রাজনৈতিক বিবেচনায় অপর্ণা রাণী পাল ও মোবাশ্বিরা ফারজানা মিথিলা কানাডায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে কাউন্সেলর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। অন্তর্বর্তী সরকার তাঁদের দুজনের চুক্তি বাতিল করে ৩১ আগস্টের মধ্যে দেশে ফেরার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু ১৪ আগস্ট চুক্তি বাতিলের চিঠি পাওয়ার আগে থেকেই তাঁরা মিশনের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন। বিষয়টি কানাডায় বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, অপর্ণা রাণী পাল ও মোবাশ্বিরা ফারজানা মিথিলা চুক্তি বাতিলের আগেই তাঁদের অনুকূলে থাকা কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিলের আবেদন করেন। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার দিনে তাঁদের কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিলের চিঠি ইস্যু করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
জানতে চাইলে কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার নাহিদা সোবহান রোববার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, অপর্ণা রাণী পাল ও মোবাশ্বিরা ফারজানা মিথিলার চুক্তি বাতিল নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাওয়ার পর মিশনে তাঁদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চিঠি পাওয়ার আগে থেকেই তাঁরা হাইকমিশনে আসা বন্ধ করেছেন এবং মিশনের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখেননি।
ফলে তাঁদের বর্তমান অবস্থানের বিষয়ে হাইকমিশনের কাছে কোনো তথ্য নেই। বিষয়টি এরই মধ্যে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে।
চুক্তি বাতিলের চিঠি ওই দুই কর্মকর্তা কীভাবে পেয়েছেন, জানতে চাইলে নাহিদা সোবহান জানান, তাঁদের দুজনকে ই–মেইলে চিঠি পাঠানো হয়।
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। ওই রাতেই অপর্ণা রাণী পাল ও মোবাশ্বিরা ফারজানা মিথিলা কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিলের আবেদন করেন। অপর্ণা রাণী পাল নিজের এবং মোবাশ্বিরা ফারজানা মিথিলা নিজের পাশাপাশি স্বামী ও ছেলের কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিলের জন্য আবেদন করেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায়ের পর দ্রুততম সময়ে পাসপোর্ট বাতিলের জন্য তাঁরা দুজন তদবিরও করেন। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয় ৮ আগস্ট রাতে। এই সরকার দায়িত্ব নেওয়ার আগে ওই দিন অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে অপর্ণা রাণী পাল ও মোবাশ্বিরা ফারজানা মিথিলা ও তাঁর স্বামী এবং ছেলের কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিলের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ–সংক্রান্ত নথিতে দেখে গেছে, পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের অনুমোদনের জন্য অপর্ণা রাণী পালের এবং মোবাশ্বিরা ফারজানা মিথিলা, তাঁর স্বামী ও ছেলের অনুকূলে থাকা পাসপোর্ট বাতিলের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন অনুবিভাগ) ডি এম সালাউদ্দিন আহমেদ ফাইলটি উত্থাপন করেন। ফাইলে পররাষ্ট্রসচিবের অনুমোদন পাওয়ার পর কূটনৈতিক পাসপোর্ট চারটি বাতিলের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে তিনি কনস্যুলার অনুবিভাগকে পরামর্শ দেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে জানান, সাধারণত এ ধরনের ফাইল সহকারী সচিব কিংবা জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব উত্থাপন করে থাকেন। অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে বিষয়টি করার ক্ষেত্রে এখানে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটানো হয়েছে।
তবে ওই চারটি কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিলের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিলেও পাসপোর্ট অধিদপ্তর তা করেছে কি না, সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।