হাইকোর্ট
হাইকোর্ট

সামান্য অর্থের লোভে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় সাংবাদিক আফতাবকে

ডাকাতির সময় প্রবীণ সাংবাদিক আফতাব আহমেদকে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় পাঁচ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলায় লেখা ৫৫ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি আজ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম (বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতি) ও বিচারপতি মো. বশির উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০২২ সালের ১২ অক্টোবর ওই রায় দেন। বিচারিক আদালতের রায়ের পর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আসামিদের করা পৃথক আপিল ও জেল আপিলের ওপর শুনানি শেষে হাইকোর্ট ওই রায় দেন।

পূর্ণাঙ্গ রায়ে আদালত বলেছেন, জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার প্রবীণ ফটোসাংবাদিক যিনি মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন ও পরে অসংখ্য দুর্লভ ছবি ধারণ করে বিরল সম্মান ‘একুশে পদক’ প্রাপ্ত হয়ে বিরাট মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। সেই ৭৯ বছর বয়সী আফতাব উদ্দিন আহমেদকে সামান্য অর্থের লোভে নৃশংস ও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই অবৈধ হত্যাকাণ্ডটি হুমায়ুন কবির মোল্লা, রাজু মুন্সি, হাবিব হাওলাদার, বিল্লাল হোসেন কিসলু ও মো. রাসেল কর্তৃক সংঘটিত হয়েছে মর্মে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। ফলে এ অপরাধীরা কোনো ক্রমেই কোনো প্রকার অনুকম্পা, কৃপা পেতে পারেন না। এই অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হওয়া অত্যাবশ্যক।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, ২০১৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর রামপুরায় নিজ বাসা থেকে আফতাব আহমেদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত হুমায়ুন কবির ছিলেন আফতাব আহমেদের গাড়িচালক। হত্যার দায় স্বীকার করে হুমায়ুন কবির, হাবিব হাওলাদার ও বিল্লাল হোসেন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ওই জবানবন্দিতে তাঁরা স্বীকার করেন, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আফতাব আহমেদের বাসায় ডাকাতি করার সময় তাঁকে গামছা দিয়ে বেঁধে শ্বাসরোধে তাঁরা হত্যা করেন। আফতাব আহমেদের বাসার ড্রয়ার ভেঙে ৭২ হাজার টাকা লুট করেন আসামি বিল্লাল হোসেন।

পরে তাঁরা বউবাজার নামক একটি জায়গায় ওই টাকা ভাগাভাগি করে নেন। ওই ঘটনায় ২০১৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর রামপুরা থানায় মামলাটি করেন আফতাব আহমেদের ছেলে।

এই মামলায় ২০১৭ সালের ২৮ মার্চ বিচারিক আদালত (ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল–৪) রায় দেন। রায়ে ওই পাঁচ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং অপর এক আসামি মো. সবুজ খানকে সাত বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। রায়ের পর ওই বছরই আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে কারাগারে থাকা দণ্ডিত আসামিরা ২০১৭ সালে পৃথক আপিল ও জেল আপিল করেন। এসবের ওপর একসঙ্গে শুনানি শেষে হাইকোর্ট রায় দেন। হাইকোর্ট সবুজ খানকে বিচারিক আদালতের দেওয়া সাত বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড বহাল রাখেন।

আদালতে এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সামিরা তারান্নুম রাবেয়া শুনানিতে ছিলেন। আসামিপক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান, এ কে এম ফজলুল হক খান ফরিদ ও মো. হেলাল উদ্দিন মোল্লা। পলাতক দুই আসামি রাজু মুন্সী ও মো. রাসেলের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী এস এম শফিকুল ইসলাম শুনানিতে ছিলেন।