দুবাইয়ে সোনার দোকান চালু করে সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান যে বাংলাদেশি, সেটা দুবাইসহ সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রায় সবাই জানতেন। এমনকি বিনোদন জগৎসহ সেখানকার বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের আয়োজিত অনুষ্ঠানে পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে ওই তরুণের সরব উপস্থিতি ছিল। ঢাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে ঢাকায় পুলিশ হত্যা মামলার আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থান করছিলেন।
এদিকে ঢাকায় পুলিশের একজন পরিদর্শক মামুন এমরান খান হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামী রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকার পরও গত বছরের মার্চ এবং সবশেষ গত ফেব্রুয়ারিতে তিনি বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। ফেসবুক লাইভে তিনি তাঁর উপস্থিতির জানান দিয়েছিলেন। গত এক বছরে বাংলাদেশ সফরের সময় তিনি দুবাইয়ের বাংলাদেশ কনস্যুলেট থেকে ভিসা নিয়েছিলেন বলে কূটনৈতিক সূত্রে আভাস মিলেছে।
তবে গতকাল শনিবার রাতে আরাভ খানের ভিসার বিষয়ে জানতে দুবাইয়ে বাংলাদেশ কনস্যুলেটে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তবে বাংলাদেশের ওই মিশনে কর্মরত কেউ উদ্ধৃত হয়ে কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে তাঁরা জানিয়েছেন, উল্লেখিত ব্যক্তি যদি ভারতীয় পাসপোর্টে বাংলাদেশ ভ্রমণ করেন, সে ক্ষেত্রে তাঁর ভিসা ছাড়া প্রবেশের সুযোগ নেই।
সাম্প্রতিক সময়ে আরাভ খান দুবাইয়ে বাংলাদেশ সম্প্রদায়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। ১২ মার্চ দুবাইয়ের বাংলাদেশ শিল্পী সমিতির বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন আরাভ খান। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুবাইয়ে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল বি এম জামাল হোসেন। তিনি ওই অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকের হাতে ক্রেস্ট তুলে দিয়েছিলেন।
বাংলাদেশে খুনের মামলার পলাতক আসামীর সঙ্গে একই মঞ্চে উপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে বি এম জামাল হোসেন খুদে বার্তায় প্রথম আলোকে জানান, বাংলাদেশ শিল্পী সমিতি একটি পরিচিত জনপ্রিয় সংগঠন। তাদের বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে তারা অনেককে সম্মাননা দিয়েছে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির হাত দিয়ে সম্মাননা দেওয়ার বিষয়টি আয়োজকদের সিদ্ধান্তে হয়েছে। বিতর্কিত ব্যক্তির পরিচয় তখন পর্যন্ত উদ্ঘাটিত হয়নি। আয়োজক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে ওই ব্যক্তি (আরাভ খান) তাদের অনুষ্ঠানে স্পনসর করেছে বলে তাঁকে সম্মাননা দিয়েছে।
গত মাসে প্রথম আলোর এক প্রতিবেদক দুবাইয়ে একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার ফাঁকে বাংলাদেশ কনস্যুলেটে গিয়েছিলেন। সে সময় দুবাই কনস্যুলেটে দেখা গিয়েছিল আরাভ খানকে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কনস্যুলেটের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, হয়তো কনস্যুলার–সংক্রান্ত কোনো কাজে তিনি (আরাভ খান) কনস্যুলেটে গিয়েছিলেন।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সূত্রে জানা গেছে, ‘আরাভ জুয়েলার্স’ নামের ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক আরাভ খানের আসল নাম রবিউল ইসলাম। বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় তাঁর বাড়ি। তিনি সোহাগ মোল্লা, হৃদয় শেখ, আপন—এ রকম কয়েকটি নামে পরিচিত। ২০১৮ সালে ৭ জুলাই ঢাকায় পুলিশের একজন পরিদর্শক মামুন এমরান খান খুন হন। সেই খুনের আসামি হয়ে দেশ ছেড়েছিলেন তিনি। ডিবি বলছে, দেশ থেকে পালিয়ে রবিউল ইসলাম প্রথমে ভারত যান। সেখানে আরাভ খান নামে পাসপোর্ট সংগ্রহ করে দুবাই চলে যান। এখন তিনি দুবাইয়ের বড় স্বর্ণ ব্যবসায়ী।
তবে আরাভ খান এক ফেসবুক লাইভে দাবি করেছেন, তাঁর বনানীর অফিসে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন এমরান খান খুন হলেও তিনি নিজে এই খুনে জড়িত নন।