারহিনা আহমেদ এবং মহাসচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সায়লা ফারজানা এক প্রতিবাদপত্রে এই দাবি করেন।
ভোলাহাট ইউএনওকে বিদায় করার হুমকি দিয়ে বক্তব্য দিয়েছিলেন সেখান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাব্বুল হোসেন। স্থানীয় যুবলীগ আয়োজিত ‘শান্তি সমাবেশে’দেওয়া বক্তব্যে তিনি আপত্তিকর শব্দে ইউএনওকে ঈদের পর বিদায় করে দেওয়ার কথা জানান। এ সময় ইউএনওর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেন তিনি। ইতিমধ্যে ওই বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্কের প্রতিবাদপত্রে বলা হয়, ১৯ জুন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উন্মুক্ত জনসভায় ভোলাহাট ইউএনওর উদ্দেশ্যে অপেশাদার ও অশোভন বক্তব্য দেন। তাঁর এই অশালীন বক্তব্যে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস উইমেন নেটওয়ার্কের সব সদস্য সংক্ষুব্ধ ও উদ্বিগ্ন। কারণ, জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মচারীদের সমন্বয়েই সরকারি সব কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন হয়।
প্রতিবাদপত্রে বলা হয়, সরকার নিযুক্ত জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ মাঠপর্যায়ের কর্মচারীরা জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, ভূমি ব্যবস্থাপনা, আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন, নির্বাচন ও পরীক্ষা পরিচালনা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাসহ উন্নয়নমূলক বহুবিধ কাজ করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে নারী কর্মচারীরা তাঁদের দক্ষতা, বিচক্ষণতা, দৃঢ়তা ও সাহসিকতার সঙ্গে অসংখ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তাঁদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখছেন। সরকারি দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় একজন ইউএনকে মানহানিকর অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি প্রদর্শন করায় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সরকারি কর্মচারীদের সমন্বয়ে বিঘ্ন সৃষ্টি হবে। তাতে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হবে।
বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্ক বলছে, রাব্বুল হোসেন একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হয়ে ইউএনওর বিরুদ্ধে যেসব উক্তি করেছেন, তা অশোভন ও অভদ্রজনোচিত। এ ছাড়া তিনি একজন নারীর প্রতি যে ধরনের অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করেছেন, তা বাঙালি সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের প্রতিও চরম অবমাননাকর। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপ্রাপ্ত নারী কর্মচারীর প্রতি এই জনপ্রতিনিধির এমন অসংবেদনশীল ও অশোভন আচরণ অগ্রহণযোগ্য ও নিন্দনীয়। এরূপ আচরণ ও উক্তি মাঠপর্যায়ে কর্মরত সরকারি কর্মচারীদের কর্মোদ্দীপনার প্রতিবন্ধকতার কারণ হতে পারে।
বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্ক মনে করে, এমন আচরণ একজন দায়িত্বরত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে উপজেলা পরিষদ আইন ১৯৯৮ অনুযায়ী অসদাচরণের শামিল। তাঁর অসদাচরণের বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষ আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে প্রত্যাশা করে বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্ক। সংগঠনটি বলছে, এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে একদিকে মাঠপর্যায়ের কর্মচারীরা তাঁদের সম্মান ও মনোবল সমুন্নত রেখে পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনে তৎপর থাকবেন। পাশাপাশি এ-জাতীয় নেতিবাচক মনোভাবসম্পন্ন যেকোনো ব্যক্তি নারীর প্রতি সংবেদনশীল ও দায়িত্বশীল আচরণ করতে সচেতন হবেন।