জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে বুধবার ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক রেজল্যুশন সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে।
রেজল্যুশনটি যৌথভাবে উত্থাপন করে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এবারের রেজল্যুশনটিতে ১১৪টি দেশ সহপৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেছে, যা এযাবৎ সর্বোচ্চ।
বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় উঠে এসেছে এই রেজল্যুশনে। ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশ সরকারের উদারতা এবং মানবিক সহায়তার ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে। ভাসানচর প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা হয়েছে রেজল্যুশনে।
মিয়ানমারের অবনতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে রেজল্যুশনে রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণগুলো উদ্ঘাটন করতে এবং মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের স্বপ্রণোদিত, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য রাখাইনে অনুকূল পরিবেশ তৈরির জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
এতে নিরাপত্তা পরিষদে সম্প্রতি গৃহীত ২৬৬৯ রেজল্যুশনকে স্বাগত জানায়। ওই রেজল্যুশনে পরিষদের সদস্যরা মিয়ানমারে সব ধরনের সহিংসতা অবিলম্বে অবসানের দাবি জানান। এতে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করতে আসিয়ানের পাঁচ দফা ঐকমত্যের দ্রুত বাস্তবায়নেরও আহ্বান জানানো হয়েছে।
আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলার অগ্রগতি এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউশনের তদন্তকে স্বাগত জানানো হয়েছে রেজল্যুশনে।
সর্বোপরি ‘রেসপনসিবিলিটি অ্যান্ড বার্ডেন শেয়ারিং’ নীতির আওতায় যাতে জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলো বাংলাদেশে মানবিক আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখে, এবারের রেজল্যুশনে সে বিষয়ে জোরালো আহ্বান জানানো হয়েছে।
রেজল্যুশনটি গৃহীত হওয়ার পর জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ, যেখানে জনসংখ্যার উচ্চ ঘনত্ব এবং সম্পদ খুবই সীমিত। আমাদের ভূখণ্ডে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘস্থায়ী উপস্থিতির কোনো সুযোগ নেই। তাদের অবশ্যই তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফিরে যেতে হবে।’
মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের স্বপ্রণোদিত, নিরাপদ এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনেনের জন্য মিয়ানমার সরকারের রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতির উন্নতির প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে বাংলাদেশের প্রতিনিধি এ ব্যাপারে আসিয়ানসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি তাদের সমর্থন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের আগপর্যন্ত অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে বাংলাদেশে অস্থায়ী ক্যাম্পে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক অংশীদারদের কাছ থেকে পর্যাপ্ত অর্থায়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে বাংলাদেশ মিশন।