বইমেলায় আদর্শ প্রকাশনাকে স্টল না দেওয়ায় বিশিষ্টজনদের নিন্দা ও উদ্বেগ

একুশে বইমেলা
ফাইল ছবি

আসন্ন বইমেলায় প্রকাশনা সংস্থা ‘আদর্শ’কে স্টল বরাদ্দ না দেওয়ায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছেন দেশের ৩৮ বিশিষ্ট নাগরিক। তাঁরা বলছেন, বাংলা একাডেমির এ সিদ্ধান্ত বাক্‌স্বাধীনতা হরণের পাশাপাশি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী। তাঁরা বইমেলাকে কেন্দ্র করে লেখক, প্রকাশকের স্বাধীনতা নিশ্চিতের জোর দাবি জানান।

প্রসঙ্গত, আসন্ন বইমেলায় স্টলের বরাদ্দ তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে আদর্শ প্রকাশনাকে। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশনার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকাশক মাহাবুব রহমান ডিআরইউতে সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেন, তিনটি বইয়ের বিরুদ্ধে ‘ভিন্নমত’-এর অভিযোগ এনে তাঁদের স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। বই তিনটি হলো জিয়া হাসানের ‘উন্নয়ন বিভ্রম’, ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের ‘অপ্রতিরোধ্য উন্নয়নের অভাবনীয় কথামালা’ এবং ফাহাম আবদুস সালামের ‘বাঙালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে’।

এ প্রসঙ্গে আজ বিবৃতিতে বিশিষ্টজনেরা বলেছেন, গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করা যাচ্ছে, আদর্শ প্রকাশনাকে তিনটি বইয়ের জন্য বইমেলায় অংশগ্রহণের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা চলছে। এটা বাক্‌স্বাধীনতা হরণের পাশাপাশি আইনের শাসনের প্রতিও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো। কোনো রকম নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এভাবে আদর্শ প্রকাশনাকে বইমেলায় অংশগ্রহণে বাধা দেওয়া গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী।

বিশিষ্টজনেরা আরও বলেন, বাংলা একাডেমিকে বলা হয়—‘বাঙালির মেধা ও মননের প্রতীক’। সেই বাংলা একাডেমি কেন নিজেদের দলীয়করণের সুযোগ দেবে? বিবৃতিদাতাদের মতে, বাংলা একাডেমির এ সিদ্ধান্ত শুধু নিন্দনীয় নয়, লেখকের মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের শামিল। তাঁরা দ্রুত আদর্শকে বইমেলায় প্রাপ্য অনুযায়ী স্টল বরাদ্দের পাশাপাশি বইমেলাকে কেন্দ্র করে লেখক, প্রকাশকের স্বাধীনতা যাতে অক্ষুণ্ন থাকে, তা নিশ্চিতের জোর দাবি জানান।

বিবৃতিদাতা বিশিষ্টজনেরা হলেন লেখক ও রাজনীতিবিদ বদরুদ্দীন উমর, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক, কবি ফরহাদ মজহার, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, নিউ এইজ সম্পাদক নুরুল কবির, নারীনেত্রী ফরিদা আকতার, ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাঈদ ফেরদৌস, লেখক ও সংগঠক মুনির হাসান, সাংবাদিক গোলাম মোর্তজা, প্রকাশক মাহরুখ মহিউদ্দীন, লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারুফ মল্লিক, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, অধ্যাপক তানজীম উদ্দিন খান, লেখক ও প্রকৌশলী চমক হাসান, লেখক ও অধ্যাপক রাগিব হাসান, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক মাহবুব মোর্শেদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, রিভারাইন পিপলের মহাসচিব শেখ রোকন, প্রকাশক দীপঙ্কর দাশ, লেখক ও সংগঠক ফিরোজ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কামরুল হাসান, শিক্ষক খোরশেদ আলম, লেখক রাহাল রাহা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ আজম, প্রকাশক মেসবাহউদ্দিন, লেখক ও রাজনীতিবিদ জাহেদ উর রহমান, সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক সালাহ উদ্দিন, কথাসাহিত্যিক বাকি বিল্লাহ, লেখক ও প্রকাশক নাজিম উদ্দিন, সাংবাদিক তন্ময় ইমরান, সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক এহসান মাহমুদ, নির্মাতা তাসমিয়া আফরিন, লেখক ও গবেষক জাকারিয়া পলাশ, নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দীন ও গবেষক সাইমুম পারভেজ।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নিন্দা

এদিকে একই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, স্টল বরাদ্দ না দেওয়ার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাংলা একাডেমি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা টুঁটি চেপে ধরছে। আজ শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ ও সাধারণ সম্পাদক শোভন রহমানের যৌথ বিবৃতিতে এ অভিযোগ করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শুধু সরকারদলীয় মতের বাইরে ভিন্নমত প্রকাশিত হয়েছে, এমন তিনটি বই প্রকাশের জন্য আদর্শ প্রকাশনীর স্টল বাতিল করেছে বাংলা একাডেমি। এর আগেও বহুবার বাংলা একাডেমি ভিন্নমত প্রকাশের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার নানা অপচেষ্টা চালিয়েছে। ২০১৬ সালে বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, কথিত ‘উসকানিমূলক’ বই বইমেলায় বিক্রি হোক, এটা তাঁরা চান না। স্টল বাতিলের নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে আদর্শ প্রকাশনাকে স্টল করার অধিকার ফিরিয়ে দিতে বাংলা একাডেমির প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।