কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির
কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির

উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে আরও এক রোহিঙ্গা যুবককে গুলি করে হত্যা

কক্সবাজারের উখিয়ায় জামতলী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-১৫) আরও এক রোহিঙ্গা যুবককে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করেছে। নিহত রোহিঙ্গা যুবকের নাম ওমর মিয়া প্রকাশ মাস্টার আইয়ুব (৩৫)। তিনি ওই আশ্রয়শিবিরের আবু ছিদ্দিকের ছেলে। এর আগে গতকাল সকালে আরও দুই রোহিঙ্গা খুন হন সন্ত্রাসীদের হাতে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে জামতলী আশ্রয়শিবিরের ডি-৭ ব্লকে একটি দোকানের সামনে মাস্টার আইয়ুবকে গুলি করে হত্যা করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শী এক রোহিঙ্গা নেতা জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ঘরের পাশের দোকানে বসে কয়েকজন রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলছিলেন আইয়ুব। এ সময় ১০-১২ জনের একটি সন্ত্রাসী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে আইয়ুবকে লক্ষ্য করে কয়েকটি গুলি করে।

গুলিতে আইয়ুব মাটিতে লুটিয়ে পড়লে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। সন্ত্রাসীরা মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সদস্য বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

রোহিঙ্গা নেতা কামাল হোসেন বলেন, আইয়ুব কয়েক মাস আগে আরসা থেকে মিয়ানমারের আরেকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনে (আরএসও) যোগ দেন এবং আশ্রয়শিবিরে আরসাবিরোধী জনমত গঠনের কাজ চালান। এ কারণে তাঁকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে আরসা।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামীম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আশ্রয়শিবিরে ডি-৭ ব্লকে গুলি করে আইয়ুবকে হত্যা করা হয়। এ নিয়ে আশ্রয়শিবিরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এক দিনেই তিনজনকে গুলি করে হত্যা করা হলো।

পুলিশ জানায়, একাধিক গুলি খেয়ে মাস্টার আইয়ুব মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাঁকে উদ্ধার করে কুতুপালং আশ্রয়শিবিরের এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। গুলির ঘটনায় আরও দুজন রোহিঙ্গা আহত হয়েছেন।

ওসি মোহাম্মদ শামীম হোসেন বলেন, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। সন্ত্রাসীদের ধরতে আশ্রয়শিবিরে অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, গতকাল এক দিনে (ভোর ও সন্ধ্যায়) ঘর থেকে তুলে এনে একজন রোহিঙ্গা মাঝিসহ তিনজন রোহিঙ্গাকে গুলি করে হত্যা করে আরসার সন্ত্রাসীরা। এসব হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে আশ্রয়শিবিরে সাধারণ রোহিঙ্গাদের মনে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছে তারা। চলতি ডিসেম্বরে আরসা ও আরএসওর মধ্যে একাধিক গোলাগুলি, সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনায় ছয়জন রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে।

পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, গত ৯ মাসে আশ্রয়শিবিরে ৬৩টি সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ৭৭ জন রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১৯ জন রোহিঙ্গা মাঝি, ২২ জন আরসার সদস্য, ৬ জন আরএসওর সদস্য, ১ জন স্বেচ্ছাসেবক ও অন্যরা সাধারণ রোহিঙ্গা।

বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩ আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। গত ছয় বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।